আবিদুর রহমান সজল, সোনারগাঁ থেকে ফিরেঃ
ঘুরে আসুন সোনারগাঁও লোক ও কারুশিল্প যাদুঘর ও পানাম সিটি ব্যস্ত নগরজীবনে রুটিনমাফিক কাজকর্মের চাপে যখন পিষ্ট হয়ে যাচ্ছেন, ঠিক তখনই ঢাকার আশেপাশের কোন দর্শনীয় স্থান ঘুরে আসতে পারেন। একঘেয়েমী দূর হওয়ার পাশাপাশি ইতিহাস ঐতিহ্যের সান্নিধ্য পাবেন খুব কাছ থেকে । এতে করে আপনার রিফ্রেশমেন্টের সাথে পরিবারের ছোট বাচ্চাদের অনেক কিছু স্বচক্ষে দেখা এবং শেখা হয়ে যাবে। জানা হবে দেশীয় লোকশিল্প বিষয়ক নানান তথ্য।
ঢাকার কাছাকাছি পরিবার পরিজন নিয়ে ঘুরতে যাওয়ার জায়গার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে সোনারগাঁও লোকশিল্প যাদুঘর ও পানাম সিটি । সাপ্তাহিক যেকোন ছুটির দিনে ঘুরে আসতে পারেন প্রাচীন বাংলার রাজধানী সোনারগাঁও ও পানাম সিটি।
অনুপম স্থাপত্যশৈলীর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য়ের নান্দনিক ও নৈসর্গিক পরিবেশে ঘেরা বাংলার প্রাচীন রাজধানী সোনারগাঁও। প্রাচীন সুবর্ণগ্রাম থেকে সোনারগাঁও নামের উদ্ভব বলে কারো কারো ধারণা রয়েছে। অন্য ধারণামতে বারো ভূঁইয়া প্রধান ঈশা খাঁর স্ত্রী সোনাবিবি’র নামানুসারে সোনারগাঁও নামকরণ করা হয়। আনুমানিক ১২৮১ খ্রিস্টাব্দে এ অঞ্চলে মুসলিম আধিপত্যের সূচনা হয়। মধ্যযুগে এটি মুসলিম সুলতানদের রাজধানী ছিল। ১৬১০ খ্রিস্টাব্দে দিল্লির সম্রাট আওরঙ্গজেবের আমলে ঢাকা সুবে বাংলার রাজধানী হিসেবে ঘোষিত হবার পূর্ব পর্য়ন্ত সোনারগাঁও ছিল পূর্ববঙ্গের রাজধানী। সোনারগাঁও-এর আরেকটি নাম ছিল পানাম।পানাম নগরের নির্মিত ভবনগুলো ছোট লাল ইট দ্বারা তৈরী। দীর্ঘ একটি সড়কের উভয় পাশে দৃষ্টিনন্দন ভবন স্থাপত্যের মাধ্যমে পানামনগর গড়ে উঠেছিল। উভয় পাশে মোট ৫২টি পুরোনো বাড়ী এই ক্ষুদ্র নগরীর মূল আকর্ষণ। পানাম শহরের ঠাকুরবাড়ি ভবন ও ঈশা খাঁ’র তোরণকে একত্রে নিয়ে মোট প্রায় ষোল হেক্টর স্থান জুড়ে লোকশিল্প ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের অবস্থান। এখানে ১টি জাদুঘর, ১টি লোকজ মঞ্চ, সেমিনার কক্ষ ও কারুশিল্প গ্রাম রয়েছে। এখানকার জাদুঘরে প্রায় সাড়ে চারহাজার নিদর্শন সংরক্ষিত আছে। প্রতি শুক্রবার থেকে বুধবার সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্য়ন্ত দর্শনার্থীদের জন্য খোলা থাকে। তবে শুক্রবার দুপুর ১২টা থেকে দুপুর ২টা পর্য়ন্ত জুমার নামাজের জন্য জাদুঘর বন্ধ থাকে। এছাড়া এখানে প্রত্যেক বছর শীতকালে মাসব্যাপী লোকশিল্প মেলা হয়ে থাকে । যেখানে বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী পোশাক আশাক থেকে শুরু করে আনুষাজ্ঞিক সকল প্রকার জিনিসপত্র পাওয়া যায়। লোক ও কারুশিল্প যাদুঘর এলাকার ভেতরে কৃত্রিম লেকে নৌকা ভ্রমণের ব্যবস্থা আছে। যেখানে ৪/৬ জনের নৌকা আধা ঘন্টা ভাড়া ২০০ টাকা । প্লাস্টিক এবং কাঠের দুই ধরনের নৌকা পাওয়া যায়। তবে কাঠের নৌকা ঘন্টা হিসেবে ভাড়া নিলে সাথে ২০/৫০ টাকার বিনিময়ে মাঝি সঙ্গে নেওয়াটা বুদ্ধিমানের কাজ।
পানাম নগরী সোনারগাঁও লোক ও কারুশিল্প জাদুঘর হতে আধা-কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এটি ‘‘হারানো নগরী” নামেও পরিচিত। পানাম নগরীর নির্মাণশৈলী অপূর্ব এবং এর নগর পরিকল্পনা দুর্ভদ্য ও সুরক্ষিত। এটি মুলত বঙ্গ অঞ্চলের তাঁত ব্যবসায়ীদের মূল কেন্দ্র বিন্দু ও আবাসস্থল ছিল । এ স্থান হতে ব্যবসায়ীগণ দেশের বিভিন্ন স্থানে তাঁত ব্যবসা পরিচালনা করতেন। বাংলার মসলিনসহ অন্যান্য তাঁত শিল্পের প্রচার প্রসার ও ব্যবসায়ের তীর্থস্থান এ পানাম নগরী। প্রায় চারশত বছর আগ হতে পানাম নগরী স্থাপন শুরু হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়। ধাপে ধাপে মোগল নির্মাণ শৈলীর সাথে বৃটিশ স্থাপত্য শৈলীর সংমিশ্রনে প্রায় চারশত বছরের পর্যায় ক্রমিক স্থাপন পুন:স্থাপন প্রক্রিয়ায় পানাম নগরী বর্তমান রূপলাভ করে। পানাম নগরীতে মূলত ব্যবসায়ি ও জমিদাররা বসবাস করতেন। এর পাশাপাশি রাজাদের, আমির ওমরাদের জন্য পানাম নগরী ও তার আশেপাশের গ্রামগুলোতে গড়ে উঠেছিল নিপুন কারুকাজ খচিত পাকা ইমারতরাজি। পানাম ও তার আশপাশকে ঘিরে পঞ্চদশ শতক থেকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত এক সমৃদ্ধ জনজীবন ছিল। এখানে সরু রাস্তার দুই ধারে গড়ে উঠেছিল অট্টালিকা, সরাইখানা, মসজিদ, মন্দির, মঠ, ঠাকুরঘর, গোসলখানা, কূপ, নাচঘর, খাজাঞ্চিখানা, টাকশাল, দরবার কক্ষ, গুপ্তপথ, প্রশস্থ দেয়াল, প্রমোদালয় ইত্যাদি। পানাম নগরীতে দেখা যায় ৪০০ বছরের পুরনো মঠবাড়ি। পানামের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে পঙ্খীরাজ খাল। এ খাল পানামের গুরুত্বপূর্ন ভবনগুলো ছুঁয়ে পূর্বদিকে মেনিখালি নদ হয়ে মেঘনা নদীতে মিশেছে। ৫ মিটার প্রশস্থ ও ৬০০ মিটার দীর্ঘ একটি সড়কের দুই পাশে একতলা, দোতলা ও তিনতলা দালান রয়েছে পানামে। এছাড়াও রয়েছে প্রায় ৫২ টি ভবন। পানাম নগরীর মাঝে যে রাস্তা চলে গেছে এর উত্তর পাশে আছে ৩১ টি ভবন এবং দক্ষিণ পাশে আছে ২১টি ভবন।
কিভাবে যাবেনঃ
গুলিস্থান থেকে মোগড়া পাড়া চৌরাস্তা পর্যন্ত বাস আছে। বাসের নাম দোয়েল।সার্ভিস অনুযায়ী জনপ্রতি ভাড়া ৪৩ টাকা। স্পেশাল বাস গুলো ফ্লাইওভারের উপর দিয়ে যায় তাই ভাড়া একটু বেশি হলে ও সময় কম লাগে । মোগড়া পাড়া থেকে সোনারগাঁও লোকশিল্প যাদুঘর পর্যন্ত অটোরিকশায় জনপ্রতি ভাড়া ১০ টাকা আর সরাসরি পানাম সিটি গেলে ১৫টাকা । সোনারগাঁও লোক ও কারুশিল্প যাদুঘরে জনপ্রতি টিকেট ২০ টাকা এবং পানাম নগরীতে জনপ্রতি ১৫ টাকা টিকেট ।
ঘুরতে যাওয়ার আগে যে বিষয়ে লক্ষ্য রাখবেন –
আপনার ব্যক্তিগত ক্যামেরা/মোবাইল ফোন নিতে ভুলবেন না, কারণ সেখানে ছবি তোলার জন্য আলাদা করে তেমন ভালো কোন ব্যবস্থা নেই ।
যেহেতু সোনারগাঁও ঢাকা থেকে অনেকটাই নিকটবর্তী, চাইলে বাসা থেকে রান্না করে হটপটে করে খাবার নিয়ে যেতে পারেন । এতে খরচ ও কম হবে এবং স্বাস্থ্যকর খাবারের ও নিশ্চয়তা পাবেন।
তথ্যসূত্র : ইন্টারনেট
Tags: