বিনোদন,
সদ্য স্বাধীন দেশে অনেক সম্ভাবনার পাশাপাশি কিছু কিছু বিষয় দুর্ভাবনাও তৈরি করছিলো। আনন্দ আখ্যানের পাশাপাশি বেদনাহতের কথাও শোনা যায় সেই সময়ে চোখ রাখলে। এমন এক সময়েই চাষী নজরুল ইসলাম এর পরিচালনায় ১১ জন মুক্তিযোদ্ধাকে নিয়ে তৈরি হয় চলচ্চিত্র “ওরা ১১ জন”।
এ ছবিটিতে দেশপ্রেমের সঙ্গে সেই সময়ের কিছু সংখ্যক মুক্তিযোদ্ধার জীবন-যুদ্ধের গল্পও উঠে আসে। দর্শকের মনের আয়নায় আজও গেঁথে আছে সেই ছবিটি। এ ছবিটি নিয়ে বর্তমান সময়ে বিভিন্ন বয়সের ও পেশার দর্শক তাদের ভাবনা জানিয়েছেন গ্লিটজকে। তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন সোহেল আহসান
একদল সত্যিকারের মুক্তিযোদ্ধা ওই ছবিতে অভিনয় করেন: শহীদুজ্জামান সেলিম
অভিনেতা ও নির্মাতা
ওরা ১১ জন স্বাধীনতার পরপরই বানানো একটি ছবি। তখন তো সদ্য দেশ স্বাধীন হয়েছে। মানুষের আবেগ ছিলো চুড়ান্ত এবং একদল সত্যিকারেরমুক্তিযোদ্ধা ওই ছবিতে অভিনয় করেন। মানুষের আবেগের কথা বলছি। মানুষ যুদ্ধটা দেখেছিলো, সেটারই প্রতিচ্ছবি ওখানে ফুটে উঠেছে। একটা কিছু বানানো। একটা কিছু তৈরি করা। যে আবেগটা মানুষের ছিলো, সেই আবেগটাকে ধরতে পেরেছিলো। এটিই হলো এ ছবিটার বড় সফলতা। প্রথম এবংদ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে মুক্তিযুদ্ধের ওপর অনেক ছবি হয়েছে। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে যুদ্ধবিষয়ক ছবি ওটিই প্রথম মুক্তি পেয়েছিলো এবং ভালো সাড়া জাগিয়েছিলো। সেই সময় ওই ছবি দেখলে আমাদেরও ভালো লাগত। যদিও গোলাগুলির ছবি এটি , তবুও যে আবেগটাকে এতে কাজে লাগাতে চেয়েছে, সেটাসফল বলে মনে হয়েছে আমার কাছে।
ওরা ১১জন খুব সময় উপযোগী একটি ছবি : তৌকীর আহমেদ
নির্মাতা, অভিনেতা ও লেখক
‘ওরা ১১ জন’ খুব সময় উপযোগী একটি ছবি । সেই সময়টা ধরা পড়ে এই ছবির মধ্যে। মুক্তিযুদ্ধের ছবি আসলে বিভিন্ন দৃষ্টিকোন থেকে হতে পারে, এটাতার একটা উদাহরণ। যুদ্ধ পরবর্তী , যুদ্ধ বিধ্বস্ত একটি দেশের উদভ্রান্ত তারুণ্য। সেটাই আসলে আমার কাছে মনে হয়েছে যে, বিভিন্ন দৃষ্টিকোন থেকেমুক্তিযুদ্ধকে দেখা এবং সেই সময়টাকে খুব সুন্দরভাবে তুলে ধরা হয়েছে এ ছবির মাধ্যমে।
এটা দেখায় মধ্যবিত্তের মুক্তিযুদ্ধ : আফসান চৌধুরী
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গবেষক
যে সময় ওরা ১১ জন ছবিটি বানিয়েছে , সেই সময় একটা বড় সংকট ছিলো। সংকট হচ্ছে, মুক্তিযোদ্ধারা দেশে ফিরে ঢাকা শহরের মধ্যবিত্ত মুক্তিযোদ্ধারাখুব হতাশ হয়ে গিয়েছিলো। হতাশাগ্রস্ত হয়েছিলো। অনেকে লুটতরাজ এবং অপরাধের সঙ্গে জড়িত হয়ে গিয়েছিলো। এ ছবিটি দিয়ে পরিচালক চেষ্টাকরেছিলেন যে, আবার তোরা মানুষ হ। আবার তোরা মানুষ হ মানে তারা একটু কম মানুষ হয়ে গিয়েছিলো। যুদ্ধ পরবর্তী মধ্যবিত্ত শ্রেণির সংকটটা এখানে চলে এসেছে। এটা দেখায় মধ্যবিত্তের মুক্তিযুদ্ধ।
ওরা ১১ জন মুক্তিযুদ্ধের প্রতিচ্ছবি : মোহাম্মদ গোলাম রব্বানী,
সহযোগী আধ্যাপক, ইতিহাস বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
ওরা ১১ জন চলচ্চিত্রটি আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের একটি প্রতিচ্ছবি। মুক্তিযুদ্ধচলাকালীন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বর্বরোচিত গণহত্যা এবং বাংলারমুক্তিসেনাদের অকুতোভয় গেরিলা যুদ্ধের এক প্রকার প্রামাণ্যচিত্র। এই চলচ্চিত্রটি দেখবার মধ্য দিয়ে নতুন প্রজন্ম আমাদের রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতা যুদ্ধসম্পর্কে একটি ধারণা পেতে পারে।
এটা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের প্রামাণ্য দলিলের অংশ : রিপন চৌধুরী
সাংস্কৃতিক কর্মী, পিকে বিশ্বাস রোড, গাইবান্ধা
আমাদের মুক্তিযুদ্ধের পর যে কয়েকটি মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র তৈরি হয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম আলোচিত হৃদয়গ্রাহী ছবি হিসেবে ‘ওরা ১১ জন’ চলচ্চিত্র বেঁচে আছে। মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্রের কথা ভাবতে গেলেই এই ছবিটির ভাবনা মানুষের ভাবনায় আসে। এটা শুধু একটি চলচ্চিত্রই নয়, এটাআমাদের মুক্তিযুদ্ধের প্রামাণ্য দলিলের অংশ।
মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে এর অবদান অনেক গভীরে প্রোথিত: এ এস এম মহসীন
প্রাক্তন শিক্ষার্থী , ইতিহাস বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
স্বাধীন বাংলাদশেরে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রথম চলচ্চিত্র ওরা ১১ জন বাংলা ছায়াছবির ইতিহাসে এক অনন্য সংযোজন। এই ছবিতে যারা অভিনয় করেছেন তারা প্রায় সবাই প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে মুক্তযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের পরপরই নিমিত হওয়ায় পাকস্তানি বাহিনীর ধ্বংসযজ্ঞের একটিপরিস্কার চিত্র আমরা পাই। শিল্পমানের দিক থেকে হয়তো ওরা ১১ অনেক উচু মানের নয় । কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে এর অবদান অনেক গভীরে প্রোথিত। আমাদের গেরিলা বাহিনীর বিভিন্ন অপারেশন যেভাবে ছবিটিতে দেখানো হয়েছে, তাতে সদ্য স্বাধীন একটি দেশের যে আবেগ নিয়ে ছবিটি নির্মিত হয়েছিলো, তা স্পষ্টভাবেই অনুভব করা যায়।
এ ছবিতে শাবানার মুক্তিযোদ্ধাদের সেবা করার বিষয়টা গুরুত্বপুর্ন: মোঃ শফিকুল ইসলাম লিটন
ট্যাক্সি চালক, গ্রাম: ডাঙ্গরি, উপজেলা: টঙ্গিবাড়ী জেলা মুন্সীগঞ্জ
ওরা ১১ জন ছবিটির মধ্যে তিনটি অপশন দেয়া আছে। একটা হলো বিনোদন, একটা হলো আবেগ,আরেকটা হলো দেশপ্রেম। দেশপ্রেম বলতে বলি আমরাযেটা, সেটা কর্মের মাধ্যমেই এ ছবিতে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। এ ছবিতে ডাক্তার হয়ে শাবানার মুক্তিযোদ্ধাদের সেবা করার বিষয়টা, এটাই হলো ছবিটিরগুরুত্বপূর্ণ একটি দিক।
এই ছবি আমি আরও আগে দেখলাম না কেনো : সেগুফা বারী প্রমি
শিক্ষার্থী, নবম শ্রেনী, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট গার্লস পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ
ওরা ১১ জন ছবিটি আমি দেখেছি। তবে মুক্তিযুদ্ধ দেখি নাই। ছবিটি দেখার পরে আমার কাছে মনে হয়েছে যে, এই ছবি আমি আরও আগে দেখলাম নাকেনো। দেশের জন্য কাজ করতে চাই। মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান জানাতে চাই । ছবিটি আমাকে উদ্বুদ্ধ করে।