বাংলাদেশে ব্লগার ওয়াশিকুর রহমান হত্যাকান্ডের পরদিন পুলিশ ধৃত দুই তরুণকে আদালতে হাজির করে আট দিনের রিম্যান্ডে নিয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, এই দুই তরুণের মধ্যে একজন এর আগে নিষিদ্ধ জঙ্গী গোষ্ঠী জেএমবির সাথে সংশ্লিষ্টতার জন্য আটক হয়েছিলো।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী গত রাত থেকে বেশ কয়েকটি জায়গায় গোয়েন্দা পুলিশ অভিযান চালিয়েছে। তবে কোথায় কোথায় এবং অভিযানে কি পাওয়া গেছে, তা জানা যায়নি।
ওদিকে, চট্টগ্রাম ও ঢাকার যে দুটো মাদ্রাসায় ঐ দুই তরুণ পড়াশুনা করে, তাদের একটির কর্তৃপক্ষ কোনো কথা বলেনি।
তবে ঢাকার মীরপুরের মাদ্রাসার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, গোয়েন্দা পুলিশ এসে এক ছাত্রের বিভিন্ন তথ্য নিয়ে গেছে।
এদিকে, ওয়াশিকুর রহমানের মৃতদেহের ময়নাতদন্তের পর মঙ্গলবার লক্ষীপুর জেলায় তার গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয়েছে।
ওয়াশিকুর রহমানকে হত্যার ঘটনায় স্থানীয় লোকজন মাদ্রাসার দু’জন ছাত্রকে হাতেনাতে ধরেছিল।
তাদেরকে মঙ্গলবার ঢাকার মহানগর হাকিমের আদালতে হাজির করে পুলিশ দশদিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেছিলো। আদালত তাদের প্রত্যেকের আটদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছে।
গোয়েন্দা পুলিশের কর্মকর্তা মাসুদুর রহমান বলেছেন, গ্রেফতার থাকা দু’জনের মধ্যে জিকুরুল্লাহ নামের তরুণ এরআগে নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন জেএমবির সাথে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগে আটক হয়েছিল।
পুলিশের দেয়া তথ্য অনুযায়ী জিকুরুল্লাহ চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদ্রাসার ছাত্র।
কওমী মাদ্রাসা ভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের নেতা শাহ আহমদ শফী এবং জুনায়েদ বাবুনগরী হাটহাজারী মাদ্রাসারও নেতৃত্বে রয়েছেন।
তাদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করে কথা বলা সম্ভব হয়নি। মাদ্রাসাটির পক্ষ থেকেও কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
হত্যা মামলায় গ্রেফতার থাকা আরেকজন আরিফুল ইসলাম ঢাকার মিরপুর এলাকায় জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম মাদ্রাসার ছাত্র।
এই মাদ্রাসার অধ্যক্ষ দেলোয়ার হোসেন বলেছেন, এই ছাত্র সম্পর্কে তার পরিস্কার ধারণা নেই। অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে তিন মাস ধরে ঐ ছাত্র ছুটিতে ছিল বলেও তিনি উল্লেখ করেছেন।
তবে অধ্যক্ষ জানিয়েছেন, পুলিশ তাদের মাদ্রাসায় এসে ঐ ছাত্র সম্পর্কে তথ্য এবং কাগজপত্র নিয়েছে।
লেখক অভিজ্যিৎ রায়কে হত্যার ঘটনার এক মাসের মাথায় ওয়াশিকুর রহমানকে হত্যার ঘটনা, দু’টি হত্যাকান্ডেরই ধরণ এক।
এর আগেও ব্লগার আহমেদ রাজিব হায়দারকে হত্যা এবং আসিফ মহিউদ্দিন ও লেখক হুমায়ুন আজাদের ওপর আক্রমণের ঘটনাগুলোর সাথে সর্বশেষ ঘটনার মিল খোঁজার চেষ্টা করছে গোয়েন্দা পুলিশ।
ঢাকার তেজগাঁ অঞ্চলের উপ কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, শুধু সরাসরি জড়িতদের ব্যাপারে নয়, এর পিছনের শক্তিকেও খুঁজে বের করার প্রশ্নে জোর দেয়া হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, “গ্রেফতার থাকা দু’জনকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আরও কিছু নাম পাওয়া গেছে। পিছনের গোষ্ঠী সম্পর্কেও এবার গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে।”
হত্যা মামলাটিতে চারজনকে অভিযুক্ত করা হলেও পুলিশ আরও কয়েকজনকে খুঁজছে।