আমিনুল হক সাদী, নিজস্ব প্রদিবেদকঃ
প্রাইভেট পড়লে মেলা টেহার দরহার। গরীব দরীব মানুষ এত টেহা কইত্তে আনুম। দুই আপা হুনলাম পোলাপানরেও বিণামুল্যে পড়ায় তাই আমিও পড়তে আসি। এভাবেই বলছিলেন শিক্ষার্থী আরমান। শুধু আরমানই না ঝড়েপড়া শিক্ষার্থী শামীম হাদিল ফাহিমের মত আরও অনেকেই পড়তে আসেন এই আপুদের কাছে।
জানা গেছে গুরুদয়াল সরকারী কলেজের বাংলা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মৌসুমী ও শাকিলা পড়ালেখা করে আসছেন হারুয়ায় অবস্থান করে। নিজেরা পড়ার পাশাপাশি চিন্তা করেন যারা অর্থাভাবে পড়তে পাড়েন না তাদের নিয়ে কিছু করা যায় কিনা। যেই ভাবা সেই কাজ শুরু করে দিয়েছিলেণ মাত্র একজন ছাত্র নিয়ে।
তাঁদের নিজস্ব প্রচেষ্টায় কিশোরগঞ্জের অসয়ায় সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নিয়ে জেলা শহরের হারুয়ায় একটি বাড়িতে বিনামূল্য পাঠদান কার্যক্রমও শুরু করে দেন। গেল ইংরেজী নববর্ষের দিনে সবাই যখন আনন্দে আত্নহারা আর সেদিনটিকে তাঁরা পালন করলেন ব্যতিক্রম হিসেবে। আনন্দের এ দিনে নিজেদের উদ্যেগে গঠন করেন ” সমাজসেবা ফাউন্ডেশন” নামে একটি সংগঠনেরও। এ সংগঠনের মাধ্যমে ‘বিনামূল্য শিক্ষাদান কর্মসূচী’ সেবাও চালু করেন। একজন ঝড়েপড়া শিশুকে দিয়ে কেক কেটে আনুষ্ঠানিকভাবে পাঠদানের মাধ্যম শুভ উদ্ভোধন করা হয়। ঘরোয়া পরিবেশে আবৃত্তি, গান, সূরা ও গজল প্রতিযোগিতারও আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠান শেষে বিজয়ীদের মাঝে পুরষ্কার বিতরণ করে সুবিধাবি ত শিশুদের শিক্ষা গ্রহণের প্রতি আরও বেশি আগ্রহী করে তোলা হয়।
গুরুদয়াল সরকারী কলেজের বাংলা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী শিক্ষক শাকিলা জানান, প্রতিদিন সাড়ে তিনটা থেকে সাড়ে চারটা পর্যন্ত শিশুদেরকে কিছু শিখাতে পেড়ে নিজেদের কাছে আনন্দ লাগে। অসহায় ও গরীব শিক্ষার্থীদেরকে পড়াতে পাড়ার আনন্দই আলাদা।
গুরুদয়াল সরকারী কলেজের বাংলা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ঝড়ে পড়াদের শিক্ষা দানের মূল উদ্যেক্তা মৌসুমী জানান, সেদিনটি ছিল ১ নভেম্বর, বাসা থেকে বের হয়ে ভাবছিলাম আজ যেখানেই একটি পথ শিশু পাব সেখানেই শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেব। কলেজের মাঠে পা দিতেই আমার দিকে আসা একটি মেয়ে বলতে লাগল “আপু পেটে খুব ক্ষুদা। কয়েকটা টেহা দিবেন কিছু খাইতাম” আমি সেই পথ শিশুকে টাকা দিলাম আর জানতে চাইলাম পরিবারে কে আছে। প্রতি উত্তরে বলল কেউ নাই পথই আমার বাড়ি পথই আমার ঘড়। তাই ভিক্ষা করি আর খাই। যেখানেই রাত সেখানেই ঘুম। সেদিন থেকেই শুরু বিণামুল্যে শিশুদের মধ্যে পাঠদান। বর্তমানে আমাদের কাছে ৩৪ জন শিক্ষার্থী পড়ছেন।
স্থানীয় এলাকাবাসী ও সুধী মহল দুই শিক্ষার্থীর এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে। সচেতন মহলের প্রত্যাশা সরকারী ও সচ্ছল ব্যক্তিদের সহযোগিতা পেলে তাদের পাঠদানস্থলটি একটি বিদ্যালয়ে পরিণত হবে। পথশিশুরা ফিরে পাবে তাঁদের ঠিকানা, সবার এটাই ভাবনা।
মুক্তিযোদ্ধার কন্ঠ ডটকম/০৩-০১-২০১৭ইং/ অর্থ