মুক্তিযোদ্ধার কন্ঠ রিপোর্টঃ
কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরে জেসন ফার্মাসিউটিক্যালস্ লিঃ এর ভেজাল হিস্টাসিন্ সিরাপ পানে অসুস্থ ৫ বছরের শিশু তাসিন এখনো সুস্থ হয়নি । এ ঘটনার পর জেসন ফার্মাসিউটিক্যালস্ লিঃ এর ঔষুধ নিয়ে এলাকার সাধারন মানুষের মাঝে দেখা দিয়েছে আতঙ্ক। জীবন রক্ষাকারী হিস্টাসিন্ সিরাপ পানে শিশু তাসিন মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসলেও তার শরীরে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেওয়ায় সাধারন মানুষের মনে প্রশ্ন জাগছে ওই ঔষুধ কোম্পানীর অন্যান্য ঔষুধে ও ভেজাল আছে কিনা।
জানাযায়, গত ১৩ মে শনিবার সকালে কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর উপজেলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি ও দৈনিক নয়াদিগন্ত পত্রিকার কুলিয়ারচর (কিশোরগঞ্জ) সংবাদাতা উপজেলার পশ্চিম গোবরিয়া গ্রামের মুহাম্মদ কাইসার হামিদের ৫ বছরের শিশু পুত্র তাসিনকে জেসন ফার্মাসিউটিক্যালস্ লিঃ এর এ্যান্টিহিস্টামিন সিরাপ “হিস্টাসিন্” খাওয়ানোর পর ওই দিন দুপুরে গুরুত্বর অসুস্থ অবস্থায় তাকে কুলিয়ারচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে আরও উন্নত চিকিৎসার জন্য ২৫০ সয্যা জেনারেল হাসপাতাল কিশোরগঞ্জে প্রেরণ করেন। ১৪ মে রোববার শিশু তাসিনকে ২৫০ সয্যা জেনারেল হাসপাতাল কিশোরগঞ্জ এর শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায় , শিশু তাসিন ঠান্ডা জনিত রোগে আক্রান্ত হলে গত ১০ মে বিকেলে তার মা রোকেয়া আক্তার রীনা স্থানীয় লক্ষ্মীপুর বাজারস্থ রিতু মেডিকেল হলে গিয়ে পল্লী চিকিৎসক মোঃ সিরাজুল ইসলামের নিকট থেকে জেসন ফার্মাসিউটিক্যালস্ লিঃ এর উৎপাদনকৃত ১০০ মিলি একটি এ্যান্টিহিস্টামিন ‘হিস্টাসিন্’ সিরাপ যাহার পেকেট ও বোতলের লেভেলে লিখা রয়েছে, বেইজ নং ১৫২, উৎপাদন তারিখ অক্টোবর – ১৬ ও মেয়াদ উত্তীর্ণ তারিখ অক্টোবর – ১৯ ক্রয় করে দু’দিন যাবৎ জোর পূর্বক রোজ সকাল – বিকাল ১ চামচ করে দু’বার ঔষুধ খাওয়ানোর পর গত ১৩ মে শনিবার সকালে ওই ঔষুধ পুনরায় খাওয়ানোর সময় তাসিন কান্না কাটি করে বলে, না না এ ঔষুধ আর খাবনা,খেলে আমি মরে যাব। এক পর্যায়ে শিশু তাসিন তার মাকে বলে এ ঔষুধ হাত কাটার ঔষুধের মত। এ কথা শুনার সাথে সাথে শিশুটির মা ওই ঔষুধ নিয়ে স্থানীয় লক্ষ্মীপুর বাজারস্থ বিভিন্ন ফার্মেসীতে নিয়ে যাছাই বাছাই করে যখন বুঝতে পারে বোতলের ভিতরে থাকা ঔষুধ হিস্টাসিন্ সিরাপ নয় এতে ভেজাল ঔষুধ রয়েছে, তখন দৌড়ে রিতু মেডিকেল হলে গিয়ে পুনরাই হিস্টাসিন্ লিখা কভারে ভরা ও লেভেল যুক্ত ইনটেক আরও একটি হিস্টাসিন্ সিরাপ ক্রয় করে এতেও একই রকম ঔষুধ দেখতে পায়। ততক্ষনে শিশু তাসিনের শারীরিক অবস্থার অবনতি দেখা দিলে তাকে গুরুত্বর অসুস্থ অবস্থায় কুলিয়ারচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়।
এ ব্যাপারে রিতু মেডিকেল হলের সত্ত্বাধিকারী পল্লী চিকিৎসক মোঃ সিরাজুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে ঐ হিস্টাসিন্ সিরাপ তাসিনের মায়ের নিকট সে বিক্রয় করেছে স্বীকার করে বলেন, জেসন ফার্মাসিউটিক্যালস্ লিঃ এর হিস্টাসিন্ পেকেট ও লেভেল যুক্ত ইনটেক কর্ক লাগানো ঔষুধের বোতলের ভিতর কি ধরনের ঔষুধ আছে বুঝার কোন কায়দা নেই। শিশুটির মা যখন ঔষুধ দেখালো তখন অন্য বোতলের ঔষুধ দেখে বুঝা গেল এতে হিস্টাসিন্ সিরাপ নয়, অন্য যে কোন ঔষুধ হতে পারে।
এ ব্যাপারে জেসন ফার্মাসিউটিক্যালস্ লিঃ এর ময়মনসিংহ জোনের কিশোরগঞ্জ উত্তর এরিয়া ম্যানেজার আহম্মেদ আলীর সাথে যোগাযোগ করা হলে, এ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, সংবাদ পেয়ে গত ১৩ মে শনিবার বিকেলে রিতু মেডিকেল হল থেকে তাদের কোম্পানীর উৎপাদকৃত ২টি হিস্টাসিন্ ১০০ মিলি বোতল, যাহার বেইজ নং ১৫২, উৎপাদন তারিখ অক্টোবর – ১৬ ও মেয়াদ উত্তীর্ণ তারিখ অক্টোবর – ১৯ জব্ধ করে পভিসেফ কালার ঔষুধ দেখতে পেয়ে পরীক্ষার জন্য ঢাকা হেড অফিস প্রেরন করা হয়। তিনি আরও বলেন, ভুল বসত কোম্পানীর উৎপাদনকৃত পভিসেফ ১০০ মিলি লিকুইড বোতলে হিস্টাসিন সিরাপের লেভেল লাগিয়ে পেকেট করে বাজরজাত করা হয়েছে। এ ঘটনার জন্য তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন।
এ ঘটনা দৈনিক নয়াদিগন্ত, দৈনিক দিনকাল, দৈনিক বর্তমান, দৈনিক গৃহকোণ, সাপ্তাহিক দিনেরগান, অনলাইন নিউজ পোর্টাল মুক্তিযোদ্ধার কন্ঠ ডটকম ও দৈনিক প্রজন্ম ডটকম সহ বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর কিশোরগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন শিশু তাসিনের খোঁজ খবর নেন এবং কিশোরগঞ্জ জেলা ড্রাগ সুপার মোছাঃ ফুয়ারা ইয়াসমিন এলাকায় সরেজমিন তদন্ত সহ সেন্ট্রাল হাসপাতাল ভৈরব- এ গিয়ে শিশু তাসিনের খোঁজ খবর নেন এবং সরকারী ভাবে মামলা করার আশ্বাস দিয়ে শিশু তাসিনের বাবার নিকট থেকে অর্ধেক বোতল ভেজাল হিস্টাসিন্ সিরাপ জব্দ করে নিয়ে জান। এসময় জেসন ফার্মাসিউটিক্যালস্ লিঃ এর সহকারী ম্যানেজার রেগুলেটরি এফেয়ার্স সৈয়দ বজলুল করিব, সহকারী সেলস্ ম্যানেজার কাজী রেজাউল আলম, নারায়নগঞ্জ জোনের সহকারী সেলস্ ম্যানেজার মোঃ ফরিদ, নারায়নগঞ্জ জোনের কিশোরগঞ্জ উত্তর ভৈরব এরিয়া ম্যানেজার আব্দুল আওয়াল ও ভৈরবের সিনিয়র রিপ্রেজেন্টেটিভ মোঃ মুক্তার হোসেন, সেন্ট্রাল হাসপাতাল ভৈরব এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডাঃ মোঃ মিজানুর রহমান কবির, ভৈরব ঔষুধ ব্যবসায়ী সমিতির সাধারন সম্পাদক মোঃ আকরাম হোসেন চৌধুরী ও শিশু তাসিনের মা রোকেয়া আক্তার রীনা উপস্থিত ছিলেন। জব্দ তালিকায় লক্ষীপুুর বাজারস্থ মেডিসির কর্ণার এর সত্বাধিকারী ডাঃ নাদিম হায়দার কামাল ও মায়া মেডিকেল হল এর প্রোঃ মোঃ বিল্লাল হোসেনের স্বাক্ষর নেন।
শিশু তাসিনের মা রোকেয়া আক্তার রীনা অভিযোগ করে বলেন, কিশোরগঞ্জ জেলা ড্রাগ সুপার মোছাঃ ফুয়ারা ইয়াসমিন সরকারী ভাবে মামলা করার আশ্বাস দিলেও এখন পর্যন্ত রহস্য জনক কারনে কোন মামলা না করায় হতাশায় ভোগছেন শিশু তাসিনের পরিবার সহ এলকাবাসী।
অপরদিকে শিশু তাসিনের পিতা মুহম্মদ কাইসার হামিদ অভিযোগ করে বলেন, জেসন ফার্মাসিউটিক্যালস্ লিঃ এর সহকারী ম্যানেজার রেগুলেটরি এফেয়ার্স সৈয়দ বজলুল করিব, সহকারী সেলস্ ম্যানেজার কাজী রেজাউল আলম, নারায়নগঞ্জ জোনের সহকারী সেলস্ ম্যানেজার মোঃ ফরিদ , ময়মনসিংহ জোনের সিনিয়র রিজিওনাল ম্যানেজার একেএম বদরুর আলম, কিশোরগঞ্জ জেলা ফিল্ট এক্সিকিউটিভ মোঃ হুমায়ুন করিব, ময়মনসিংহ জোনের কিশোরগঞ্জ উত্তর এরিয়া ম্যানেজার আহম্মেদ আলী , নারায়নগঞ্জ জোনের কিশোরগঞ্জ দক্ষিন ভৈবর এরিয়া ম্যানেজার মোঃ আব্দুল আওয়াল ও সিনিয়র রিপ্রেজেন্টেটিভ মোঃ মুক্তার হোসেন তাকে মোবাইল ফোনে ও প্রকাশ্যে মামলা না কারার জান্য বিভিন্ন প্রকার হুমকি প্রদর্শন করে আসছে।
কিশোরগঞ্জ জেলা ড্রাগ সুপার মোছাঃ ফুয়ারা ইয়াসমিনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে বলেন, উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়া আমার দ্বারা মামলা করা সম্ভব হচ্ছে না। অনুমোদন পেলে মামলা দায়ের করা হবে।
মুক্তিযোদ্ধার কন্ঠ ডটকম/২৮-০৫-২০১৭ইং/ অর্থ