ঢাকা: আসন্ন রমজানের ঈদে ঘরমুখী যাত্রীদের সেবা প্রদানে বিআরটিসি’র নয়শত বাস প্রস্তুত থাকবে। এরমধ্যে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে যাত্রী সেবা দেবে ৪৬৬বাস। পাশাপাশি তাৎক্ষণিক পরিস্থিতি মোকাবিলায় মহাখালী, গাবতলী, যাত্রাবাড়ি ও সায়েদাবাদ টার্মিনালে পঞ্চাশটি বাসও প্রস্তুত থাকবে। এছাড়া যাত্রীসেবা প্রদানের বিষয়াদি তদারক করতে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলার কথা জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

বুধবার কমলাপুর বাস ডিপোতে বিআরটিসি’র শ্রমিক কর্মচারীদের বকেয়া বেতন ভাতা ও গ্র্যাচুইটির চেক বিতরণ এবং আসন্ন ঈদে বিআরটিসি’র সেবার মান বৃদ্ধি বিষয়ক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে সএসব কথা বলেন তিনি।

ভারতীয় ঋণ কর্মসূচীর আওতায় বিআরটিসি’র জন্য ছয়’শ বাস এবং পাঁচ’শ ট্রাক সংগ্রহের উদ্যোগ নেয়া কথা জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। নানা জটিলতায় বারবার পিছিয়ে যাচ্ছে। তবে আমরা আশা করছি আগামী ডিসেম্বর নাগাদ বাস ও ট্রাকের বহর ঢাকায় আসতে শুরু করবে। তখন পুরনো বাসগুলো তুলে দিয়ে নতুন বাস রাস্তায় নামানো হবে। নতুন নতুন রুটে বিআরটিসির বাস সার্ভিসও চালুর কথা জানান মন্ত্রী।

অনুষ্ঠানে মন্ত্রী বলেন, ঈদের সময় অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধে বিআরটিসি’র তিনটি মনিটরিং টিম নিয়মিত কাজ করবে। এছাড়া সড়কে যানবাহনের কোন প্রকার সমস্যা হলে তাৎক্ষণিকভাবে মেরামতের জন্য পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট চারটি কারিগরি টিম টাঙ্গাইল, বগুড়া, রংপুর এবং কাঁচপুর ব্রিজ এলাকায় স্ট্যান্ডবাই রাখা হবে।

এর আগে মন্ত্রী বিআরটিসি’র অবসরপ্রাপ্ত ২১ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর অনুকূলে পেনশন ও গ্র্যাচুইটির বকেয়া পাওনার চেক তুলে দেন।

জনগনের প্রত্যাশা অনুযায়ি বিআরটিসি সেবা দিতে পেরেছে কিনা এ নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে একথা উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিআরটিসি মানুষের কতটা প্রত্যাশা পূরণ করতে পেরেছে তা আত্ম বিশ্লেষনের সময় এসেছে। দীর্ঘকাল রাষ্ট্রীয় এই পরিবহন সংস্থাটি দুর্নামের ধারাবাহিকতার মধ্যে ছিল। সুনাম ফেরাতে শেখ হাসিনার সরকারের প্রয়াসের সফলতা বিভিউ করার সময় এসেছে। বিআরটিসির এক পরিচালকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে মন্ত্রী বলেন, প্রতিষ্ঠানের যাত্রী সেবা, গাড়ির ভেতরের পরিবেশ, এসি ও ফেন চলছে কিনা, আসন ঠিক আছে কিনা তা নিশ্চিত করবেন। কারণ আপনার পদে আগে যারা দায়িত্ব পালন করেছেন তাদের সঠিক দায়িত্ব পালনের দৃষ্টান্ত কম।

বিআরটিসির সবকিছু ঠিক আছে কিনা তা দেখতে আমি সাংবাদিকদের নিয়ে মাঝে মাঝে রাস্তায় নামব একথা জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, গাড়ির সবকিছু ঠিক রাখতে সিরিয়াসলি নজর দিন। ভিজিটে গলদ পেলে নিয়ম অনুযায়ি আপনার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বিআরটিসির ডিপো ম্যানেজারদের কথা উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ডিপো ম্যানেজারদের কারো কারো বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ আসে এতে আমি লজ্জ্যা পাই। তিনি প্রশ্ন করে বলেন, কত টাকা আপনাদের দরকার। জনগণের ট্যাক্সের টাকা দিয়ে কেউ ছিনিমিনি খেলবেন না। কেউ কেউ সীমা লংঘন করেছেন। এখনও করে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, আমি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হবার পরও কোথাও আমান নজর কমেনি। আমি রাস্তার মন্ত্রী। রাস্তায় যাই। মানুষের কাছ থেকে অনেক অভিযোগ আসে। সবকিছু যে সঠিক তাও নয়, আবার সবকিছু মিথ্যা তাও নয়। তবে অভিযোগ পেলে তদন্ত করে সত্য প্রমাণিত হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেই। আপনারা ভাববেন না আমি কোন খবর রাখি না।

বিআরটিসিকে সুনামের ধারায় ফিরিয়ে আনার আহ্বান জানিয়ে কাদের বলেন, এই প্রতিষ্ঠানকে সুনামের ধারায় ফিরিয়ে আনার দায়িত্ব আপনাদের। দুর্নীতি আর অনিয়ম থেকে মুক্ত করুন। আমরা জনবল সংকট সমাধানে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। তিনি বলেন, বিআরটিসির জন্য সরকার দিয়ে যাবে, অথচ কিছু পাবে না এটা হতে পারে না। দিনের পর দিন সরকার এই খাতে লোকসান গুনবে এটা কি উচিত? বিআরটিসির কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, একযোগে কাজ করে বিআরটিসিকে লাভবান করুন। এতে আপনারাও লাভবান হবেন। এই প্রতিষ্ঠান দ্রুত রাজস্ব খাতে যাবে।

নিজের সন্তানের মত গাড়ির যত্ন নিতে চালকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ত্রুটিযুক্ত বিআরটিসির গাড়ি রাস্তায় দেখতে চাই না। তিনি বলেন, বিআরটিসির ট্রাকের চাহিদা খুব বেশি থাকলেও এখন কয়টা রাস্তায় চলছে তা কে জানে। আসন্ন ঈদে সার্বিক প্রস্তুতি প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, ঈদের সময় যা যা করণীয় এ বিষয়ে ইতোমধ্যে সার্কুলার জারি করা হয়েছে। যানজটপ্রবণ এলাকাগুলোতে প্রতি বছরের মতো এবারও নিয়মিত আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি আনসার মোতায়েন করা হবে।

ঈদের এক সপ্তাহ আগে বিআরটিসি বাসের অগ্রিম টিকেট বিক্রির কথা জানিয়ে সড়ক পরিবহন মন্ত্রী বলেন, ২২জুন থেকে ঈদের স্পেশাল সার্ভিস শুরু হবে। যা ঈদের তিনদিন পর পর্যন্ত চলবে। এরমধ্যে ৩০০বাস মেরামত করা হয়েছে। তিনি বলেন, সরকারী ভাড়ার বেশি যাত্রীদের থেকে আদায় করা যাবে না। বিআরটিসির সকল কাউন্টারে ভাড়ার তালিকা টানিয়ে রাখতে হবে। কোন বাসে বেশি ভাড়া নিলে সংশ্লিষ্ট ডিপো ম্যানেজারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথাও জানান মন্ত্রী।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, নির্বাচন কমিশনের করা নির্বাচনী রোডম্যাপকে আমরা ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখি। তিনি বলেন, আগাম নির্বাচনের কোন সম্ভাবনা নেই। সংবিধান অনুযায়ি যথাসময়ে নির্বাচন হবে।

সভাপতির বক্তব্যে বিআরটিসি’র চেয়ারম্যান মো. মিজানুর রহমান বিআরটিসিকে দ্রুত রাজস্ব খাতে নেয়ার দাবি জানান। তিনি বলেন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে গাড়ি চালালে ঋণ করে আমাদের বেতন দিতে হবে না। ব্যক্তিগত লাভের চিন্তা বাদ দিয়ে সংস্থার স্বার্থে কাজ করতে সকলের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন, বিআরটিসি শ্রমিক কর্মচারী লীগের সাধারণ সম্পাদক হারুনুল রশীদ।