আশরাফ আলী, স্টাফ রিপোর্টারঃ
কিশোরগঞ্জের নরসুন্দা নদীর পাড়ে নির্মাণাধীন ওয়াচ টাওয়ার পরিদর্শন করে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ও উপ-সচিব তরফদার মো: আক্তার জামীল।
আজ ১০ মে ২০১৭ তারিখ বুধবার প্রথমবারের মতো ওয়াচ টাওয়ার পরিদর্শনে আসেন তিনি। পরিদর্শনে এসে দেখেন ওয়াচ টাওয়ারের নির্মাণ কাজ সম্পূর্ণরূপে শেষ হওয়ার আগেই দর্শনার্থীদের জন্য তা উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে। ফলে দর্শণার্থী নিয়ন্ত্রণে কোন শৃংখলা না থাকায় টাওয়ারের যেটুকু কাজ হয়েছে এরই মধ্যে সেটির সৌন্দর্যও বিনষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সরেজমিনে যেয়ে তিনি বিভিন্ন বয়সী দর্শণার্থীদের কয়েকজনকে অশালীন অবস্থায় দেখতে পান। বিশেষ করে উঠতি বয়সের স্কুল ও কলেজ পড়ুয়া কয়েকজন ছেলেমেয়ে ও একজন পাগলকেও সেখানে পাওয়া গেল। সিঁড়ি বেয়ে প্রথম থেকে একবারে শেষ পর্যন্ত উপরে উঠে তিনি দেখলেন টাওয়ারের ভিতরের সকল দেয়ালে অসংখ্য অশালীন বাক্যের ছড়াছড়ি। দেখা গেল ইতোমধ্যে ওয়াচ টাওয়ারের কয়েকটি লাইটও চুরি হয়ে গেছে। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে দেখতে পেয়ে কিছু মানুষ এগিয়ে এলেন। ছুটে আসা মানুষদের মধ্যে কয়েকজন জানালেন খুবই নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে ওয়াচ টাওয়ারটি তৈরি করা হয়েছে। ওয়াচ টাওয়ারে যে রেলিংগুলো ব্যবহার হয়েছে সেগুলো খুবই দুর্বল।
দর্শনার্থীদের মধ্যে সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘জলছবি’র প্রধান সমন্বয়ক সজল রহমান জানালেন, “কিশোরগঞ্জবাসীর দীর্ঘদিনের আশা- সুদৃশ্য ও দৃষ্টিনন্দনভাবে ওয়াচ টাওয়ারটি নির্মিত হলে এখানকার মানুষ পরিবার-পরিজন নিয়ে ভদ্র পরিবেশে ওয়াচ টাওয়ারের উপরে উঠে প্রাকৃতিক দৃশ্য অবলোকন করতে পারবে। কিন্তু এখন অশালীন পরিবেশের কারণে দর্শনার্থীরা হতাশ”।
গারো সম্প্রদায়ের নারী নেত্রী বেসরকারি প্রতিষ্ঠান পপি’র কর্মকর্তা দিয়া ক্লডিয়া নকরেক জানালেন, “ওয়াচ টাওয়ারটি আরও ২০ থেকে ৩০ ফুট উঁচু হওয়া উচিত ছিলো, তাহলে পুরো শহরের ভিউটা দেখা যেত”।
গুরুদয়াল সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের মাস্টার্স পরীক্ষার্থী শফিকুল ইসলাম জানালেন, “গভীর রাত অবধি এখানে অনেক ছেলেমেয়েকে আড্ডা দিতে দেখা যায়। কোনো অনাকাঙ্খিত ঘটনা বা দুর্ঘটনা ঘটলে এর দায়িত্ব কে নেবে।”
সচেতন নাগরিক কমিটির আহবায়ক, বিশিষ্ট আয়কর আইনজীবী সাইফুল হক মোল্লা দুলু বললেন, “শুরুতেই যে পরিবেশ এ অবস্থা চলতে থাকলে ভবিষ্যতে ভদ্র কেউ এখানে আসতে অনুৎসাহিত বোধ করবে। দেখার কেউ আছে বলে মনে হয় না”।
এ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বাবুর অভিমত, “ওয়াচ টাওয়ারটি নির্মাণ শেষে এটি কর্তৃপক্ষের কাছে- হতে পারে পৌরসভা- এর নিকট হন্তান্তর করা যেতে পারে। তারা একটি নির্দিষ্ট ফি- হতে পারে ৫ টাকা কিংবা ১০ টাকা- গ্রহণ সাপেক্ষে টাওয়ারে প্রবেশের অনুমতি প্রদান করবে। প্রাপ্ত অর্থ শহরের সৌন্দর্যবন্ধন ও উন্নয়নমূলক কাজে ব্যয় করা যেতে পারে।”
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ও উপ-সচিব তরফদার মো: আক্তার জামীল ওয়াচ টাওয়ারটির বর্তমান চিত্র দেখে এ সময় ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি তাৎক্ষণিক মুঠোফোনে নির্বাহী প্রকৌশলী, এলজিইডিকে সরেজমিনে ওয়াচ টাওয়ারটি পরিদর্শন করতে বলেন এবং সব কিছুকে একটি শৃঙ্খলার মধ্যে এনে উত্থাপিত সকল সমস্যার দ্রুত সমাধানের নির্দেশনা দেন।
মুক্তিযোদ্ধার কন্ঠ ডটকম/১০-০৫-২০১৭ইং/ অর্থ