muktijoddhar kantho logo l o a d i n g

জাতীয়

মৌলভিবাজারের জঙ্গি সদস্যরা ঘোড়াঘাটের একই পরিবারের

ঘোড়াঘাট (দিনাজপুর) প্রতিনিধি।। 

মৌলভীবাজারের নাসিরপুরে জঙ্গি আস্তানায় আত্মঘাতী বোমা বিস্ফোরণে নিহত সাতজন দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটের একই
পরিবারের সদস্য বলে জানা গেছে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত ছবি দেখে তাদের পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছে পরিবারের
সদস্যরা।
তারা হলো- কলাবাড়ী গ্রামের আবু বকর সিদ্দিকির জামাতা লোকমান আলী (৪৫), মেয়ে মোছা. শিরিনা আক্তার (৩০) ও
তাদের সন্তান আমেনা খাতুন (২১), সুমাইয়া (১২), মরিয়ম (১০), ফাতেমা (৭) ও খাতিজা (৭ মাস)।

সরেজমিনে রবিবার দুপুরে গিয়েদেখা যায়, মেয়ে ও পাঁচ নাতনি হারানোর শোকে বিহবল পরিবারটি। বিলাপ করছেন
শিরিনা আক্তারের বাবাবাড়ির লোকজন। তারা ভয়াবহ পরিণতির জন্য জামাতা লোকমানের উগ্রবাদী কর্মকাণ্ডকেই দায়ী করছেন।

তাদের অভিযোগ, তার মেয়ে ও নাতনিদের জোর করে আটকে রেখেছিলেন লোকমান। লোকমানের শ্বশুর-পরিবার তাদের
মেয়ে ও পাঁচ নাতনির লাশ ফেরত চাইলেও জামাতার লাশ নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। এ নিয়ে এলাকায় বেশ চাঞ্চল্য
সৃষ্টি হয়েছে। শিরিনা আক্তারের মা জোবেদা বেগম বলেন, ‘আমার মেয়ে ও পাঁচ নাতনির লাশ ফেরত দাও। দেশদ্রোহী জামাতা লোকমান আলীর লাশ আমরা চাই না।’ এ ব্যাপারে শ^শুর আবু বক্কর সিদ্দিক জানান, বছর তিনেক আগে তার
মেয়ে ও নাতনিদের নিয়ে লাপাত্তা হয় লোকমান। তাদের আর কোনো খোঁজ তিনি পাননি। প্রায় তিন বছর যোগাযোগ
বিচ্ছিন্ন থাকার পর গত ২৯ মার্চ রাত ১টার দিকে তার মেয়ে শিরিনা আকতার ফোন করে বলেন, ‘বাবা আমাকে মাফ করে দিও, আর কোনো দিন দেখা হবে না।’ আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, এ সময় তারা কোথায় আছে মেয়ের কাছে জানতে চাইলে মেয়ে কাঁপা গলায় জানায় এখানে কারো আসার উপায় নেই। সে সময় পাশেই জামাতা লোকমান আছেবুঝতে পেরে তার সঙ্গে কথা বলতে চাইলে লোকমান কথা বলেননি। এখন মেয়ে ও নাতনিদের লাশ
ফেরত চাইলেও জামাতা লোকমানের লাশ নিতে নারাজ তিনি।
তার ভাষ্য, ‘লোকমান আমার মেয়ে ও নাতনিদের তিন বছর ধরে অজ্ঞাত স্থানে আটকে রেখেছিল। গত ২৯ মার্চ তাদের
হত্যা করেছে সে।’ লোকমান ও মেয়ে শিরিন আক্তারের ব্যাপারে কীভাবে নিশ্চিত হলেন- জানতে চাইলে আবু বক্কর গণমাধ্যমের প্রতিবেদন, চারটি শিশু সন্তানের বয়স এবং কয়েক দিন আগে মেয়ের সঙ্গে টেলিফোনে  আলাপকে প্রমাণ
হিসেবে তুলে ধরেন।

