মুক্তিযোদ্ধার কন্ঠ রিপোর্টঃ
বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্ককে একটিমাত্র মানদণ্ডে মাপা ঠিক হবে না। আমাদের দু্ই দেশের সম্পর্ক ঐতিহাসিক ও সভ্যতাভিত্তিক। সংস্কৃতি ও ভাষার মিলের সঙ্গে এ সম্পর্ক ওৎপ্রোতভাবে জড়িত।
কিন্তু সব কিছুকে ছাপিয়ে সবচেয়ে বড় কথা হলো আমাদের পারস্পরিক বন্ধুত্ব। ২৫ মার্চকে বাংলাদেশ গণহত্যাদিবস হিসেবে ঘোষণা করেছে। এটা শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, ভারতের জন্যও খুবই গুরুত্ববহ।
সোমবার (২৭ মার্চ) বিকেলে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ইস্ট-ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের কনফারেন্স রুমে এক মতবিনিময় সভায় ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা একথা বলেন।
বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান এসময় উপস্থিত ছিলেন। আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম’র এডিটর-ইন-চিফ আলমগীর হোসেন, দৈনিক কালেরকণ্ঠ’র সম্পাদক কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন, বাংলাদেশ প্রতিদিন’র সম্পাদক ও নিউজ২৪’র সিইও নঈম নিজাম, ডেউলি সান’র ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক শিহাবুর রহমানসহ ইস্ট-ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের সবক’টি সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিরা।
ঢাকার ভারতীয় হাইকমিশনের কাউন্সিলর অরুন্ধতী দাশ, ফার্স্ট সেক্রেটারি (পলিটিক্যাল) রাজেশ উইকে ও অ্যাটাশে(প্রেস) রঞ্জন মণ্ডলসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা মতবিনিময়কালে উপস্থিত ছিলেন।
হর্ষবর্ধন শ্রিংলা বলেন, ‘আমি বাংলাদেশে আসার আগে থেকেই বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহানকে চিনি। আমি এ মিডিয়া হাউজকে ধন্যবাদ জানাই।কেননা আপনারা বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক নিয়ে বেশ ভালো কভারেজ দিয়ে থাকেন। সঠিক ও বস্তুনিষ্ঠ তথ্য দিয়ে আপনারা রিপোর্ট করেন বলে দুই দেশের মানুষের মনে সঠিক ধারণা জন্মে। সঠিক মনোভাব গঠনে এর ভূমিকা রয়েছে।’
হর্ষবর্ধন শ্রিংলা আরও বলেন, ‘আমাকে অনেকে প্রশ্ন করে থাকেন, বাংলাদেশে থাকার সময় আপনার ঘরের কথা মনে পড়ে না? উত্তরে আমি বলি, বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের বাংলাবান্ধা সীমান্ত থেকে মাত্র কিছু দূরেই দার্জিলিং-এ আমার বাড়ি। আমরা যখন পাহাড় থেকে নেমে আসতাম তখন জানতাম সামনের ঐ সমতল ভূমিটাই বাংলাদেশ। তাই বাংলাদেশে যখন আমি থাকি তখন মনে হয় নিজের বাড়িতেই আছি।’
তিনি বলেন, ‘১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অবদানের কথায় আপনারা যে আবেগপ্রবণ হয়ে ওঠেন সেটাকে আমরা মূল্য দিই।’
শ্রিংলা এসময় পরিষ্কার বাংলায় বলে ওঠেন: ‘আমি আপনাদের স্বাধীনতা দিবসের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।’ ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসের ঠিক একদিন আগে ২৫ মার্চকে গণহত্যাদিবস হিসেবে ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ। এটা শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, ভারতের জন্য খুবই গুরুত্ববহ।’
২৫ মার্চের রাত থেকে বাংলাদেশে কি ঘটেছিল তার রেকর্ড থাকতে হবে। এজন্যই দিনটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা প্রায় ৩০ লাখ মানুষ স্বাধীনতার জন্য তাদের প্রাণ বিসর্জন দিয়েছে। নৃশংস গণহত্যা বা জেনোসাইডের শিকার হয়েছে। বাংলাদেশের নতুন প্রজন্ম এগিয়ে যাচ্ছে, ভালো বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হচ্ছে, রফতানি বাড়ছে, বিনিয়োগ বাড়ছে আর অর্থনীতি চাঙ্গা হচ্ছে। সব কিছুতেই ইতিবাচক অগ্রগতি হচ্ছে। কিন্তু মনে রাখতে হবে, এটা সম্ভব হয়েছে স্বাধীনতা লাভের জন্য। এই স্বাধীনতা এসেছে অসংখ্য মানুষের আত্মত্যাগ ও জীবন বিসর্জনের মধ্য দিয়ে। এদেশের মানুষের আত্মত্যাগের বিষয়টি তাই খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ভারতের চেয়ে বাংলাদেশের শহীদের সংখ্যা অনেক বেশি। এটাতো ভুলে গেলে চলবে না।
শ্রিংলা স্মরণ করিয়ে দেন, এই দিনটাকে স্মরণ করার মধ্য দিয়েই নতুন প্রজন্মের কাছে এসব বৃত্তান্ত ও ঘটনা তুলে ধরতে হবে। কারণ এজন্য একটা নির্দিষ্ট দিন বা এসব বৃত্তান্ত রেকর্ড করা না থাকলে ক’দিন পরই বলা হবে মাত্র গুটিকয় লোক মারা গিয়েছিল।কিন্তু সত্যটা হলো, নৃশংস, নারকীয় হত্যাযজ্ঞের মধ্য দিয়ে এখানে একটা বিশাল সংখ্যক জনগোষ্ঠীকে নিশ্চিহ্ন করে ফেলেছে, অস্তিত্ব মুছে দিয়েছে দখলদার পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসররা। গণহত্যা দিবস ঘোষণার পর এখন আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বিষয়টি উত্থাপন করা জরুরি হয়ে পড়েছে। কারণ আমরা কখনই ৩০ লাখ শহীদের অবদানকে, আত্মত্যাগকে ভুলতে পারি না। এদিনটি এই শহীদদের কথা বারবার মনে করিয়ে দেবে।
দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্বের অর্থ হলো পরস্পরকে সম্মান করা। দুই দেশের মানুষের সম্পর্কে মূলমন্ত্র কী হবে তাও এই পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সহমর্মিতা। ভারতের জনগণ কখনোই বাংলাদেশেকে আইসোলেট করে, পাশ কাটিয়ে এগিয়ে যেতে চায় না। আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়ন পরস্পরের উন্নয়নের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত।
উদাহরণ টেনে শ্রী শ্রিংলা বলেন, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলো যেমন বাংলাদেশের পণ্য নিয়ে থাকে তেমনি বাংলাদেশ ভারতীয় পণ্য নিয়ে থাকে। এভাবেই তো বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশের কাছাকাছি চলে গেছে। বাংলাদেশ যে পরিমাণ পণ্য ভারত থেকে আমদানি করে থাকে, তার ৪০ শতাংশই তুলা জাতীয়। আবার বাংলাদেশ এই তুলা থেকে পণ্য তৈরি করে তা বিদেশে রফতানি করে।
হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা দুই দেশের মধ্যে রিবাজমান বাণিজ্য-বৈষম্য কমিয়ে আনার উপায় হিসেবে বসুন্ধরাসহ বাংলাদেশের বহৎ ব্যবসায়ী গ্রুপগুলোকে ভারতে বিনিয়োগের পরামর্শ দেন।