মুক্তিযোদ্ধার কন্ঠ রিপোর্ট:
বনানীর রেইনট্রি হোটেলে দুই শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের মামলায় আপন জুয়েলার্সের মালিকের ছেলে সাফাত আহমেদের গাড়িচালক বিল্লাল হোসেন ও দেহরক্ষী রহমত আলীর বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত।
মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর হাকিম লস্কার সোহেল রানা রিমান্ডের আদেশ দেন। বিল্লালের ৪ দিন এবং রহমতের ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের উইমেন সাপোর্ট অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন ডিভিশনের (ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার) পরিদর্শক ইসমত আরা এমি আসামিদের ১০ দিন করে রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন।
রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, গত ২৮ মার্চ জন্মদিনের কথা বলে ওই দুই ছাত্রীকে বনানীর দ্য রেইন ট্রি হোটেলে নিয়ে যাওয়া হয়। জোরপূর্বক মদ পান করিয়ে তাদের রাতভর ধর্ষণ ও তা ভিডিও করা হয়। মামলার সুষ্ঠু তদন্ত এবং এজাহার নামীয় দুই নম্বর আসামি নাঈম আশরাফকে গ্রেপ্তারে আসামিদেরকে নিয়ে পুলিশি অভিযান পরিচালনা এবং মামলার সাথে সংশ্লিষ্ট ড্রাইভার বিল্লালের ধারণ করা ভিডিও উদ্ধারের লক্ষ্যে তাদের ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হোক।
রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবু, অতিরিক্ত পিপি তাপস কুমার পাল, বাদীর পক্ষে মহিলা আইনজীবী সমিতির আইনজীবী ফাহমিদা আক্তার রিংকি এবং রাজধানী মানবাধিকার সংস্থার আইনজীবী সৈয়দ নাজমুল হুদা রিমান্ড আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন।
অন্যদিকে আসামি রহমত আলীর পক্ষে অ্যাডভোকেট হেমায়েত উদ্দিন মোল্লা এবং বিল্লালের পক্ষে অ্যাডভোকেট মো. হানিফ মিয়া রনি রিমান্ড বাতিলপূর্বক জামিন আবেদন করেন।
শুনানি শেষে বিচারক রিমান্ডের আদেশ দেওয়ার পর আসামি রহমত আলী বিচারকের উদ্দেশে বলেন, ‘আমি সেনাবাহিনীতে চাকরি করতাম। সেনাবাহিনীর চাকরি শেষে দেহরক্ষীর চাকরি করছি। ওইখানে (সাফায়াতের সঙ্গে) আমি মাত্র দুই দিন কাজ করেছি। ঘটনার দিন আমি তো নিচে ছিলাম। উপরে কী হয়েছে আমি জানি না। ড্রাইভার ভিডিও করেছে কি না আমি জানি না। আমাকে রিমান্ডে পাঠাবেন না। আমার মায়ের বয়স ৯০ বছর। তিনি এ কথা শুনলে মারা যাবে। আগামী ১ মে আমার হাজী সেলিম সাহেবের দেহরক্ষী হিসেবে যোগদানের কথা। হাজী সেলিম সাহেবের নির্দেশে আমি সোমবার বনানী থানায় আত্মসমর্পণ করি।’
ওই সময় বিচারক বলেন, ‘আপনাকে তো কেউ মারবে না। শুধু জিজ্ঞাসাবাদ করবে। আপনি নির্দোষ হলে ন্যায়বিচার পাবেন।’
তবে পুলিশের দাবি রাজধানীর নবাবপুর রোডের ইব্রাহিম আবাসিক হোটেল থেকে সোমবার সন্ধ্যার পর বিল্লালকে এবং এর আধা ঘণ্টা পর দেহরক্ষী রহমতকে গুলশানের একটি পাঁচ তারকা হোটেলের সামনে থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। রহমতের কাছ থেকে একটি শটগান ও ১০ রাউন্ড গুলিও জব্দ করা হয়।
একই মামলায় সাফাত আহমেদ ৬ দিনের এবং সাদমান সাকিব ৫ দিনের রিমান্ডে রয়েছেন। মামলার অপর আসামি নাঈম আশরাফ ওরফে হাসান মোহাম্মদ হালিম এখনো পলাতক।
মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, গত ২৮ মার্চ রাত ৯টা থেকে পরদিন সকাল ১০টা পর্যন্ত আসামিরা মামলার বাদী এবং তার বান্ধবী ও বন্ধু শাহরিয়ারকে আটকে রাখে। অস্ত্র দেখিয়ে ভয়-ভীতি প্রদর্শন ও অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করে। বাদী ও তার বান্ধবীকে জোর করে একটি কক্ষে নিয়ে যায় আসামিরা। বাদীকে সাফাত আহমেদ একাধিকবার ও তার বান্ধবীকে নাঈম আশরাফ একাধিকবার ধর্ষণ করে। আসামি সাদমান সাকিফকে দুই বছর ধরে চেনেন মামলার বাদী। তার মাধ্যমেই ঘটনার ১০-১৫ দিন আগে সাফাতের সঙ্গে দুই ছাত্রীর পরিচয় হয়।
এজাহারে আরো বলা হয়েছে, ঘটনার দিন দুই ছাত্রী সাফাতের জন্মদিনের অনুষ্ঠানে যান। সাফাতের গাড়িচালক বিল্লাল ও দেহরক্ষী রহমত তাদের বনানীর ২৭ নম্বর রোডে দ্য রেইন ট্রি হোটেলে নিয়ে যায়। হোটেলে যাওয়ার আগে বাদী ও তার বান্ধবী জানতেন না যে, সেখানে পার্টি হবে। তাদের বলা হয়েছিল, এটা একটা বড় অনুষ্ঠান, অনেক লোকজন থাকবে। অনুষ্ঠান হবে হোটেলের ছাদে। সেখানে যাওয়ার পর তারা কোনো ভদ্রলোককে দেখেননি। সেখানে আরো দুই তরুণী ছিল। বাদী ও তার বান্ধবী দেখেন সাফাত ও নাঈম ওই দুই তরুণীকে ছাদ থেকে নিচে নিয়ে যাচ্ছিলেন। এই সময় বাদীর বন্ধু ও আরেক বান্ধবী ছাদে আসেন। পরিবেশ ভালো না লাগায় তারা চলে যেতে চান। এই সময় আসামিরা তাদের গাড়ির চাবি শাহরিয়ারের কাছ থেকে নিয়ে নেন। তাকে খুব মারধর করেন। ধর্ষণ করার সময় সাফাত গাড়িচালককে ভিডিওচিত্র ধারণ করতে বলেন। বাদীকে নাঈম আশরাফ মারধর করেন। পরে বাদী প্রতিবাদ করবেন বলে জানান।
এরপর বাদী ও বান্ধবীর বাসায় দেহরক্ষী রহমতকে পাঠানো হয় তথ্য সংগ্রহের জন্য। তারা এতে ভয় পেয়ে যান। লোকলজ্জার ভয় এবং মানসিক অসুস্থতা কাটিয়ে উঠে পরে আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে আলোচনা করে তারা মামলার সিদ্ধান্ত নেন। এ কারণে মামলা দায়ের করতে বিলম্ব হয়।