মুক্তিযোদ্ধার কণ্ঠ রিপোর্ট,
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গাইবান্ধায় সংসদ সদস্য লিটন হত্যার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেছেন, ‘নির্বাচিত সংসদ সদস্যকে এভাবে হত্যা করা, এ ধরনের হত্যাকাণ্ড মেনে নেওয়া যায় না। হত্যাকারীদের খুঁজে বের করে তাদের শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।’
বাংলার মাটিতে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদকে স্থান না দেওয়ার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী আজ বুধবার বলেন, ‘কয়েকদিন আগে আমাদের গাইবান্ধায় একজন নির্বাচিত সংসদ সদস্য, যে এই জামায়াত-শিবিরের অত্যাচার-নির্যাতনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াত, মানুষকে সব সময় নিরাপত্তা দিত, তাকেই নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। নির্বাচিত প্রতিনিধিকে, সংসদ সদস্যকে এভাবে হত্যা করা এটা কখনই মেনে নেওয়া যায় না।’
গত ৩১ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মনজুরুল ইসলাম লিটন সুন্দরগঞ্জের নিজ বাসভবনে আততায়ীরা গুলি করে। পরে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে এরই মধ্যে নির্দেশ দিয়েছি- যারা এরসঙ্গে জড়িত যে কোনোভাবে তাদের (আততায়ীদের) খুঁজে বের করতে হবে। কারণ ওই সুন্দরগঞ্জে আমরা জানি তারা কীভাবে তাণ্ডব চালিয়েছিল। কীভাবে তারা দোকানপাট, সরকারি অফিস আদালত পুড়িয়েছিল। কীভাবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য পুলিশকে পিটিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেছে। তাদের অত্যাচার-নির্যাতনে ওই এলাকার মানুষ ছিল অতিষ্ঠ। এর বিরুদ্ধেই রুখে দাঁড়িয়েছিল এই লিটন, আমাদের এমপি। অথচ তাঁকেই তারা হত্যা করল। কাজেই এ ধরনের জনপ্রতিনিধিকে হত্যাকাণ্ড আমরা কখনোই মেনে নিতে পারি না।’
প্রধানমন্ত্রী দৃঢ় কণ্ঠে বলেন, ‘এই হত্যাকাণ্ডের বিচার হবেই বাংলার মাটিতে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বলব যেভাবেই হোক অপরাধীদের খুঁজে বের করতে হবে এবং এদের উপযুক্ত শাস্তি অবশ্যই দিতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী অপরাধীদের দ্রুত খুঁজে বের করে বিচারের আওতায় আনার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী উদ্দেশে বলেন, ‘আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীবাহিনীকে ইতোমধ্যেই নির্দেশ দিয়েছি- যারা এর সঙ্গে জড়িত, যে কোনোভাবে তাদের (আততায়ীদের) খুঁজে বের করতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ সকালে গণভবন থেকে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস ও উন্নয়ন সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে রংপুর বিভাগের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে মতবিনিময়কালে এসব কথা বলেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী ২০১৩ সালে গাইবান্ধায় হামলার মামলায় এখনো অপরাধীদের সাজা না হওয়ায় উষ্মা প্রকাশ করেন। তিনি দ্রুত মামলার অভিযোগপত্র প্রদান এবং আসামিদের গ্রেপ্তারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে তৎপর হওয়ার নির্দেশ দেন।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় শিক্ষক, অভিভাবক, মসজিদের ইমামসহ সব শ্রেণি-পেশার জনগণকে জঙ্গিবাদ উচ্ছেদে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘আমাদের সর্বস্তরের জনগণ সবার কাছে আমার একটাই আহ্বান থাকবে- বাংলার মাটিতে এই সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের স্থান যেন না হয়।
এর আগে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিডিও কনফারেন্সে সংযুক্ত হয়ে ‘ড. ওয়াজেদ ইন্টারন্যাশনাল রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের’ ভবন (দশ তলা) এবং এক হাজার আসনের ‘শেখ হাসিনা ছাত্রী হল’-এর (দশ তলা) ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী।
ভিডিও কনফরেন্সে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ রংপুর বিভাগের সংসদ সদস্য এইচ এন আশিকুর রহমান, টিপু মুনশী, নুরুল ইসলাম সুজন, রমেশ চন্দ্র সেন, মোতাহার হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
এ ছাড়া তথ্য সচিব মর্তুজা আহমেদ, শিক্ষাসচিব মো. সোহরাব হোসেইন, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী। রংপুর বিভাগের আটটি জেলার ছয় হাজার ২৯৯টি স্থান থেকে প্রায় ৩১ লাখ মানুষ এই ভিডিও কনফারেন্সে সংযুক্ত ছিলেন।
মুক্তিযোদ্ধার কণ্ঠ ডটকম/ ০৪-০১-২০১৭ইং / মো: হাছিব