muktijoddhar kantho logo l o a d i n g

বিশেষ প্রতিবেদন

বনবিড়াল শিকারীদের কথা

ঘাড়ে তীর-ধনুক ও হাতে হাতে লাঠি-সোঁটা। বনবিড়াল (গাবড়া), বেজি ও শেরুল্যাসহ বিভিন্ন বন্যপ্রাণীসহ পাখি শিকার করা। শীত মৌসুম এলেই নওগাঁর রাণীনগরসহ বিভিন্ন উপজেলায় দেখা মেলে এসব আদিবাসী শিকারির দলকে। তাদের হাতে প্রতিনিয়ত নিধন হচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির বন্য প্রাণী ও পাখি।

গ্রামের লোকজনের কাছে গৃহপালিত হাঁস-মোরগ খেকো প্রাণী হিসেবে পরিচিত বনবিড়াল, বেজি ও শেরুল্যা। এসব প্রাণী ঝোঁপঝাড়ে বাসা বেধে থাকে। রাত হলেই কোনো না কোনো বাড়ির হাঁস-মুরগির ঘরে হানা দেয় তারা। আর তাই ওইসব প্রাণীদের ধরিয়ে দিতে এলাকাবাসীও শিকারিদের সহযোগিতা করে থাকে।

রাণীনগর উপজেলার কালীগ্রামে শীতের শুরু থেকে দেখা মিলছে আদিবাসী শিকারিদের হাতে তীর-ধনুক, লাঠি-সোঁটা। শিকারে ছুটছে তারা। যেমন শনিবার হঠাৎ দেখা গেল একটি বাড়ি ঘিরে রেখেছে শিকারির দল। একটু পর শিকারির তীরে ধরা পড়ল বনবিড়াল।

এছাড়া বদলগাছী উপজেলার গোপালপুর গ্রামে শুক্রবার বিকালে হলুদ ক্ষেতে দেখা গেল ১০/১৫ জনের আদিবাসী একটি শিকারি দলকে। তারা ওঁত পেতে আছে বনবিড়াল, বেজি ও শেরুল্যাসহ বিভিন্ন পাখি শিকারে।

শিকারিদের দলনেতা রাবন মরমু বলেন, তার দলে দিলিপ মরমু (২৫), রাইসেন সরেণ (৪২) ও সুমন বাস্কেসহ (২৬) ১৭ জন আছে। সপ্তাহ খানেক আগে রংপুর জেলার বদরগঞ্জ উপজেলার নহানি গ্রাম থেকে এসেছেন। শীত মওসুমে প্রতিবছর বিভিন্ন জেলায় শিকারে যান। বলেন, অনেক সময় স্থানীয়রা তাদের সহযোগিতা করে থাকে।

শিকারী দিলিপ মরমু ও রাবন মরমু জানান, প্রায় ১০ বছর ধরে শিকার করছেন। তাদের এলাকার ধান-পানের কাজ শেষ করেই বিভিন্ন স্থানে শিকারে করতে বেরিয়ে পরেন। কয়েকদিন শিকার করে যা সংগ্রহ হয় তা নিয়ে বাড়ি ফেরেন। প্রধান শিকার হলো-বনবিড়াল, বেজি, শেরুল্যা, বাদুরসহ বিভিন্ন বন্যপ্রাণী। এছাড়া বকসহ নানা ধরনের পাখিও তাদের শিকারে ধরা পড়ে।

তিনি জানান, প্রতিটি বনবিড়ালের প্রায় ৫-৭ কেজি করে মাংস হয়। কয়েক দিন থাকার পর খেয়ে পরে যা বাঁচে সেগুলো গরম করে পাতিলের মুখ শক্ত করে বেঁধে রেখে বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়।

পারিবারের খাবার চাহিদা মেটার পর প্রতি কেজি মাংস ৩৫০ টাকা থেকে ৪শ’ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হয়। পেশা হিসেবে নয়। বরং সখের বসে শিকার করা হয়। স্থানীয়দের সহযোগিতা এবং উৎসাহের কারণেই প্রতিবছর আসেন এই এলাকায়।

রাণীনগর উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা আবু তালেব জানান, এসব প্রাণী নিধন করা বা শিকার করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ।

কিন্তু এসব প্রাণীর কোনো আবাসস্থল না থাকায় গ্রামের লোকজনের হাঁস-মুরগিসহ বিভিন্ন ক্ষতি করে থাকে। তাই স্থানীয়রা শিকারিদের শিকার করতে সহযোগিতা করে থাকে।

 

 

মুক্তিযোদ্ধার কণ্ঠ ডটকম/ ১১ – ১২-২০১৬ ইং / মো: হাছিব

Tags: