মুক্তিযোদ্ধার কণ্ঠ রিপোর্ট,
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ গত রোববার ৭৩ বছরে পা রাখলেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রিয়ভাজন কামালপুর গ্রামের সদালাপী ও মিষ্টভাষী সেই ছাত্রলীগ নেতা আবদুল হামিদ অ্যাডভোকেট। দেশের ২০তম রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের ৭৩তম জন্মবার্ষিকী পালিত হয়েছে গত রোববার। জেলা শহর কিশোরগঞ্জসহ জেলার হাওর উপজেলা ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রামে কেক কেটে জন্মবার্ষিকী পালন করেন নেতাকর্মী, শুভার্থী ও স্বজনরা। তৃণমূলে নিবেদিতপ্রাণ একজন রাজনীতিক হিসেবে ধাপে ধাপে তার এগিয়ে চলার কাহিনী এখন দেশের সব মত ও পথের মানুষের মুখে মুখে। গল্পরসিক, নির্মোহ ও নিরহংকার মানুষ আবদুল হামিদ রাজনীতির আদর্শকে ভিন্ন উচ্চতায় নিয়ে গেছেন, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। বর্তমান কিশোরগঞ্জ জেলার মিঠামইন উপজেলার কৃষক পরিবারের সন্তান ছাত্রলীগ নেতা আবদুল হামিদ ১৯৭০ সালে ২৫ বছর বয়সে এলএলবিতে ভর্তি হওয়ার জন্য ঢাকায় গিয়ে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সামনে ছিল জাতীয় পরিষদ নির্বাচন। এ ছাত্রলীগ নেতার নির্বাচনী এলাকা তদানীন্তন ময়মনসিংহ-১৮ আসন থেকে মুসলিম লীগের প্রভাবশালী প্রার্থী আফতাব উদ্দিনের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার মতো আওয়ামী লীগের কোনো প্রার্থী খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। মিজবাহ উদ্দিন নামের অবসরপ্রাপ্ত এক জেলা জজ সে নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে প্রার্থী হওয়ার আগ্রহ দেখালেও মনোনয়নপত্র দাখিলের কিছুদিন আগে তার মৃত্যু হয়। এরকম প্রার্থী সংকটকালে বঙ্গবন্ধু আবদুল হামিদকেই যোগ্য প্রার্থী মনে করলেন। তাকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার নির্দেশ দিলেন। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে তদানীন্তন ময়মনসিংহ-১৮ (ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম-নিকলী-তাড়াইল) আসন থেকে আবদুল হামিদ পাকিস্তান জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী হন। এলাকাবাসী সাহসী ভূমিকার জন্য ‘ভাটির শার্দুল’ উপাধি দিয়ে তাকে নিয়ে নির্বাচনী প্রচারে ঝাঁপিয়ে পড়েন। কামালপুর গ্রামের অদূরে মিঠামইন পুলিশ ফাঁড়ির সামনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনপূর্ব শেষ জনসভায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিজে উপস্থিত হয়ে তরুণ প্রার্থী ছাত্রলীগ নেতা আবদুল হামিদের জন্য ভোট প্রার্থনা করেন। সে নির্বাচনে তিনি মুসলিম লীগের প্রভাবশালী প্রার্থী আফতাব উদ্দিনকে ধরাশায়ী করে জাতীয় পরিষদের সর্বকনিষ্ঠ সদস্য নির্বাচিত হন। তারপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। সাতবার জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত হওয়ার অসামান্য গৌরব অর্জন করেছেন তিনি। রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ার আগে দায়িত্ব পালন করেন বিরোধী দলের উপনেতা, ডেপুটি স্পিকার ও স্পিকার হিসেবে। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের জন্য তার সাফল্যের মুকুটে যুক্ত হয় স্বাধীনতা পদকের হিরণ¥য় পালক। দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের অবহেলিত হাওর জনপদের একটি গ্রামের নাম কামালপুর। বর্তমান কিশোরগঞ্জ জেলার মিঠামইন উপজেলার সদর ইউনিয়নে অবস্থিত এ গ্রামটির দু’পাশ ঘিরে বয়ে চলেছে ঘোড়াউত্রা নদী। ১৯৪৪ সালের ১ জানুয়ারি হাওরবেষ্টিত কামালপুর গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন আবদুল হামিদ। তার পিতার নাম হাজী মো. তায়েব উদ্দিন ও মাতা তমিজা বেগম। তিনি তিন পুত্র ও এক কন্যা সন্তানের জনক। তার জ্যেষ্ঠপুত্র রেজওয়ান আহমেদ তৌফিক তারই নির্বাচনী এলাকা থেকে দ্বিতীয়বারের মতো জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। বর্তমান মিঠামইন উপজেলা ছিল নিকলী উপজেলার একটি ইউনিয়ন মাত্র। আর এ কারণে সে গ্রামে কোনো উচ্চ বিদ্যালয় না থাকায় নিজ গ্রামে প্রাথমিক পর্যায়ের পাঠ চুকিয়ে তাকে ভর্তি হতে হয় নিকলী জি সি উচ্চ বিদ্যালয়ে। সেখান থেকে মাধ্যমিক পাসের পর ভর্তি হন কিশোরগঞ্জ গুরুদয়াল কলেজে। ১৯৫৯ সালে তিনি বাংলাদেশ ছাত্রলীগে যোগ দেন। তিনি গুরুদয়াল কলেজ ছাত্র সংসদ থেকে প্রথমে জিএস ও পরে ভিপি নির্বাচিত হন। ১৯৬৪ সালে মহকুমা ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৬১ সালে গুরুদয়াল কলেজের ছাত্র থাকা অবস্থায় আইয়ুববিরোধী আন্দোলনে যোগ দিয়ে তিনি কারাবরণ করেন। গুরুদয়াল কলেজ থেকেই তিনি স্নাতক ডিগ্রি নিয়ে ঢাকার সেন্ট্রাল ল’ কলেজ থেকে এলএলবি পাস করেন। রাজনীতির পাশাপাশি আইন পেশায় যুক্ত হয়ে খ্যাতির সঙ্গে পাঁচবার কিশোরগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর তিনি গ্রেফতার হয়ে নির্যাতনের শিকার হন। ১৯৫৯ সালে ছাত্রলীগে যোগ দেয়ার মধ্য দিয়ে আবদুল হামিদের রাজনৈতিক জীবন শুরু। ১৯৭৮ সাল থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত তিনি কিশোরগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে সক্রিয় দায়িত্ব পালন করেন। কামালপুর গ্রামের কাদামাটি ও জলে বেড়ে ওঠা আবদুল হামিদ তার দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে কিশোরগঞ্জের প্রতিটি থানা, পৌরসভা, ইউনিয়ন ও গ্রামগঞ্জ ঘুরে বেড়িয়েছেন। তার নেতৃত্বে এ অঞ্চল গড়ে ওঠে আওয়ামী লীগের দুর্ভেদ্য দুর্গ হিসেবে। এখানকার মা-মাটি ও মানুষের সঙ্গে গড়ে উঠেছিল তার প্রাণের সম্পর্ক। নির্মোহ রাজনীতির পথ বেয়ে কামালপুর থেকে বঙ্গভবনে প্রবেশ করেন তিনি।
মুক্তিযোদ্ধার কণ্ঠ ডটকম/০৫ -০১-২০১৭ইং / মো: হাছিব