মুক্তিযোদ্ধার কন্ঠ রিপোর্টঃ
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচএম এরশাদ বলেছেন, আমার জীবনের বড় দু:খ আমি মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করতে পারিনি। বঙ্গবন্ধুকে জাতির পিতা ঘোষণা করতে পারিনি। ২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবস ঘোষণা করতে পারিনি।
২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস ঘোষণার জন্য উত্থাপিত প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এ কথা করেন।
শনিবার (১১ মার্চ) বিকেলে এই প্রস্তাব উত্থাপন করেন জাসদ সাধারণ সম্পাদক ও সংসদ সদস্য শিরীন আখতার।
সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদ বলেন, আমার অনেক দু:খ একটি কাজ আমি করে যেতে পারিনি। ২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবস পালনের ঘোষণা করে যেতে পারিনি এটা আমার দু:খ। আমার বিশ্বাস গণহত্যা দিবস হবে ২৫ মার্চ।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু সবার পিতা, আমার পিতা, আপনার পিতা (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা)।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর জন্ম না হলে আমি সেনা প্রধান হতে পারতাম না, রাষ্ট্রপতি হতে পারতাম না। ৭১ এ বন্দি শিবিরে ছিলাম। বন্দি বিনিময়ের কারণে ফিরে আসতে পেরেছিলাম। দু:খ একটা, বঙ্গবন্ধুকে জাতির পিতা ঘোষণা করতে পারিনি। আমিই প্রথম রাষ্ট্রপতি, বঙ্গবন্ধুর মাজারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছিলাম। বঙ্গবন্ধুকে জাতির পিতা ঘোষণার জন্য প্রস্তাব এনেছিলাম। কিন্তু কয়েকজনের বিরোধিতার কারণে করতে পারিনি।
২৫ মার্চের সেই ভয়াল দিনের বর্ণনা করে এরশাদ বলেন, ২৫ মার্চ কালো রাতে, হানাদার বাহিনী ঝাঁপিয়ে পড়েছিল আমাদের নিরীহ মানুষের উপর, পিলখানার বিডিআর জোয়ানদের উপর, রাজারবাগের পুলিশের উপর, ছাত্রদের উপর। তারা আমাদের জাতিকে নিশ্চিহ্ন করতে চেয়েছিল। সেই জন্যই ২৫ মার্চ গণহত্যা। আজ সংসদে এটা গৃহীত হবে। আশা করি আজ না হলেও একদিন না একদিন আন্তর্জাতিকভাবে এই দিবস গ্রহণ করা হবে।
বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা দিবসের ঘোষণা সম্পর্কে এরশাদ বলেন, ২৬ মার্চ রাতে আমাদের মহানায়ক বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করা হয়েছিলো। তিনি তখন আশঙ্কা করেছিলেন, হয়তো তিনি ফিরে আসতে পারবেন না। তাই তিনি পুলিশের ওয়ারলেসের মাধ্যমে খবর দিয়েছিলেন কালুরঘাট বেতার কেন্দ্রে। ওখান থেকে ঘোষণা হয়েছিল স্বাধীনতার। তাই আমরা ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস পালন করি।
তিনি বলেন, আমার সবচেয়ে বড় দু:খ আমি স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করতে পারি নাই। আমি সেনাবাহিনীতে ছিলাম। ১৯৬৯ সালে আমি লেফটেন্যান্ট কর্নেল পদে উন্নীত হই। তৃতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট তখন ছিলো সৈয়দপুরে। তখন পাকিস্তানিরা সমস্ত বাঙালি অফিসারদের পাশ্চিম পাকিস্তানে পাঠিয়েছিল। সেই সুবাদে ১৯৭০ সালের ২৯ ডিসেম্বর আমাকে বদলি করা হলো পাকিস্তানের করাচি ক্যান্টনমেন্টে। আমি পাকিস্তানে গেলাম ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ দিকে। মার্চ মাস শুরু হয়ে গেল। আমি বঙ্গবন্ধু টেলিফোন করেছিলাম, আমাকে তো বদলি করা হয়েছে, আমি কি করবো। তখন তিনি বলেছিলেন মুক্তিযুদ্ধ এখনও শুরু হয় নাই। ক্যারি অব দি অর্ডার… আমাকে যেতে হয়েছিল। সেজন্যই যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করতে পারি নাই এটাই বড় দু:খ। তাই আমার স্বপ্ন ছিলো মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য কিছু কাজ করতে পারি। আমি করেছিলাম মুক্তিযোদ্ধারা জাতির শ্রেষ্ঠ সম্পদ।