মন্তোষ চক্রবর্ত্তী , অষ্টগ্রাম (কিশোরগঞ্জ):
কিশোরগঞ্জের হাওর উপজেলা অষ্টগ্রামে অস্বাভাবিক পানি বৃদ্ধির ফলে সাড়ে ৮ হাজার হেক্টর ইরি বোরো ধানী জমির ফসল তলিয়ে গেছে এবং ৬ হাজার হেক্টর জমির কাচাপাকা ধান সম্পূর্ন বিনষ্ট হয়ে গেছে। সপ্তাহ অধিককাল ধরে পানি অস্বাভাবিক ভাবে বাড়ছে। হাওরের ১ টি বাঁধ ভেঙ্গে গেছে আরেকটি বাঁধ রক্ষা করতে নারী পুরুষ মাথায় মাটির বোঝা নিয়ে ৩ দিন যাবৎ চেষ্টা করছে। পানির স্রোতে নৌকা ডুবে এক কৃষক দুদিন ধরে নিখোঁজ রয়েছে বলে জানা গেছে। অনেক কৃষককে কাচাপাকা ধানের ক্ষেতে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কান্নাকাটি করতে দেখা গেছে। সব মিলিয়ে একফসলী বোরো উৎপাদনী এ উপজেলায় হাহাকার সৃষ্টি হয়েছে।
সপ্তাহের অধিককাল ধরে প্রতিনিয়ত বৃষ্টি এবং প্রতিবেশী দেশের ঢলের পানি চলে আসায় এ উপজেলার মেঘনা, ধলেশ্বরী, করাতিয়া কলকলিয়া, ঘোড়াউত্রা, বৈঠাখালী, কলমারবাক, কালনী ইত্যাদি প্রতিটি নদীতে অস্বাভাবিক ভাবে পানি বৃদ্ধি পায়। এছাড়াও বিলবল্লী, গাইয়ালা, ধূবাবিল, বিলমাকসা, বড়গোপ, বড় আব্দা, পুবের হাওর ইত্যাদি বিলে নদীর পানি উপচে গিয়ে হঠাৎ ভরে গেছে। বড় হাওর, শিয়াল ভাঙ্গা, কৈরাইল, আদমপুর, নুরপুুর, সমারচর, আব্দুল্লাপুর, কাকুরিয়া, চন্ডিপুর, ইছাপুর, কৈরাইল, কলিমপুর, চরদেওঘর, আনোয়রপুর, পানিতোলপা, চরপ্রতাপ, খারুয়াইল, লাউড়ার চর, হায়দরাবাদ, কলিমপুর ইত্যাদি প্রতিটি হাওরের কাচাপাঁকা ধানের ক্ষেতগুলোর ফসল তলিয়ে গেছে। বৈঠাখালী ও বিলমাকসার সংযোগ গাঙ্গিনার বাঁধ ভেঙ্গে বহু জমি তলিয়ে গেছে। পাশ্ববর্তী বিলমাকসার অপর ১ টি বাঁধ রক্ষার জন্য হালালপুর ও কাকুরিয়া গ্রামের ৫ শতাধিক নারী পুরুষ মাথায় মাটির বোঝা বয়ে বাঁধ রক্ষা করার জন্য ৩ দিন ধরে চেষ্টা করছে। কেওড়ার রাস্তা সহ হাওর থেকে বাড়ীতে ধান আনার অসংখ্য রাস্তা ইতিমধ্যে তলিয়ে গেছে। গত শনিবার দুপুরে বাঙ্গালপাড়া ইউনিয়নের লাউড়া গ্রামের কৃষক শহীদ মিয়া (৩২) নৌকা নিয়ে চাতলপাড় বাজারে যাওয়ার পথে পানির স্রোতে নৌকা ডুবে যায়। রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ৪০ ঘন্টর মধ্যে তার সন্ধান মেলেনি। আদমপুর ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, আনোয়ার হোসেন, কমলা ইউপি চেয়ারম্যান, রাধাকৃষ্ণ দাস, পূর্ব অষ্টগ্রাম ইউপি চেয়ারম্যান, মোঃ কাছেদ মিয়া, খয়েরপুর, আব্দুল্লাপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান, আঃ রশীদ বিশিষ্ট কৃষক হযরত আলী সহ অসংখ্য কৃষক জানান ৪০ থেকে ৫০ ভাগ কাচাপাঁকা ধান নষ্ট হয়ে গেছে। এ ব্যাপারে উপজেলা চেয়ারম্যান শহীদুল ইসলাম জানান মারাত্বক ক্ষতি হয়ে গেছে। বিভিন্ন হাওরে ঘুরে দেখা গেছে, পানিতে ডুবিয়ে কাচাপাঁকা ধান কাটতে গিয়ে কৃষকেরা কান্নাকাটি করছে। মুখের গ্রাস একমাত্র বোরো ফসল হারিয়ে কৃষকেরা চরম বিপন্ন ও বিষন্ন হয়ে পড়েছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ আঃ মোন্নাফ ‘মুক্তিযোদ্ধার কন্ঠ’কে জানান, এবার অষ্টগ্রাম উপজেলায় ইরি বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৪ হাজার ৪ শত হেক্টর। অর্জিত হয়েছে ২৪ হাজার ২ শত ১১ হেক্টর। বর্তমান আকষ্মিক বন্যায় ক্ষতির সঠিক হিসাব নির্ধারনের কাজ চলছে। এ ব্যাপারে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করিছি। তবে অনুমান প্রায় ৮ হাজার হেক্টর প্লাবিত এবং পূর্ণক্ষতি হয়ে গেছে ৬ হাজার ৫শত ২০ হেক্টর। ক্ষতির পরিমান আরও বাড়তে পারে তিনি জানান।
মুক্তিযোদ্ধার কন্ঠ ডটকম/০৩-০৪-২০১৭ইং/ অর্থ