মুহাম্মদ কাইসার হামিদ, ভৈরব-কুলিয়ারচর (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধিঃ
গত ১২ জানুয়ারী বৃহস্পতিবার অনলাইন নিউজ পোর্টাল ‘মুক্তিযোদ্ধার কণ্ঠ’ ডটকম- এ “লেখাপড়া অনিশ্চিত স্কুল ছাত্রী আকলিমা’র, বাধ্য হয়ে বসতে হলো বিয়ের পিঁড়ীতে” : কুলিয়ারচরে বিভিন্ন পদ্ধতিতে বাল্য বিবাহের হিরিক শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর গত ৮ ফেব্রুয়ারী বুধবার দুপুরে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরে বাল্য বিবাহের অভিযোগে ভ্রাম্যমান আদালতের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার ড. উর্মি বিনতে সালাম এক কলেজ ছাত্রীর মা‘কে ১ হাজার টাকা জরিমানা ও কলেজ ছাত্রের পরিবারের নিকট থেকে ছেলের বয়স ২১ বছর না হওয়া পর্যন্ত বিয়ে করাবেনা শর্তে মুসলেখা নেন। এসময় উসমানপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও কুলিয়ারচর পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মোঃ নিজাম ক্বারী এবং পপি পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধ (সিডিভাউ) প্রকল্পের কুলিয়ারচর উপজেলা শাখার সমন্বয়কারী মোঃ শাহিন হায়দার উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, উপজেলার সালুয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের মাধ্যমে ১ বছর বাড়িয়ে জন্ম নিবন্ধন নিয়ে চরকামালপুর গ্রামের মোঃ বাবুল মিয়ার পুত্র মোঃ সুজন মিয়া প্রায় আড়াই মাস আগে কুলিয়ারচর পৌরসভার আদমখাঁরকান্দি গ্রামের শফিকুর রহমান ওরফে জামাল মিয়ার কন্যা স্থানীয় কুলিয়ারচর ডিগ্রী কলেজের এইচ এস সি ২য় বর্ষের ছাত্রী নূসরাত ফারিয়া মীমকে বিবাহ করার সময় বাল্য বিবাহের অভিযোগে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ড. উর্মি বিনতে সালাম স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে ওই বাল্য বিবাহ বন্ধ করে দেয়। এর পর প্রশাসনকে বৃদ্ধাআঙুলী দেখিয়ে ছাত্রীর মা সাহীনা আক্তার ঐ কম বয়সী ছাত্র সুজনকে ফুঁসলিয়ে তার পরিবারের লোকজন ছাড়া কৌশলে গত ১৭ নভেম্বর সরকার কর্তৃক অবৈধ নোটারী পাবলিক অব বাংলাদেশ কিশোরগঞ্জে রেজি নং -২১৮০ এর মাধ্যমে বিবাহের ঘোষনা মূলক এফিডেফিড করে বিয়ে দিয়ে নির্দিধায় ঘর সংসার করাচ্ছিল। অপরদিকে আদমখাঁরকান্দি গ্রামের এক কিশোরী কুলিয়ারচর মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী (১৪) কে সালুয়া ইউনিয়নের বীরকাশিমনগর গ্রামের ডুবাই প্রবাসী এক যুবকের নিকট একই ভাবে এফিডেফিডের মাধ্যমে বিবাহ দেওয়া হয়। এছাড়া উপজেলার আব্দুল্লাপুর দক্ষিণ পাড়া গ্রামের ছানা মিয়ার কন্যা বীরকাশিম নগর এফ ইউ উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্ঠম শ্রেণীর ছাত্রী সাথী আক্তার সহ পশ্চিম জগৎচর গ্রামের মইনউদ্দিন ময়নার কন্যা স্থানীয় আগরপুর জে এস সি উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণীর ছাত্রীর লুৎফা বেগম কে একই ভাবে এফিডেফিডের মাধ্যমে বাল্য বিবাহ দেওয়া হয়েছে বলে জানা যায়। এ সব বাল্য বিবাহের ঘটনায় সালুয়া এমাদ উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুধাংশু চন্দ্র সূত্রধর ও কুলিয়ারচর মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহ্ মোঃ ফজলুল হক সহ এলাকাবাসী আইনের মাধ্যমে সঠিক বিচার দাবী করেন। উক্ত সংবাদটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল ‘মুক্তিযোদ্ধার কণ্ঠ’ ডটকম পত্রিকায় প্রকাশিত হওয়ার পর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ড. উর্মি বিনতে সালামের নজরে আসলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বাল্য বিবাহের ঘটনাগুলি তদন্তের জন্য পপি পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধ (সিডিভাউ) প্রকল্পের কুলিয়ারচর উপজেলা সমন্বয়কারী মোঃ শাহিন হায়দারকে দায়িত্ব দেন। তদন্ত শেষে ঘটনাবলীর সত্যতা পাওয়া যাওয়ায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার ড. উর্মি বিনতে সালাম মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে কলেজ ছাত্রী নূসরাত ফারিয়া মীমের মা শাহিনা আক্তারকে ১ হাজার টাকা জরিমানা করেন এবং কলেজ ছাত্রের পরিবারের লোকজনের নিকট থেকে ছেলের বয়স ২১ বছর না হওয়া পর্যন্ত বিয়ে করাবেনা শর্তে মুসলেখা নেন।। এ ব্যাপারে নোটারী পাবলিক এর মাধ্যমে বিয়ের আইনগত বৈধতার বিষয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে পপি’ পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধ (সিডিভাউ) প্রকল্পের কুলিয়ারচর উপজেলা শাখার সমন্বয় কারী মোঃ শাহীন হায়দার বলেন, নোটারী পাবলিক এর বিয়ে আইনগত কোন বৈধতা নেই। এসময় তিনি অন্য এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, বাল্য বিাবহ বন্ধের অন্যতম প্রতিবন্ধকতা হিসেবে এক শ্রেণীর অসাধু আইনজীবি,এফিডেফিট ও নোটারী পাবলিককে দায়ী করেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার ড.উর্মী বিনতে সালাম মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ছাত্রীর মাকে ১ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন ও ছাত্রের পরিবারের নিকট থেকে মোসলেখা নিয়েছেন এমন সত্যতা স্বীকার করে বলেন, অন্যান্য বাল্য বিবাহের ঘটনায়ও মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
.
মুক্তিযোদ্ধার কন্ঠ ডটকম/০৯-০২-২০১৭ইং/ অর্থ