মুক্তিযোদ্ধার কন্ঠ রিপোর্টঃ
মানুষ কতটা সহনশীল আর ভালো হতে পারে তার অনন্য উদাহরণ আমাদের এডিসি জেনারেল তরফদার মো: আক্তার জামীল স্যার। একজন নিরহংকার, সদালাপী, নির্মোহ, নির্লোভ ও নিরেট সৎ মানুষটি আজ একজন সাইকেল আরোহীকে প্রায় নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাঁচালেন।
রাত প্রায় তখন ৯:০০ টা ছুঁই ছুঁই। অফিসে বসে তিনি কাজ করছিলেন। সামনে তিনদিনব্যাপী উন্নয়ন মেলা। ১৩ উপজেলার এত একটি বড় জেলা কিশোরগঞ্জ। স্বাভাবিকভাবে কাজ একটু বেশী এখানে। তারপরেও সমস্যা হচ্ছে ডিসি অফিসে স্মরণকালের যে কোন সময়ের চেয়ে লোকবল কম। একমাত্র পুরুষ সহকারি কমিশনার এনডিসি (যিনি আবার এসি ল্যান্ড হিসেবে পদায়িত হয়েছেন) পরীক্ষার প্রশ্ন আনতে ঢাকা আছেন। লেডি অফিসার ২ জন। তাও তাদের একজন কেবলমাত্র মাতৃত্বকালিন ছুটি কাটিয়ে এসেছেন। তার বাচ্চাটি একবোরেই ছোট। অন্যজন সম্প্রতি বদলী হয়ে এসেছেন। এডিসি বাদে আর কোন অফিসার কালেক্টরেটে নেই। অন্যরা ২/১ যারা আছেন তার দীর্ঘ প্রশিক্ষণে রয়েছেন। আমরা ডিসি অফিসে যারা যাই সংবাদের খোঁজে তারা জেনেছি প্রায় ৭৪ জনের মতো ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারী নেই ডিসি অফিসে। ৩য় শ্রেণীর নিয়োগের জন্য এখনও পরীক্ষ-নিরীক্ষা চলছে। এছাড়া, সরকার কর্তৃক বেতন ভাতা বৃদ্ধির ফলে প্রায় কয়েকদিন পরপরই ডিসি অফিসের ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারীরা স্বেচ্ছায় অবসরে যাচ্ছে। আবার অনেকে চাকুরী শেষ হওয়ার ফলে এলপিআর এ যাচ্ছে। ফলে এডিসি হিসেবে তাকে পিয়ন থেকে সহকারী কমিশনার এর কাজ পর্যন্ত করতে হচ্ছে। অফিসে বসে আজ রাতে উন্নয়ন মেলার জন্য কাজ করছিলেন। এদিকে বিআরডিবি’র মহাপরিচালক মহোদয়ের সার্কিট হাউজে আসার কথা। তাকেও রাতে রিসিভ করতে হবে। বার বার ফোন দিয়ে জানছিলেন মহাপরিচালক মহোদয়ের লোকেশনের কথা। একসময় খবর এলো আর ৫/১০ মিনিটের মধ্যে সার্কিট হাউজে এসে পৌঁছুবেন তিনি । সাথে সাথে রুম থেকে নেমে এলেন নীচে। গাড়িতে উঠে রওনা দিলেন সার্কিট হাউজের উদ্দেশ্যে। কিছুদূর যাওয়ার পর তার গাড়ীর সামনে দিয়ে একদম আড়াআড়িভাবে ভূলভাবে একজন ব্যক্তি সাইকেল চালিয়ে যাচ্ছিলেন। তাকে সিগন্যাল ও হর্ণ দেওয়া সত্বেও তিনি সরছিলেন না। আশপাশের মানুষ ও অন্য পথচারীরাও তাকে ইশারা দিচ্ছিলেন। কিন্তু সে নির্বিকার। তাকে বাঁচাতে এডিসির নির্দেশে অসীম ক্ষিপ্রতায় গাড়ীর ড্রাইভার গাড়িটি দিক ঘুরিয়ে দিলেন। গাড়ী ঘুরে উঠে গেল পাশ্ববর্তী ড্রেনের উপর দিয়ে রাস্তার বাইরে। পাশে আবার পানি ভর্তি খাদ। আশপাশের মানুষ ও পথচারীরা সবাই ভাবলেন এডিসি সাহেব ও ড্রাইভার বেঁচে আছেন কিনা! সবাই ছুটে এলেন গাড়ীর কাছে।
কিন্তু এডিসি জেনারেল তরফদার মো: আক্তার জামীল নির্বিকার চিত্তে গেইট খুলে বেরিয়ে এলেন বাইরে। সাথে ড্রাইভারও। আশপাশের মানুষ ও পথচারীরা সাইকেল আরোহীকে বকাঝকা করতে লাগলো। কিন্তু তিনি তখনও নির্বিকার। কারও দিকে তাকালেন না, কোন কথাও বললেন না। এমনকি সেই অপরাধী সাইকেলওয়ালাকেও না। শুধু ড্রাইভারকে বললেন, র্যাকার লাগলে এনে গাড়িটি ওঠাতে। তিনি হাঁটা শুরু করলেন সার্কিট হাউজের উদ্দেশ্যে। উধ্বর্তন সরকারি কর্মকর্তাকে প্রটোকল দেওয়ার উদ্দেশ্যে। কেননা, সাইকেলওয়ালাকে বকে সময় নষ্ট করার মানে নেই। হাতে মাত্র আর ২/৩ মিনিট। তার চেয়ে বেশী গুরুত্বপূর্ণ সরকারি দায়িত্ব পালনটি যথাসময়ে করা। লোকজন দেখলো-কিশোরগঞ্জের প্রথম ডিসি বর্তমানে মাননীয় মন্ত্রী মান্নান স্যারের পরে বিপুল জনপ্রিয়তা নিয়ে থাকা একজন এডিসি কঠিন বিপদেও কতটা সহনশীল ও মানবিক। তার জায়গায় অন্য যে কেউ হলে গাড়ী থেকে নেমে বকা-ঝকা তো সামান্য ব্যাপার-এসেই হয়তো চপেটাঘাত করতো সাইকেল চালককে এবং পুলিশে দিতো। ক্ষতিপূরণও চাইতো। আমরা যারা পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় তার গাড়ীটিকে এ অবস্থায় দেখে তাকে ফোন করলাম- তিনি তখনও শান্ত চিত্ত নিয়ে বললেন সবই ঠিক আছে। সবই আল্লাহতায়ালার ইচ্ছা। আসলেই তাই। ভাল মানুষের কেউ না থাকলে তার জন্য আল্লাহ তো থাকবেনই।
জানা গেল কিছুক্ষণ পর গাড়িটিকে সার্কিট হাউজে নেয়া হয়েছে। কোন র্যাকার লাগেনি। এডিসি স্যার ও ড্রাইভারের সাথে গাড়িরও তেমন কিছুই হয়নি। সত্যি আল্লাহরই ইচ্ছা সব। ভাল থাকুন স্যার সব সময়। আমাদের কিশোরগঞ্জ বাসীর দোয়ায়।
মুক্তিযোদ্ধার কন্ঠ ডটকম/০৪-০১-২০১৭ইং/ অর্থ
Tags: