আমিনুল হক সাদী, নিজস্ব প্রতিবেদক:
কিশোরগঞ্জের অখন্ডতা রক্ষার দাবীতে আবাও মাঠে নামবে আবার সর্বস্তরের জনতা। জেলাবাসীর একটি মিমাংসিত বিষয়কে আবারো সেই ইসুকে কেন্দ্র করে এবার মাঠে নামছে সাধারণ জনতা। অন্যদিকে ভৈরবকে জেলার ঘোষণার জন্য আন্দোলনের প্রস্ততি নিচ্ছেন ভৈরববাসী। আর ভৈরবকে জেলা ঘোষণা করা হলে বাজিতপুরকে জেলা ঘোষণার জন্য বাজিতপুরবাসীও আন্দোলনে যাবে বলে জানা গেছে।
সম্প্রতি সড়ক ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ভৈরবকে জেলা ঘোষণা করার প্রক্রিয়া চলছে বলে জানান। এমন খবর পাওয়ার পরপরই কিশোরগঞ্জের সর্বত্রই এ নিয়ে চলছে তোলপাড়। ফেসবুকে ও অনলাইনে এবং সাধারণ জনগণের মধ্যে পক্ষে বিপক্ষে চলছে তুমুল আলোচনা ও লেখালেখি।
জানা গেছে, ২০০৯ সাল থেকেই ভৈরবকে জেলা ঘোষণা করার জন্য প্রক্রিয়া চলছিল। এমতাবস্থায় কিশোরগঞ্জের ভৈরবে হাজি আসমত কলেজ মাঠে ২০১০ সালের ২৪ অক্টোবর এক সমাবেশে ভৈরবের কৃতি সন্তান সাবেক রাষ্ট্রপতি মরহুম জিল্লুর রহমান বলেছিলেন, ‘আমার শরীরের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে হলেও ভৈরবকে জেলা করে যাবো।’ এ নিয়ে পরে কিশোরগঞ্জের অখন্ডতা রক্ষার দাবীতে আন্দোলনে নামে জেলাবাসী। অন্যদিকে এ আন্দোলনের সাথে সাথে বাজিতপুরবাসীর দীর্ঘদিনের প্রাণের দাবী পুরনো বাজিতপুর উপজেলাকে জেলা হিসেবে আগে ঘোষণা করা হোক দাবী আদায়ের লক্ষে বিক্ষোভে তারাও মাঠে নেমে পড়েছিলেন। নৌ পথ, রেল পথ,সড়ক পথসহ অবরোধ, হরতাল ও অনশন কর্মসুচী পালিত করে। কিশোরগঞ্জ সম্মিলিত নাগরিক ফোরামের ব্যানাওে জেলার সর্বস্তরের লোকজন কিশোরগঞ্জের অখন্ডতা রক্ষার দাবীতে ব্যাপক আন্দোলনে জড়িয়ে যায়। নৌ পথ, রেল পথ,সড়ক পথসহ অবরোধ, হরতাল ও অনশন এবং মানববন্ধন কর্মসুচী পালন করে। আন্দোলনের মুখে বিষয়টি রাষ্ট্রের উচ্চ পর্যায়ে ব্যক্তিরা কয়েক দফা আলোচনা করে স্থগিত করা হয়। সম্প্রতি সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের প্রয়াত রাষ্ট্রপতি মরহুম জিল্লুর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এক সভায় ভৈরবকে জেলা ঘোষণা করার প্রক্রিয়া চলছে বলে খবর পাওয়ার পরপরই কিশোরগঞ্জের সর্বত্রই এ নিয়ে এখন চলছে তোলপাড়।
কিশোরগঞ্জ সম্মিলিত নাগরিক ফোরামের প্রধান সমন্বয়কারী সাবেক ছাত্র নেতা এনায়েত করীম অমি তাঁর ফেসবেুকে লিখেন, আবারো কিশোরগঞ্জের অখন্ডতা নিয়ে রাজনীতি আমাদের কি অপরাধ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। ভৈরবকে জেলা ঘোষণা করা হলে আবার আন্দোলনে যাবে জেলাবাসী। এর পরেই কিশোরগঞ্জের বাসিন্দাদের ও ফেসবুকে আলোড়ন সৃষ্টি করে।
কিশোরগঞ্জ সম্মিলিত অনলাইন এক্টিভিস্ট ফোরামের সদস্য সচিব বিজয় রায় খোকা ফোরামে লিখেন, কিশোরগঞ্জবাসীর একটি মিমাংসিত বিষয়কে আবারো ইস্যু বানানো হচ্ছে।কিশোরগঞ্জের মানচিত্রের বুকে আবারো ছুরি চালানোর বিষয়ে ইঙ্গিত দিলেন ওবায়দুল কাদের। কিশোরগঞ্জবাসী অতীতে আন্দোলনের মাধ্যমে এ জেলার অখন্ডতা বজায় রেখেছে এটা ভুলে গেলে চলবে না। কিশোরগঞ্জ নিয়ে এত ষড়যন্ত্র কেন? কিছুদিন আগেও আমাদের আন্দোলনে নেমে ঢাকা বিভাগে থাকা নিশ্চিত করতে হয়েছে। মহামান্য রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ এবং সৈয়দ আশরাফের জেলা এ কিশোরগঞ্জ এটা কি কাদের সাহেব ভুলে গেলেন? আমাদের প্রানের জেলা কিশোরগঞ্জ নিয়ে ভাবার মত অনেক রত্ন সরকারে রয়েছে।
সবশেষে বলতে চাই কিশোরগঞ্জ সম্মিলিত নাগরিক ফোরাম এবং কিশোরগঞ্জ সম্মিলিত অনলাইন এক্টিভিস্ট ফোরাম এর জন্মই হয়েছিল কিশোরগঞ্জের অখন্ডতা রক্ষার দাবী নিয়ে এবং এ দাবি পুরনে আমরা বার বার সফল হয়েছি। লাখো লাখো মানুষের সমর্থন নিয়ে অতীতের মত প্রয়োজনে এবারো আন্দোলনে আমরা মাঠে থাকবো। অখন্ড কিশোরগঞ্জ লাখো মানুষের প্রাণের দাবি। তিনি আরও জানান এ নিয়ে আগামী বৃহস্প্রতিবার একটি সংবাদ সম্মেলন করে আমরা আবার আন্দোলনের ঘোষণা দেবো।
অন্য দিকে সোমবার ভৈরবে জিল্লুর রহমানের চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত স্মরণ সভায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ মো. সায়দুল্লাহ মিয়া, পৌর মেয়র ও আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাডভোকেট ফখরুল আলম আক্কাছ, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম সেন্টু, আওয়ামী লীগ নেতা মির্জা সুলায়মান প্রমুখ নেতাদের বক্তৃতায় ঘুরেফিরে আলোচিত হয় জিল্লুর রহমানের সেই কথা। তারা বলেন, জিল্লুর রহমানের জীবনের শেষ ইচ্ছা ‘ভৈরব জেলা’ বাস্তবায়ন না হলে তার আত্মা কষ্ট পাবে। এ ব্যাপারে বক্তারা প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
কোনো কোনো বক্তা আবার বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। বিক্ষুব্ধ ওই নেতারা বলেন, এবার ভৈরব জেলা বাস্তবায়ন না করে আমরা ঘরে ফিরব না। যদি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জারিকৃত প্রজ্ঞাপন অনুসারে স্বাভাবিক পক্রিয়ায় ভৈরব জেলা বাস্তবায়ন না হয়। তাহলে আন্দোলনের মাধ্যমে তা আমরা আদায় করতে বাধ্য হবো।
এ দিকে বাজিতপুরবাসীও জানালেন ভৈরবের আগে বাজিতপুরকে জেলা ঘোষণা করার পুরনো দাবী না মানা হলে তারাও পুন:রায় আন্দোলনে নামবেন বলে জানিয়েছেন নেতৃস্থানীয়রা।
মুক্তিযোদ্ধার কন্ঠ ডটকম/২১-০৩-২০১৭ইং/ অর্থ