মবিনুর মিয়া, তাহিরপুর (সুনামগঞ্জ) সংবাদদাতা :
মহিষ পালনে ব্যবহার হচ্ছে টাংগুয়ার হাওরের সংরক্ষিত সবুজ বনভূমি। এ জন্য ময়মনসিংহের ত্রিশাল ও নেত্রকোণার কলমাকান্দা থেকে কয়েক শতাধিক মহিষ টাঙ্গুয়ার হাওড়ের সংরক্ষিত বনাঞ্চলে নিয়ে আসা হয়েছে । এ সকল মহিষ প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পরিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা হিসেবে রামসার সাইট ঘোষিত সংরক্ষিত এলাকার বিভিন্ন কান্দা-জাঙ্গালে (ঘাস ও বনে আবৃত উঁচু সবুজভুমি) অবাধে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে হাওরের কান্দায় লাগানো ও প্রাকৃতিক ভাবে বেড়ে ওঠা হিজল-করচের চারা, নলখাগড়াসহ বিভিন্ন প্রজাতির বন, পাখির বাসা, বিভিন্ন প্রজাতির কচ্চপের ডিম মহিষের পায়ের তলায় পিষ্ট হচ্ছে।
প্রত্যক্ষদর্শী এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, হেমন্তে মওসুমে টাঙ্গুয়ার হাওরের দিগন্ত বিস্তৃত সবুজ বনাঞ্চল জেগে ওঠে । নানা প্রজাতির ঘাস তখন ছেয়ে যায় হাওরের কান্দা-জাঙ্গাল। সবুজাভাব ঘাসের লোভে স্থানীয় একটি চক্রকে ম্যানেজ করে টাকার বিনিময়ে ময়মনসিংহের কৃষকরা ঘাস খাওয়াতে মহিষের পাল নিয়ে আসে টাঙ্গুয়ার হাওড়ে। গত কয়েক বছর ধরে এটা হচ্ছে। টাঙ্গুয়ার হাওড়ের প্রকৃতি সংরক্ষণে নিয়োজিত সংশ্লিষ্টদের চোখে প্রকৃতি বিনাশী এমন ঘটনা ঘটলেও তারা রয়েছেন নিশ্চুপ।
স্থানীয়রা জানায়, রামসার সাইট হিসেবে ঘোষিত টাংগুয়ার হাওড়টির কান্দায় বিপুল সংখ্যক মহিষ প্রায় ২ মাস ধরে রাতদিন অবাধে হাওড়ের কান্দা-জাঙ্গালে দল বেধে বিচরণ করছে। ঘাস লতা-পাতা খাওয়ার নামে বিনাশ করছে পাখির বাসা, ডিম ও এই মওসুমের কচ্ছপের ডিম। পায়ের তলায় পিষ্ট হচ্ছে হিজল-করচসহ বিভিন্ন প্রজাতির চারা ও গাছ। ফলে হাওরের স্থলজ, জলজসহ বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণবৈচিত্র এখন হুমকির মুখে। এলাকাবাসী জানায়, প্রায় ২ মাস ধরে পরিবেশ বিনাশী এমন কা- ঘটলেও হাওরটির পরিবেশ বাঁচাতে এ ব্যাপারে কার্যকর কোন উদ্যোগ নেই। এই ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় পরিবেশবাদী ও সুধীজন।
দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য শিমুল আহমদ ”মুক্তিযোদ্ধার কণ্ঠ”কে জানান, দুই মাস আগে স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তি ৩ লাখ টাকার চুক্তিতে ময়মনসিংহের ত্রিশাল থেকে প্রায় ৪ শতাধিক মহিষ টাংগুয়ার হাওর এলাকায় নিয়ে এসেছেন। এ মহিষগুলো সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত হাওরটির বড়বন, টানেরবন, বিয়াসখালী, গোলডোবা, ইকরদাইড়, বাঘমারা, জয়পুর হাওর ও পাদিচোরা সহ বিভিন্ন এলাকায় ঘাস খেতে অবাধে চষে বেড়ায়। এ সময় কান্দায় লাগানো ও প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠা হিজল-করচের চারা, নলখাগড়াসহ বিভিন্ন প্রজাতির বন, পাখির বাসা ও ডিম নষ্ট পায়ে পিষ্ট করে নষ্ট করছে। তিনি বলেন, হাওরটির মিষ্টি পানির বিভিন্ন বিরল প্রজাতির কচ্ছপ কান্দায়র সংরক্ষিত বনে ডিম দিয়ে থাকে। এখন মহিষের পায়ের তলায় পিষ্ট হয়ে সেই ডিম নষ্ট হওয়ার পথে।
স্থানীয় পাঠাবুকা গ্রামের যুবক রিপচান হাবীব ”মুক্তিযোদ্ধার কণ্ঠ”কে বলেন, মহিষগুলো আমাদের স্থানীয় গবাদিপশুর ঘাসও শেষ করে দিয়েছে। তাছাড়া পরিবেশ-প্রতিবেশের ক্ষতিতো হচ্ছেই। হাওড় রক্ষায় নিয়োযিতদে সামনে এটা হলেও তারা নিরব।
আমরা হাওড়বাসী সংগঠনের প্রধান সমন্বয়কারী রুহুল আমিন ”মুক্তিযোদ্ধার কণ্ঠ”কে বলেন, নেত্রকোণার কলমাকান্দা উপজেলা থেকে আসা শতাধিক মহিষ হাওড়টির চিড়ারগাঁও সংলগ্ন পুরানকান্দাসহ বিভিন্ন এলাকায় অবাধে চষে বেড়িয়ে স্থলজ-জলজ উদ্ভিদ নষ্ট করছে। এতে করে প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠা নানা প্রজাতির বনের ক্ষতি হচ্ছে। তিনি বলেন, টাংগুয়ার হাওর একটি সংরক্ষিত এলাকা। এখানে এসব একদম অনুচিত। হাওড় ব্যবস্থাপনায় ত্রুটির কারণেই এটা হচ্ছে বলে জানান তিনি। তিনি আরো বলেন, এখনই মহিষগুলোকে হাওড় থেকে না তাড়ালে আগামি বছর বিভিন্ন এলাকা থেকে মহিষ এসে হাওড়টির কান্দাকে মহিষচারণ ভূমিতে পরিণত করবে।
টাঙ্গুয়ার হাওর সংরক্ষণে নিয়োজিত জেলা প্রশাসনের প্রতিনিধি ও আইইউসিএনের থিম্যাটিক কো অর্ডিনেটর ওয়াহিদুজ্জামান বলে, এই মওসুমে সাধারণত টাঙ্গুয়ার হাওড়পাড়ের কিছু লোক দূর দূরান্ত থেকে মহিষ, গরুর পাল নিয়ে আসে। যখন হাওড় রক্ষণাবেক্ষণের প্রকল্প ছিল তখন আমরা কমিউনিটির লোকদের দায়িত্ব দিয়ে সংশ্লিষ্টদের এসব থেকে বিরত রাখতাম। এখন যেহেতু প্রকল্প নেই তাই কমিউনিটির লোকদের কাজে লাগানো যাচ্ছেনা। তিনি বলে, টাঙ্গুয়ার হাওরের কান্দা-জাঙ্গালে মহিষ চারণ খুবই ক্ষতিকর।
তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম ”মুক্তিযোদ্ধার কণ্ঠ”কে বলেন, বিষয়টি আমি প্রথম শুনলাম। এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।
তাহিরপুর উপজেলা চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান কামরুল ”মুক্তিযোদ্ধার কণ্ঠ”কে বলেন, হাওড়ের কান্দা কোনমতেই মহিষের চারণভূমিতে পরিণত করা উচিত নয়। কারণ এই এলাকা সংরক্ষিত। কিভাবে প্রশাসনের সামনে এটা হচ্ছে আমাদের বোধগম্য নয়।
মুক্তিযোদ্ধার কণ্ঠ ডটকম/২১-মার্চ-২০১৭ইং/নোমান