মুক্তিযোদ্ধার কন্ঠ রিপোর্টঃ
আর মাত্র ৯ দিন। ১৬ এপ্রিল থেকে বন্ধ হচ্ছে বাসের সিটিং, গেটলক, স্পেশাল সার্ভিস। পরিবহন মালিকরা এবার দৃঢ়ভাবেই এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সিটিং সার্ভিস বন্ধের পর বাসগুলো আগের মতোই চলাচল করবে বলে জানিয়েছেন মালিকরা।
সেইসঙ্গে রাজধানীতে পরিবহন খাতে পরিবর্তন আনতে রংচটা বাস তুলে নেওয়া, সিট কমিয়ে আনাসহ আরও ৭টি সিদ্ধান্ত নিয়েছে মালিক সংগঠন। তবে যাত্রীদের কেউ কেউ বলছেন, সিটিং সার্ভিসের মাধ্যমে স্বাচ্ছন্দ্যে গন্তব্যে যেতে পারতেন।
পরিবহন মালিক কর্তৃপক্ষের ঘোষণা অনুযায়ী, ১৫ এপ্রিলের পর আর কোনো বাস সিটিং চলতে পারবে না। সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে মালিক সংগঠনের ‘ভিজিলেন্স টিম’ নামবে ১৬ এপ্রিল।
গত ৪ এপ্রিল পরিবহন মালিকদের সিটিং সার্ভিস বন্ধের সিদ্ধান্তের সঙ্গে আরো ৭টি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এসব সিদ্ধান্ত রাজধানীর পরিবহন ব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনবে বলে আশা করছেন তারা। ওই বৈঠকে মালিকদের সঙ্গে শ্রমিক সংগঠনের নেতারাও ছিলেন বলে এটি কার্যকর সভা হিসেবে উল্লেখ করেছেন মালিক নেতারা।
পরিবহন মালিকদের সিদ্ধান্তের মধ্যে ছিলো- সরকার নির্ধারিত চার্ট অনুযায়ী ভাড়া আদায়, গাড়ির ভেতরে দৃশ্যমান স্থানে ভাড়ার চার্ট টানানো, গাড়ির ছাদে ও পাশে থাকা ক্যারিয়ার, সাইড অ্যাঙ্গেল এবং অতিরিক্ত সিট খুলে ফেলা।
এদিকে, ১৫ এপ্রিলের পর ক্যারিয়ার, সাইড অ্যাঙ্গেল বিরোধী অভিযানে নামার ঘোষণা আগে থেকেই দিয়েছে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ)। এছাড়া রংচটা, রংবিহীন ও জরাজীর্ণ বাস মেরামত করে চালানোর জন্য ১ মাস সময় বেঁধে দিয়েছেন কর্তৃপক্ষ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পরিবহন মালিক বলেন, সিটিং বাস না থাকার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হবে তাতে সন্দেহ নেই। কিন্তু যেসব বাসে অতিরিক্ত সিট আছে সেগুলো খুলে ফেলা সহজ নয়। বাসে বাসে উঠে গিয়ে এসব চেক করার মতো সময় পরীক্ষকদের হাতে নেই।
সিটিং সার্ভিস বন্ধের সিদ্ধান্তের দিন ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্লাহ জানান, ৮৪-৮৫ সালে আমি নিজে একসময় সিটি সার্ভিসের ব্যবসা করেছি। আমরা তখন সিট কমিয়ে রাখতাম যাতে স্ট্যান্ডিং প্যাসেঞ্জার বেশি নেওয়া যায়। আর এখন মালিকরা সিটের সংখ্যা বাড়িয়ে দেয়।
এনায়েতুল্লাহ জানান, ঢাকা শহর এবং শহরতলীর মধ্যে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার বাস চলাচল করে আর কোম্পানির সংখ্যা হবে প্রায় দেড়শোর কাছাকাছি। বিগত তিন-চার বছরে প্রচুর নতুন গাড়ি ঢাকায় এসেছে।
একটি সূত্র বলছে, গত দুই বছর থেকে নতুন আসা বাসগুলোর বেশিরভাগ সিটিং হিসেবে চলাচল শুরু করে। মিরপুর-আব্দুল্লাহপুর, উত্তরা-সায়েদাবাদ যাত্রাবাড়ী, গাজীপুর-সদরঘাট, গুলিস্তান-ধানমন্ডি, আজিমপুর-উত্তরা রুটে এসব বাসের চলাচল দেখা যায়।
সরেজমিন কুড়িল চৌরাস্তা ও বিমানবন্দর সড়কের শেওড়া বাসস্ট্যান্ড ঘুরে দেখা গেছে, বাসস্ট্যান্ডে বাস আসার পরপরই একজন সুপারভাইজার বাসে উঠে সিট গুণে খাতায় উল্লেখ করছেন। অল্প দূরত্ব পর কেউ গিয়ে নামলেও তার কাছ থেকে পুরো রুটের ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। এভাবে সরকার নির্ধারিত ভাড়ার দিগুণ-তিনগুণ ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে সিটিং সার্ভিস, গেটলট, স্পেশাল ও কাউন্টার লক নামে চলা এসব বাসের বিরুদ্ধে।
শেওড়া বাসস্ট্যান্ডে বিকাশ পরিবহনের এক সুপারভাইজার বলেন, সিটিং সার্ভিস বন্ধের ঘোষণা তারা শুনেছেন। তবে গাড়ির মালিকরা এখনও তাদের কিছু জানায়নি। সিটিং উঠে গেলে তার মতো প্রায় দেড়-দুই হাজার পরিবহন কর্মী বেকার হয়ে যাবে।