মুক্তিযোদ্ধার কণ্ঠ রিপোর্ট :
বাংলাদেশকে প্রাচ্যের সুইজারল্যান্ড হিসেবে উন্নত, সমৃদ্ধ করে গড়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতার সম্পূর্ণ জীবনটাই ছিল বাংলার মানুষের জন্য নিবেদিত। জাতির পিতা চেয়েছিলেন বাংলাদেশ হবে প্রাচ্যের সুইজারল্যান্ড।
শনিবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতির পিতার ৯৭তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটি আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির ভাষণে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০২১ সালে আমাদের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী আমরা পালন করবো। ২০২০ সাল জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী আমরা উদযাপন করবো। জাতির পিতার স্বপ্ন আমরা বাস্তবায়ন করবো, তার জন্মদিনে এটাই হোক আমাদের প্রতিজ্ঞা।’
তিনি ২০২১ সালে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করতে আওয়ামী লীগের সব সহযোগী সংগঠনকে এখন থেকেই প্রস্তুতি গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে বলেন, ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করবো। বাংলাদেশ হবে মধ্যম আয়ের দেশ। আর ২০৪১ সালে হবে বাংলাদেশ হবে উন্নত, সমৃদ্ধ দেশ। বাংলাদেশে কোনো দারিদ্র্য থাকবে না, কোনো মানুষ গৃহহারা থাকবে না, কোনো মানুষ রোগে-শোকে কষ্ট পাবে না। সবাই তাদের জীবনের মৌলিক অধিকারগুলো ভোগ করতে পারবে। সেভাবেই আমরা দেশকে গড়ে তুলতে চাই।
প্রধানমন্ত্রী তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভাব নেই উল্লেখ করে পদ্মাসেতু নিয়ে বিশ্বব্যাংকের মিথ্যা দুর্নীতির অভিযোগ সম্পর্কে বলেন, রাজনীতি করি বাংলাদেশের জনগণের জন্য, রাজনীতি করি পিতার আদর্শে। জনগণের জন্য যেকোন ত্যাগ স্বীকারে যেখানে প্রস্তুত, সেখানে মিথ্যা দুর্নীতির অভিযোগ এনে ভয় দেখাবে, আমি তো ওরকম বাবার সন্তান না। আমি শেখ মুজিবের সন্তান।’ তিনি বলেন, ‘আপনারা দেখেছেন কানাডার সেই ফেডারেল কোর্ট বলে দিয়েছে বিশ্বব্যাংকের সব অভিযোগ মিথ্যা, ভুয়া, বানোয়াট। অন্তত বাংলাদেশের মানুষের সম্মান আমরা রেখেছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব রক্ষায় যারা অতন্দ্র প্রহরী, বাংলাদেশ সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনী- তাদেরকে একটি স্বাধীন দেশের প্রতিরক্ষা বাহিনী হিসেবে আমরা গড়ে তুলেছি এবং জাতির পিতার ১৯৭৪ সালে প্রণীত প্রতিরক্ষা নীতিমালার আওতায় আমরা ফোর্সেস গোল ২০৩০ গ্রহণ করে উন্নয়ন করে যাচ্ছি। পুলিশ বাহিনী, বর্ডার গার্ড, আনসার ও ভিডিপি, র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী প্রত্যেকটি বাহিনীকে আমরা একটা স্বাধীন দেশের উপযুক্ত করে গড়ে তুলে দেশের মানুষকে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের হাত থেকে মুক্ত করার পদক্ষেপ নিচ্ছি।
সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ প্রশ্নে সরকারের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই বাংলাদেশে কোনো জঙ্গি সন্ত্রাসবাদের স্থান হবে না। যে যেখানে আছেন সেখানেই তাদেরকে সেভাবে কাজ করতে হবে। আমাদের নেতা-কর্মীসহ সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে এজন্য সতর্ক থাকতে হবে, কারো সন্তান যেনো কোনোভাবে জঙ্গিবাদের পথে না যায়। কারো এলাকায় কোনো জঙ্গি বা সন্ত্রাসী রয়েছে কিনা এ সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অবহিত করার আহ্বান জানান তিনি। তিনি সমাজের সব শ্রেণিপেশার নাগরিকদের নিয়ে তার সরকারের জঙ্গিবাদ বিরোধী পদক্ষেপ অব্যাহত রাখারও দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে বলেন, ‘ঐ সন্ত্রাসী, জঙ্গি এবং মাদকাশক্তি থেকে যেন যার যার সন্তানরা দূরে থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাভাই সৃষ্টি করে প্রকাশ্য দিবালোকে অস্ত্র হাতে নিয়ে পুলিশ ও বিএনপি নেতাদের মদদে তৎপরতা চালিয়ে যে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ চালু করা হয়েছিল, তা দমনে আমরা উদ্যোগ নিয়েছি। ৫০০ জায়গায় জঙ্গিরা বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে, ১০ ট্রাক অস্ত্রের চোরাকারবার দেশে ধরা পড়েছে। এর সঙ্গে দেখা গেল খালেদা জিয়ার মন্ত্রিরাই জড়িত। সেটাও আদালতে প্রমাণ হয়ে তারা সাজাপ্রাপ্ত হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী অভিযোগ করেন, খালেদা জিয়ার ছেলে দেশের টাকা বিদেশে পাচার করতে গিয়ে ধরা পড়ে বিচারের সম্মুখীন হয়েছে, খালেদা জিয়া নিজে এতিমের টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে এখন আদালতে গিয়ে মামলা মোকাবিলা করতে ভয় পাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী এ সময় তার বিরুদ্ধে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিভিন্ন মামলা আদালতে গিয়ে মোকাবিলার তথ্য তুলে ধরে বলেন, আমরা কিন্তু যেকোনো অবস্থা মোকাবিলা করতে জানি। কারণ আমাদের সততার জোর আছে। সততার শক্তি আছে। সততা একজন রাজনীতিবিদের জন্য বড়ো শক্তি আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যতই ষড়যন্ত্র করুক না কেন আমরা সততার সঙ্গে রাষ্ট্র পরিচালনা করছি বলেই আজকে বাংলাদেশের উন্নতি হচ্ছে।’
প্রধানমন্ত্রী এ সময় ১৯৬৬ সালে ৬ দফা দেবার পর কারাগারে থাকার সময় ডায়েরি আকারে লেখা জাতির পিতার ‘কারাগারের রোজ নামচা’ শীর্ষক আরেকটি আত্মজীবনী গ্রন্থ প্রকাশের কথা উল্লেখ করে বলেন, বইটির নাম দিয়েছেন শেখ রেহানা।
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের আলোচনা সভায় সূচনা বক্তৃতা করেন। সভায় বক্তৃতা করেন প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং জাতীয় সংসদের উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য শিল্পমন্ত্রী আমির হোমেন আমু ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য ও জনপ্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন। অন্যান্যের মধ্যে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মাওলানা খন্দকার গোলাম মওলা নকশেবন্দি, সাংগঠনের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমেদ হোসেন, দপ্তর সম্পাদক ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর সভাপতি একেএম রহমতউল্লাহ, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম, মহানগর দক্ষিণ ও উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ ও সাদেক খান বক্তৃতা করেন।
সভায় মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, সংসদ সদস্য, আওয়ামী লীগ এবং তার সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতারা উপস্থিত ছিলেন। তথ্যসূত্র : বাসস
মুক্তিযোদ্ধার কণ্ঠ ডটকম/১৮-মার্চ-২০১৭ইং/নোমান