muktijoddhar kantho logo l o a d i n g

জাতীয়

রোহিঙ্গারা গৃহহারা হচ্ছে, স্বীকার করল মিয়ানমার

মুক্তিযোদ্ধার কণ্ঠ রিপোর্ট,

 

মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি) স্বীকার করেছে, দেশটির আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সীমান্ত অঞ্চলে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছে, এর ফলে সেখানকার নিরীহ মুসলিম রোহিঙ্গারা গৃহহারা হচ্ছে।

আজ বুধবার দুপুরে কক্সবাজারে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও বিজিপির আঞ্চলিক কমান্ডার পর্যায়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। কক্সবাজার সৈকতের লাবণী পয়েন্ট বিজিবি রেস্ট হাউজে এ বৈঠক হয়। সেখানেই বিজিবির কর্মকর্তাদের প্রশ্নের মুখে মিয়ানমানের বিজিপি স্থানচ্যুত রোহিঙ্গাদের বিষয়ে এই বক্তব্য উপস্থাপন করে।

মিয়ানমারের সীমান্ত অঞ্চলে মুসলিম রোহিঙ্গাদের ওপর সেই দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রতিনিয়ত হামলা চালাচ্ছে বলে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হচ্ছে। এতে বেশ কিছু প্রাণহানির ঘটনাও ঘটছে। সেখানকার সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের আবাসস্থল ধ্বংস করে দিচ্ছে, নারী-পুরুষকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে, এমনকি অবিবাহিত নারীদের ধর্ষণের অভিযোগ করা হয়েছে এসব প্রতিবেদনে। এ নিয়ে জাতিসংঘসহ সারা বিশ্বের মানবাধিকার সংস্থাগুলোর সোচ্চার ভূমিকার মধ্যেই আজ মিয়ানমারের বিজিবি রোহিঙ্গাদের বিষয়ে এ বক্তব্য দিল।

বৈঠক শেষে বিকেলে রেস্ট হাউজে এক সংবাদ সম্মেলনে বিজিবি দক্ষিণ পূর্ব অঞ্চলের (চট্টগ্রাম) কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল খন্দকার ফরিদ হাসান এসব কথা জানান। তিনি জানান, মিয়ানমারের বিজিপির আঞ্চলিক কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার সন লুইন গত মাসে মংডু অঞ্চলের দায়িত্ব নিয়েছেন। এরপর বিজিবির পক্ষ থেকে একটি পরিচিতিমূলক বৈঠকের জন্য বিজিপিকে চিঠি দেওয়া হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আজকের বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়।

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল খন্দকার ফরিদ হাসান বলেন, সৌজন্যমূলক বৈঠকে সাধারণত কোনো এজেন্ডা থাকে না। তারপরও তাদের সম্মতিক্রমে সীমান্ত এবং মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে মুসলমানদের হত্যার ব্যাপারে কথা হয়েছে।

‘আমরা বলেছি, আমরা বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় দেখছি, বিভিন্ন মাধ্যমে জানছি, আপনাদের (মিয়ানমারের) বিভিন্ন অ্যাকশনের কারণে লোকজন (রোহিঙ্গা) এপারে চলে আসতেছে। আপনারা এমন কিছু করেন, যাতে আমাদের এদিকে লোক না আসে।’

‘তখন সে (বিজিপির নেতৃত্ব দানকারী) কিন্তু স্বীকার করেছে, হ্যাঁ, ক্যাম্পগুলো অ্যাটাক হয়েছে, এ জন্য আমরা কিছু অ্যাকশন করছি, এই কারণে অনেক নিরীহ লোকজনও ভয় পাচ্ছে। তারা এ রকম ডিসপ্লেস হয়ে চলে আসছে। আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি যাতে না আসতে পারে’, যোগ করেন বিজিবি দক্ষিণ পূর্ব অঞ্চলের (চট্টগ্রাম) কমান্ডার। তিনি আরো বলেন, ‘আমরা কিন্তু তাদের আমাদের সব কনসার্নই জানিয়েছি। কোনোকিছু কিন্তু আমরা বাদ দেইনি।’

বিজিবি কমান্ডার বলেন, “আমরা ‘অ্যাক্রোসিটি’ শব্দটি ব্যবহার না করে আমরা বলেছি, অনেককিছু ধ্বংসাত্মক কাজ হচ্ছে। যারা কারণে ডিসপ্লেসড হয়ে যাচ্ছে। ডিসপ্লেসড মানেই কিন্তু আপনি তাঁকে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় স্থানান্তরিত হওয়ার জন্য বাধ্য করছেন।”

সীমান্তে একসঙ্গে সুন্দরভাবে কাজ করতে বিজিবি ও বিজিপি একমত পোষণ করেছে উল্লেখ করে বিজিবি দক্ষিণ পূর্ব অঞ্চলের (চট্টগ্রাম) কমান্ডার বলেন, ‘ইয়াবার বিষয়েও আমরা তাদের জানিয়েছি। তারা বলেছে, বিষয়টি নিয়ে তারাও চিন্তিত। আমরা বলেছি, তাদের সান প্রদেশ থেকে মংডু হয়ে যেসব ইয়াবা বাংলাদেশে ঢুকছে, তা আমাদের দেশে ভয়াবহ খারাপ পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে। আমরা অনুরোধ জানিয়েছি, তাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে তা যেন ঠেকায়।

মিয়ানমারের মংডুতে ইয়াবা তৈরির কয়েকটি কারখানা রয়েছে বলেও বৈঠকে বিজিপিকে জানিয়েছে বাংলাদেশ। তবে মিয়ানমার বলেছে, মংডুতে কোনো ইয়াবা কারখানা নেই। তবে মিয়ানমার থেকে যে ইয়াবা বাংলাদেশে ঢুকছে, তা প্রতিহত করার সব ধরনের চেষ্টা করবে বিজিপি।

সংবাদ সম্মেলনে জেনারেল খন্দকার ফরিদ হাসান আরো বলেন, আমরা বিজিপিকে বলেছি, সীমান্তে কোনো ঘটনা ঘটলে আমরা আপনাদের জানাই। অথচ আপনাদের কাছ থেকে রিপ্লাই পেতে দেরি হয়ে যায়। যার কারণে কোনো কাজ হয় না। এরপর তাঁরা একমত হয়েছেন, যেকোনো তথ্য তাড়াতাড়ি আদান-প্রদান করা হবে। সীমান্তে যৌথ টহল করার বিষয়েও কথা হয়েছে। এটি হলে সীমান্ত অপরাধ অনেকাংশে কমে যাবে।

বর্ডার লিয়াজো কার্যালয় স্থাপনের ব্যাপারেও কথা হয় বৈঠকে। এ ছাড়া সম্প্রীতি বাড়াতে বিজিবি-বিজিপির মাঝে খেলাধূলা, অনানুষ্ঠানিক মিটিং করার বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। বিজিবি বৈঠকে আরো জানিয়েছে, সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সরকার ও বিজিবির অবস্থান খুবই শক্ত।

এ ছাড়া নাফ নদে জেলেদের জিরোলাইন অতিক্রমের বিষয়েও বৈঠকে আলোচনা হয় বলে জানান বিজিবি কমান্ডার। তিনি বলেন, আমরা বলেছি, খারাপ আবহাওয়ার কারণে অনেক জেলে বুঝতে না পেরে জিরোলাইন অতিক্রম করে ফেলে। তারা যেন বিষয়টি সুনজরে দেখে। কিছুদিন আগে যে নয় জেলেকে তারা ধরে নিয়ে গেছে। তাদের ফেরত দেওয়ার জন্য বলেছি। বিজিপি জানিয়েছে, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ করে জেলেদের ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা করবে।

সংবাদ সম্মেলনে বিজিবি-৩৪ ব্যাটালিয়নের লেফটেন্যান্ট কর্নেল ইমরান উল্লাহ সরকারসহ বিজিবির পদস্থ কর্মকর্তা এবং জেলার প্রিন্ট ও ইলেক্টনিক মিডিয়ার সংবাদকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।সূত্র “: এনটিভি,

 

 

 মুক্তিযোদ্ধার কণ্ঠ ডটকম/  ২৩-১১-২০১৬ ইং / মো: হাছিব

Tags: