মুক্তিযোদ্ধার কন্ঠ রিপোর্টঃ
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘এত উন্নয়ন করার পরও যারা তৃপ্তি পান না, তারা এই দেশে কী চান- দেশ দরিদ্র থাকবে? আর দরিদ্র হাড্ডিসার কঙ্কালসার মানুষগুলোকে দেখিয়ে দেখিয়ে পয়সা এনে নিজেরা উদোরপূর্তি করবেন?’
বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদের চতুর্দশ অধিবেশনে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এ কথা বলেন।
সরকারের উন্নয়ন ও গণতন্ত্র নিয়ে সমালোচনাকারীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘শুধু উন্নয়ন করলে হবে না, গণতন্ত্র লাগবে। এসব কথা কাদের মুখে শুনি, সেই লোকগুলোর নাম বলতে চাই না। যখন ইমার্জেন্সি সরকার অথবা মিলিটারি ডিকটেটর আসে, তখন তাদের কাছে খুব গণতান্ত্রিক মনে হয়। তখন একেবারে বিগলিতপ্রাণ হয়ে পদলেহন করতে শুরু করেন। ইমার্জেন্সি দিয়ে যখন আমাকে গ্রেপ্তার করা হলো, আমাকে দুর্নীতিবাজ বানিয়ে একেবারে জেলখানায় নেওয়া যায় কি না সেই চেষ্টা করা হলো, তখন তারা এতো গণতন্ত্র চারিদিকে দেখলেন? দেশে যখন ইমার্জেন্সি ও মিলিটারি ডিপ্লয় করে, তখন ওনাদের জন্য তা খুব গণতান্ত্রিক পরিবেশ মনে হয়। কারণ, তারা ভাবেন, একটা অস্বাভাবিক পাওয়ার যদি পাওয়া যায় তাহলে ওনাদের একটু গুরুত্ব বাড়তে পারে, মন্ত্রিত্ব বা পতাকা পেতে পারেন। এটাই ওনাদের আকাঙ্ক্ষা। আকাঙ্ক্ষা যদি এটাই হয়, তাহলে রাজনীতি করলেই হয়, জনগণের কাছে গেলেই হয়। নির্বাচন করে ভোটে নির্বাচিত হয়ে পার্লামেন্টে আসেন।’
তিনি আরো বলেন, ‘এখন যদি গণতান্ত্রিক পরিবেশ না থাকে, কথা বলার স্বাধীনতা যদি না থাকে, তাহলে তারা এত কথা বলেন কীভাবে? তারা সরকারের সমালোচনা করেন কীভাবে? বাংলাদেশে কিন্তু প্রাইভেট টেলিভিশন চ্যানেল ছিল না। এই আমি শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগ সরকারের প্রধান হিসেবে প্রথম টেলিভিশন উন্মুক্ত করে দেই। বিভিন্ন চ্যানেল দিয়ে দেই। আজকে আমি চ্যানেল দিয়েছি বলেই কথার বলার সুযোগ পাচ্ছেন।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘গণতন্ত্র আছে বলেই তো উন্নয়ন হচ্ছে। আমাদের আগে ২১ বছর যারা ক্ষমতায় ছিলেন তখন এত উন্নয়ন হয়নি কেন? আমরা আট বছরে যা করতে পারলাম, অতীতে যারা ছিলেন তারা পারেননি কেন? এটা আমার প্রশ্ন? সেই প্রশ্নের জবাব দিতে হবে।’
সংসদ নেতা বলেন, ‘ওই পতাকা পেলাম কি পেলাম না, তা নিয়ে আমার কোনো মাথাব্যথা নেই। ওটা যদি হতো তাহলে ২০০১ সালে আমাকে যখন বলা হলো, গ্যাস বিক্রি করতে হবে, বাংলাদেশের গ্যাস বিক্রি করবে আমেরিকান কোম্পানি, কিনবে ভারত- আমি রাজি হইনি। এ কারণে ২০০১ সালে সরকারে আসতে পারিনি। আর যারা গ্যাস বিক্রির মুচলেকা দিয়েছিল, সেই বিএনপি-জামায়াত জোটই ক্ষমতায় এসেছিল।’
দারিদ্র্য বিমোচনে এনজিওগুলোর ভূমিকার সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘প্রতিবছর তারা শুধু ১ শতাংশ করে দারিদ্র্য কমিয়ে ফেললে তো আমাদের দেশ দারিদ্র্য থাকেই না। অনেক আগেই শেষ হয়ে যাওয়ার কথা। তারপরও দারিদ্র্য থাকে কী করে? বরং দ্রুত দারিদ্র্য কমেছে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি নেওয়ার ফলে। আমরা ১৪২টি কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য। এর মধ্যে অনেকগুলো আমাদের নিজস্ব চিন্তার ফসল। আমরা কারো কাছে হাত পাতি না, ভিক্ষা চাই না। আমরা নিজেরা করতে পারি। সেটাও প্রমাণ করেছি এক পদ্মা সেতু দিয়েই।’