মুক্তিযোদ্ধার কন্ঠ রিপোর্ট।।
“না না এ ঔষধ আর খাবনা,খেলে আমি মরে যাব” গত ১৩ মে শনিবার সকালে কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর উপজেলার পশ্চিম গোবরিয়া গ্রামের মুহাম্মদ কাইসার হামিদের ৫ বছরের শিশু পুত্র তাসিনকে জেসন ফার্মাসিউটিক্যালস্ লিঃ এর এ্যান্টিহিস্টামিন সিরাপ “হিস্টাসিন্” খাওয়ানোর সময় এমন করে কান্না কাটি করছিল। পরে ওই দিন দুপুরে গুরুতর অসুস্থ আবস্থায় তাকে কুলিয়ারচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে আরও উন্নত চিকিৎসার জন্য কিশোরগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালে প্রেরণ করেন। বর্তমানে শিশুটি কিশোরগঞ্জ আধুনিক সদর হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের ১ নং সিটে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায় , শিশু তাসিন ঠান্ডা জনিত রোগে আক্রান্ত হলে গত ১০ মে বিকেলে তার মা রোকেয়া আক্তার রীনা স্থানীয় লক্ষ্মীপুর বাজারস্থ রিতু মেডিকেল হল থেকে পল্লী চিকিৎসক মোঃ সিরাজুল ইসলামের নিকট থেকে জেসন ফার্মাসিউটিক্যালস্ লিঃ এর উৎপাদনকৃত ১০০ মিলি একটি এ্যান্টিহিস্টামিন ‘হিস্টাসিন্’ সিরাপ যাহার পেকেট ও বোতলের লেভেলে লিখা রয়েছে, বেইচ নং ১৫২, উৎপাদন তারিখ অক্টোবর – ১৬ ও মেয়াদ উত্তীর্ণ তারিখ অক্টোবর – ১৯ ক্রয় করে দু’দিন যাবৎ জোর পূর্বক রোজ সকাল – বিকাল ১ চামচ করে দু’বার ঔষধ খাওয়ানোর পর গত ১০ মে শনিবার সকালে ওই ঔষধ পুনরায় খাওয়ানোর সময় তাসিন কান্না কাটি করে বলে, না না এ ঔষধ আর খাবনা,খেলে আমি মরে যাব। এক পর্যায়ে শিশুটি তার মাকে বলে এ ঔষধ হাত কাটার ঔষধের মত । এ কথা শুনার সাথে সাথে শিশুটির মা ওই ঔষধ নিয়ে স্থানীয় লক্ষ্মীপুর বাজারস্থ বিভিন্ন ফার্মেসীতে নিয়ে যাছাই বাছাই করে যখন বুঝতে পারে বোতলের ভিতরে থাকা ঔষধ হিস্টাসিন্ সিরাপ নয় এতে ভেজাল ঔষধ রয়েছে, তখন দৌড়ে রিতু মেডিকেল হলে গিয়ে পুনরাই হিস্টাসিন্ লিখা কভারে ভরা ও লেভেল যুক্ত ইনটেক আরও একটি হিস্টাসিন সিরাপ ক্রয় করে এতেও একই রকম ঔষধ দেখতে পায়। ততক্ষনে শিশু তাসিনের শারীরিক অবস্থা অবনতি দেখা দিলে তাকে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় কুলিয়ারচর উপজেলা স্বাস্থ কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সংবাদ পেয়ে নারায়নগঞ্জ জোনের কিশোরগঞ্জ উত্তর ভৈরব এরিয়া ম্যানেজার আব্দুল আওয়াল ও ভৈরবের সিনিয়র রিপ্রেজেন্টেটিভ মোঃ মুক্তার হোসেন কম্পানীর পক্ষ থেকে শিশুটিকে দেখতে হাসপাতালে যান।
এ ব্যাপারে রিতু মেডিকেল হলের সত্ত্বাধিকারী পল্লী চিকিৎসক মোঃ সিরাজুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে ঐ হিস্টাসিন্ সিরাপ তাসিনের মায়ের নিকট সে বিক্রয় করেছে স্বীকার করে বলেন, জেসন ফার্মাসিউটিক্যালস্ লিঃ এর হিস্টাসিন্ পেকেট ও লেভেল যুক্ত ইনটেক কর্ক লাগানো ঔষধের বোতলের ভিতর কি ধরনের ঔষধ আছে বুঝার কোন কায়দা নেই। শিশুটি মা যখন ঔষধ দেখালো তখন অন্য বোতলের ঔষধ দেখে বুঝা গেল এতে হিস্টাসিন্ সিরাপ নয়, অন্য যে কোন ঔষধ হতে পারে।
এ ব্যাপারে জেসন ফার্মাসিউটিক্যালস্ লিঃ এর ময়মনসিংহ জোনের কিশোরগঞ্জ উত্তর এরিয়া ম্যানেজার আহম্মেদ আলীর সাথে যোগাযোগ করা হলে, এ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, সংবাদ পেয়ে শনিবার বিকেলে রিতু মেডিকেল হল থেকে তাদের কোম্পানীর উৎপাদকৃত ২টি হিস্টাসিন্ ১০০ মিলি বোতল, যাহার বেইচ নং ১৫২, উৎপাদন তারিখ অক্টোবর – ১৬ ও মেয়াদ উত্তীর্ণ তারিখ অক্টোবর – ১৯ জব্ধ করে পভিসেফ কালার ঔষধ দেখতে পেয়ে পরীক্ষার জন্য ঢাকা হেড অফিস প্রেরন করেন। তিনি আরও বলেন, ভুল বসত কম্পানীর উৎপাদনকৃত পভিসেফ ১০০ মিলি লিকুইড বোতলে হিস্টাসিন সিরাপের লেভেল লাগিয়ে পেকেট করে বাজরজাত করা হয়েছে। এ ঘটনার জন্য তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন।
এ রিপোট লেখা পর্যন্ত মামলার প্রক্রিয়া চলছে।
মুক্তিযোদ্ধার কন্ঠ ডটকম/১৪-০৫-২০১৭ইং/ অর্থ