আশরাফ আলী, স্টাফ রিপোর্টারঃ
কিশোরগঞ্জের প্রাণ ভোমরা নরসুন্দা নদীতে অভিযান চালিয়েছে জেলা প্রশাসন। আজ ১৩ ডিসেম্বর ২০১৬ মঙ্গলবার নরসুন্দা নদীর বিভিন্ন স্থানে অবৈধভাবে বাধ দিয়ে মাছ চাষ করা নদীখেকো ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অভিযান চালায় কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসন। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তরফদার মোঃ আক্তার জামীল এ অভিযানের নেতৃত্ব দেন। এ সময় তার সাথে হোসেনপুর উপজেলার উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: আবদুল্লাহ আল মামুন এবং সদর উপজেলার উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো.আবদুল্লাহ আল মাসউদ উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া র্যাব-১৪, জেলা পুলিশ, আনসার ব্যাটালিয়ান এর সদস্যরা এ অভিযানে তাকে সহায়তা প্রদান করেন।
উল্লেখ্য, এক সময়ের খরস্রোতা নদী নরসুন্দা একটি খালে পরিণত হয়ে গিয়েছিলো। অবৈধ দখলদাররা নদীর বিভিন্ন স্থান দখলে নিয়ে এটিকে একটা মরা খালে পরিণত করেছিলো। কিশোরগঞ্জবাসীর প্রাণের দাবী ছিল নরসুন্দা নদীর হারানো নাব্যতা ফিরিয়ে আনার। নরসুন্দা নদীর তীরের স্বচ্ছ ও নির্মল হাওয়ায় শহরবাসীর মনকে রাঙিয়ে রাখার দাবী ছিল জনতার । শ্লোগান ছিলো-নরসুন্দা জাগবে, নৌকা চলবে। এ লক্ষে জেলাবাসী নরসুন্দা নদী বাাঁচাও স্লোগানে মুখরিত করে তোলে। মানববন্ধন থেকে শুরু করে অনশন কর্মসূচিও পালন করে জেলাবাসী। পরবর্তীতে তৎকালীন এলজিআরডি মন্ত্রী বর্তমানে মাননীয় জনপ্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের দৃষ্টি আকর্ষণ হলে তিনি সেই ছেলেবেলার হারানো নরসুন্দা নদীকে জাগিয়ে তুলতে একটি প্রকল্প গ্রহণ করেন।
সরকারি গুরুদয়াল কলেজ মাঠের উন্মুক্ত মাঠে ২০১২ সালের এক বিশাল জনসভায় নরসুন্দা নদীর সেই হারানো নাব্যতা ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে কিশোরগঞ্জবাসীর স্বপ্নের লেকসিটি গড়ার উদ্যোগ নেন তিনি। পরবর্তীতে তিন বছর মেয়াদী একটি প্রকল্প নেওয়া হয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে এক পর্যায়ে দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন সংশ্লিষ্টরা। বিষয়টি আবারও মন্ত্রী মহোদয়ের দৃষ্টি গোচর হলে এলজিআরডি মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব রইছ উদ্দিনকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এছাড়া, স্থানীয় সরকার সচিব সরেজমিনে কাজের অগ্রগতি দেখতে এসে প্রকল্প পরিচালককে প্রতি সপ্তাহে নদীর কাজের অগ্রগতি নিয়ে একটি প্রতিবেদন জেলা প্রশাসকের নিকট দাখিলের নির্দেশনা দেন। সে প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসন আন্তরিকভাবে কাজ শুরু করে।
কিন্তু একদিকে কিশোরগঞ্জ লেকসিটি নির্মাণ কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে নেয়ার কাজ শুরু হলেও অবৈধ দখলদারদের কেউ কেউ নতুন করে আবার নদীর বিভিন্ন জায়গা দখল করে বাধ দিয়ে মাছ চাষ শুরু করে। ফলে জেলাবাসীর মধ্যে আবারও দেখা দেয় শংকা। অবৈধভাবে নদী দখল করে বাধ দিয়ে মাছ চাষের বিষয়টি জেলাবাসীর অনেকেই জেলা প্রশাসনের নজরে আনেন। জেলা প্রশাসনের পক্ষ হতে কি পদক্ষেপ নেয়া হয় তা দেখার আশায় ছিলো জেলাবাসী। কিন্তু দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় আবারও ক্ষোভের আগুনে ফুসতে থাকে তারা।
এরই মাঝে ১৩ ডিসেম্বর ২০১৬ মঙ্গলবার নরসুন্দাতে নদীতে অভিযান চালালেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তরফদার মোঃ আক্তার জামীল। সকাল ৯টা হতে রাত ৮টা পর্যন্ত তিনি সদর উপজেলার লতিবপুর এবং হোসেনপুর উপজেলার চর পুমদি ও রামপুর এর ৬ কিলোমিটার এলাকায় অভিযান পরিচালনা করেন। এ সময় তিনি নয়টি অবৈধ বাধ গুড়িয়ে দেন। স্থানীয় জনগণ এ সময় উল্লাসে ফেটে পড়েন।
তারা সাংবাদিকদের জানান, প্রভাবশালী রাজনীতিবিদদের ছত্রছায়ায় দীর্ঘ দিন যাবত একাধিক মামলার আসামী, ভূমি দস্যু জনৈক হাছু ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা নদীতে বাঁশ দিয়ে ঘের বানিয়ে ও কারেন্ট জাল দিয়ে পানি আটকিয়ে মাছ চাষ করে আসছিল। এই নদীখেকোদের জন্য ছয় কিলোমিটার এলাকায় থাকা জমিতে তারা চাষের জন্য পানি দিতে পারছিলেন না। এমনকি গোসলের জন্য কিংবা গবাদিপশুর জন্যও তারা এ পানি ব্যবহার করতে পারতেন না। আগে তারা নদীতে মাছ ধরতে পারতেন। কিন্তু অবৈধ বাধ দেয়ার কারণে তারা আর মাছ ধরতে পারতেন না।
স্থানীয় বাসিন্দা জামাল উদ্দিন বলেন, আজ এ ছয় কিলোমিটার এলাকা দখলমুক্ত হওয়ায় এখন থেকে আবার আমরা চাষের পানি পাব। ইচ্ছামতো নদীতে আগের মতো ঘুরতে পারবো। ষাটোর্ধ্ব আলহাজ্ব ড: শাহজাহান সিরাজী জানান, এ কয়দিনে মনে যে ক্ষোভের আগুন জলছিলো নদীতে পানি চলাচল শুরু হওয়ায় তা নিভতে শুরু করেছে। এসময় তিনি এডিসি জেনারেলকে তার পক্ষ থেকে ধন্যবাদ পৌঁছে দেয়ার জন্য উপস্থিত সাংবাদিকদের অনুরোধ জানান।
মুক্তিযোদ্ধার কন্ঠ ডটকম/১৩-১২-২০১৬ইং/ অর্থ