১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পেছনে প্রয়াত জেনারেল জিয়াউর রহমান ছিলেন মূল ছায়া ব্যক্তি। তিনি এ অভ্যুত্থানের বিরোধী হলে নিজেই অভ্যুত্থান থামাতে পারতেন। আর তা করা ছিলো তার সাংবিধানিক দায়িত্ব।
বিশিষ্ট মার্কিন সাংবাদিক লরেন্স লিফস্যুলজ কয়েক বছর আগে জাতীয় শোক দিবসের প্রাক্কালে একটি সাক্ষাৎকারে জিয়াউর রহমান সর্ম্পকে এ মন্তব্য করেন। মার্কিন সাংবাদিক ১৯৭০ দশকের মাঝামাঝি সময়ে বাংলাদেশে সংগঠিত সামরিক অভ্যুত্থান সম্পর্কে তার ব্যাপক পড়াশোনার জন্য সুপরিচিত।
লিফস্যুলজ বলেছেন, ‘আমার ধারণা ১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জিয়াউর রহমান জড়িত থাকার ব্যাপারে ভবিষ্যতে আরো তথ্য বেরিয়ে আসবে। এ মুহূর্তে আমার অনুমান যে, জিয়া আগস্ট হত্যাকান্ডে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।’
মার্কিন সাংবাদিক আরো বলেছেন, জিয়া ছিলেন প্রধান ছায়া ব্যক্তি। যদি তিনি এ অভ্যুত্থানের বিরোধী হতেন তাহলে তিনি নিজেই অভ্যুত্থান থামাতে পারতেন। তা করা ছিলো তার সাংবিধানিক দায়িত্ব।
এ প্রসঙ্গে গোলাম মুরশিদ তার ‘মুক্তিযুদ্ধ ও তার পর’ গ্রন্থে বলেছেন, ‘জিয়া ইচ্ছা করলে বিদ্রোহী মেজরদের বিচার করতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা করেননি। বরং পুরস্কার স্বরূপ তিনি তাদের বিদেশী দূতাবাসগুলোতে চাকরি দিয়েছিলেন। এখানেই শেষ নয়, জিয়া ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ পুনর্বহাল করেন। ২৬ সেপ্টেম্বরের অধ্যাদেশ ২৬ অক্টোবর মোশতাকের আমলেই বাতিল হয়ে গিয়েছিলো। তারপরও জিয়া ১৯৭৭ সালের ২৩ এপ্রিল নতুন একটি অধ্যাদেশ জারি করে মোশতাকের ইনডেমনিটি অধ্যাদেশটি পুনর্বহাল করেন এবং ১৯৭৯ সালের নির্বাচনের পর তিনি দায়মুক্তি অধ্যাদেশকে রীতিমতো সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করেন।’
অন্যদিকে বিশিষ্ট লেখক এ্যান্থনি ম্যাসকারেনহ্যাস মনে করেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরিকল্পনার বিষয়টি জানতেন জিয়াউর রহমান। পঁচাত্তরের পনেরই আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পাঁচ মাস পূর্বে পরিকল্পনার কথা তাকে (জিয়া) অবহিত করেছিলেন ফারুক রহমান। জিয়াউর রহমান তখন সেনাবাহিনীর উপ-প্রধান ছিলেন। ফারুক বঙ্গবন্ধু হত্যার অন্যতম হোতা। জিয়াউর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগের এসব কথা এ্যান্থনি ম্যাসকারেনহ্যাসকে জানিয়েছিলেন স্বয়ং মেজর ফারুক।
মেজর ফারুক ম্যাসকারেনহ্যাসকে জানান, তিনি ১৯৭৫ সালের ২০ মার্চ জিয়াউর রহমানকে এ ষড়যন্ত্রের কথা শোনান। জবাবে জিয়াউর রহমান বলেন, ‘তোমরা করতে চাইলে করতে পারো। কিন্তু আমি তাতে যোগ দিতে পারবো না।’
মেজর ফারুক তার অফিস থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জিয়া তার এডিসিকে বলেন, এই মেজরকে যেন তার সঙ্গে দেখা করার আর কোনো সুযোগ দেয়া না হয়।
তবে ম্যাসকারেনহ্যাস কিছুকাল পরে জিয়ার সাক্ষাৎকার উপলক্ষে ফারুক রহমানের এসব কথা তাকে মনে করিয়ে দেন, জিয়া তখন ‘হ্যা’ অথবা ‘না’ কিছুই বলেননি।
এ বিষয়ে গোলাম মুরশিদ বলেন, এর অর্থ দেশের রাষ্ট্রপতিকে হত্যা করার প্রায় পাঁচ মাস আগে থেকেই জিয়া জানতেন। কিন্তু সেনাপ্রধান অথবা রাষ্ট্রপতি কাউকেই তিনি এ কথা জানাননি। এটা তার পবিত্র দায়িত্ব পালনের ব্যর্থতা। সেদিক দিয়ে বিচার করলে মুজিব হত্যার পরোক্ষ দায়ও তিনি এড়াতে পারেন না।