পরিবার ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, মৌলভীবাজারের নাসিরপুরে জঙ্গি আস্তানায় আত্মঘাতী বোমা বিস্ফোরণে
নিহত লোকমান আলী জামায়াত- শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে একসময় সম্পৃক্ত ছিলেন। বেশ কয়েক বছর আগে তিনি জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন। কয়েকবার পুলিশ তার খোঁজে বাড়িতে গেলেও তিনি উধাও হয়ে যান। দীর্ঘদিন ধরে তিনি এলাকা থেকে লাপাত্তা ছিল। জঙ্গি লোকমান আলী ঘোড়াঘাট উপজেলার ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের নুরুল ইসলামের ছেলে।

সরেজমিনে গিয়ে সাংবাদিকরা জঙ্গি আস্তানায় নিহতদের ছবি দেখালে লোকমানের বোন নুর বানু ও প্রতিবেশীরা নিশ্চিত করেন নিহতরা লোকমান ও তার পরিবারের সদস্য। লোকমানের ছোট বোন নুর বানু জানান, তিন ভাইয়ের মধ্যে লোকমান সবার ছোট। তিনি স্থানীয় কৃষ্ণরায়পুর মাদ্রাসায় দাখিল পর্যন্ত পড়ালেখা শেষ করে কৃষিকাজ করতেন। ২০০২ সালে বিয়ের পর সাত-আট বছর ভালোই ছিলেন। এরপর প্রায় আট বছর ধরে তাদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ নেই।
স্থানীয় গ্রাম পুলিশ তারা মিয়া জানান, জঙ্গি সম্পৃক্ততার সঙ্গে জড়িত থাকায় বেশ কয়েকবার লোকমানকে গ্রেপ্তারের জন্য
অভিযান চালায় পুলিশ।

ঘোড়াঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইসরাইল হোসেন বলেন, লোকমানের নামে ঘোড়াঘাট থানায় কোনো মামলা নেই। তবে
চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ থানায় তার বিরুদ্ধে একটি সন্ত্রাস বিরোধী মামলা হয় ২০০৮ সালে ২৫ অক্টোবর। ওসি বলেন, মৌলভীবাজারে নাসিরপুরে জঙ্গি আস্তানায় যারা নিহত হয়েছে, তাদের নিজের স্বজন দাবি করেছেন একটি পরিবার। এই পরিবারটি তিন বছর ধরে লোকমানদের সঙ্গে যোগাযোগ-বিচ্ছিন্ন বলেও জানান তিনি। নাসিরপুরে একটি বাড়িতে সাম্প্রতিক অভিযানের পর সাতজনের ছিন্নভিন্ন লাশের ময়নাতদন্তের পর চিকিৎসকরা জানান, নিহতদের মধ্যে চারটি শিশু রয়েছে।
নাসিরপুরে এক প্রবাসীর বাড়িতে নব্য জেএমবির সদস্যরাআস্তানা গেড়েছে খবর পেয়ে পুলিশ গত ২৯ মার্চ ভোরে এলাকা
ঘিরে ফেলে। আবু বক্করের বক্তব্য অনুযায়ী, সেদিন রাতেই মেয়ের সঙ্গে কথা হয় তার। পরদিন সোয়াট ও কাউন্টার টেররিজম ইউনিট সেখানে অভিযান চালায়। অভিযান শেষে পুলিশ কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম বলেন, পালানোর পথ না পেয়ে আত্মঘাতী হন ওই বাড়ির বাসিন্দারা। লাশগুলো মৌলভীবাজার সদর হাসপাতাল মর্গে রয়েছে। ডিএনএ নমুনাও রেখেছেন চিকিৎসকরা, যাতে অচেনা এই ব্যক্তিদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়।

গত বছর গুলশান হামলার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গোয়েন্দা তৎপরতায় অনেকের স্বজন-বিচ্ছিন্ন হয়ে সপরিবারে জঙ্গি তৎপরতায় জড়িয়ে পড়ার খবর মেলে। এদের কেউ কেউ দেশের বাইরেও পাড়ি জমায়।

 

মুক্তিযোদ্ধার কন্ঠ ডটকম/০২-০৪-২০১৭ইং/ অর্থ 

Tags: