muktijoddhar kantho logo l o a d i n g

জাতীয়

সৈয়দ আশরাফের সামনে চ্যালেঞ্জে পরিপূর্ণ

ashraf
মানুষের জীবনটাই চ্যালেঞ্জে পরিপূর্ণ। আর রাজনীতির সঙ্গে যাঁরা আছেন, তাঁদের সামনে চ্যালেঞ্জ তুলনামূলকভাবে বেশি। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সম্প্রতি দায়িত্ব পাওয়া মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের ক্ষেত্রেও এটা প্রযোজ্য। তাঁকে এ দেশের মানুষের মাঝে নতুনভাবে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার আবশ্যকতা নেই। তিনি জাতির জনকের ঘনিষ্ঠ সহচর বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামের সন্তান। বঙ্গবন্ধুর প্রতি অবিচল আনুগত্যের জন্যই তাঁকেও প্রাণ হারাতে হয় ঘাতকের বুলেটে, কারাগারের অন্তরালে। সৈয়দ আশরাফ ক্ষমতাসীন দলটির মহাসচিবও। এক-এগারোর পর দলের মুখপাত্র হিসেবে তিনি সাফল্যের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন। নেতা-কর্মী আর নাগরিক সমাজের মধ্যে তাঁর একটি স্বচ্ছ ভাবমূর্তিও গড়ে উঠেছে গত কয়েক বছরে। তিনি অনেকের নজর কেড়েছেন অবিচল নিষ্ঠা ও সততার জন্য।

পাশাপাশি সরকার ও দলের কাজকর্মে কিছু শৈথিল্য সম্পর্কেও তাঁর সমালোচনা আছে। তবে ইতিবাচক দিকটির পাল্লাই যে যথেষ্ট ভারী, তা অনুভূত হলো আগে তাঁর দায়িত্বে থাকা স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় থেকে দপ্তরবিহীন মন্ত্রী করার পর। তবে অল্প সময়ের মধ্যেই পেয়েছেন নতুন দায়িত্ব। এটার কাজের কলেবর আগেরটির মতো না হলেও গুরুত্ব অনেক বেশি। এ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিয়েই তিনি গণমাধ্যমকে জানান, উপযুক্ত কর্মকর্তাকে যথাযথ পদে পদায়ন নিশ্চিত করবেন তিনি। এ–ও বললেন, তাঁদের সরকার প্রশাসনকে দলীয়করণে বিশ্বাস করে না। এ বক্তব্যের জন্য তাঁকে সাধুবাদ জানিয়েছেন অনেকেই। তবে এভাবে কাজ করতে তিনি কতটা সফল হবেন, তা নিয়ে সংশয়বাদীর সংখ্যাও নেহাত কম নয়।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় আমাদের দেশে অনেক ক্ষেত্রে সরকারপ্রধানের নিজ নিয়ন্ত্রণে থাকে। তা-ই ছিল বঙ্গবন্ধুর সময়ে। তবে ব্যতিক্রম ছিল জিয়াউর রহমান ও এরশাদের শাসনামলে। প্রতিমন্ত্রী ছিলেন ১৯৯১ সালে গঠিত বিএনপি সরকারের সময়কালে। ২০১৪ সালের নির্বাচনের পরও একজন প্রতিমন্ত্রী নিয়োগ দেয় বর্তমান সরকার। তবে মন্ত্রীর দায়িত্ব ছিল প্রধানমন্ত্রীর কাছেই। এ মন্ত্রণালয় বিসিএস প্রশাসন ক্যাডার নিয়ন্ত্রণ ছাড়া সব মন্ত্রণালয়, বিভাগ, অধিদপ্তর, পরিদপ্তর, সংস্থার সাংগঠনিক কাঠামো নির্ধারণের দায়িত্বে রয়েছে। তাদের আওতায় আছে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের নিয়োগ, পদোন্নতি, শাস্তি, অবসরসহ প্রাসঙ্গিক বিধিবিধান তৈরি ও ক্ষেত্রবিশেষে সম্মতি দেওয়ার। সচিবালয় প্রশাসন পরিচালনার দায়িত্বও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের। বিভিন্ন সংস্থা ও অধিদপ্তর, পরিদপ্তরে গুরুত্বপূর্ণ পদে পদোন্নতি ও কিছু প্রেষণে পদায়ন তাদের দায়িত্ব। প্রশাসন কর্মকর্তাদের কর্মজীবন পরিকল্পনা ও জাতীয় প্রশিক্ষণ নীতিমালার দায়িত্ব রয়েছে তাদের কাছে। বিভিন্ন ক্যাডার সার্ভিসে নিয়োগের জন্য পাবলিক সার্ভিস কমিশনের সঙ্গে সব ধরনের যোগাযোগ শেষে ক্যাডার নিয়ন্ত্রণকারী মন্ত্রণালয়ের কাছে তালিকা পাঠানোর কাজটিও তাদের। জেলা প্রশাসন তদারকির দায়িত্ব মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের হলেও লোকবল ও বাজেট দেয় এ মন্ত্রণালয়। এ ধরনের বহুবিধ গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব এ মন্ত্রণালয়কে দিয়েছে ব্যাপক ক্ষমতা ও বিশেষ মর্যাদা।
সৈয়দ আশরাফ এ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিলেন। তিনি আগে এতটা না জানলেও এখন দ্রুত জানবেন জনপ্রশাসনের সমস্যা কত ব্যাপক ও গভীরে। এ সমস্যা দূরীকরণে তাঁর একক ভূমিকাই যথেষ্ট নয়; এখানে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সহযোগিতা এবং সরকারের নীতিনির্ধারণী মহলের সমর্থন অত্যন্ত প্রয়োজন। এখানকার সমস্যাগুলোর মধ্যে রয়েছে দলীয় আনুগত্য বিবেচনায় পদায়ন ও পদোন্নতি। তদুপরি নির্ধারিত সংখ্যার মাত্রাতিরিক্ত উচ্চতর পদে পদোন্নতি এবং বেশ কিছুসংখ্যক কর্মকর্তাকে যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও বঞ্চনা। মাত্রাতিরিক্ত পদোন্নতির কারণে পদায়নও একটি বড় সমস্যা হিসেবে সামনে এসেছে।

Tags: