muktijoddhar kantho logo l o a d i n g

কিশোরগঞ্জ সদর

এডিসি জামীলের কাজের স্বীকৃতি পাচ্ছে কিশোরগঞ্জ জেলা

মুক্তিযোদ্ধার কন্ঠ রিপোর্ট ।। 

এডিসি জেনারেলের কাজের স্বীকৃতি পেতে যাচ্ছে কিশোরগঞ্জ জেলা। আগামীকাল ৩১ মে বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস। এ দিবস উপলক্ষে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় বাংলাদেশে তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে প্রশংসনীয় অবদান রাখার জন্য কিশোরগঞ্জ জেলা তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়ন টাস্কফোর্স কমিটিকে “বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস সম্মাননা ২০১৭” প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আগামীকাল ৩১ মে ২০১৭ বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবসে ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ৬৪ টি জেলার মধ্যে কিশোরগঞ্জ জেলাকে এ বছর পুরস্কার প্রদান করা হবে। জেলা তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়ন টাস্কফোর্স কমিটির সভাপতি হিসেবে কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক জনাব মো: আজিমুদ্দিন বিশ্বাস এ পুরস্কার গ্রহণ করবেন। মূলত: কিশোরগঞ্জ জেলার এ প্রশংসনীয় অর্জনের পেছনে যার অবদান অনস্বীকার্য তিনি কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ও উপ-সচিব তরফদার মো: আক্তার জামীল। কিশোরগঞ্জ জেলায় যোগদানের পর হতেই তিনি ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন এর উপর বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করে এ আইন বাস্তবায়নে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখেন।

মূলত: ২০০৯ সাল থেকে তরফদার মো: আক্তার জামীল ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন এর উপর মাঠ পর্যায়ে কাজ করে চলেছেন। সে সময় তিনি ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন স্থানে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেন। বিশেষ করে পাবলিক প্লেসে ধূমপান করা, সিগারেটের বিজ্ঞাপন প্রচারের দায়ে তিনি একাধিক মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেন। বস্তুত: তিনি এমন এক সময়ে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন এর উপর মোবাইল কোর্ট পরিচালনা শুরু করেন যখন নির্বাহী ম্যজিস্ট্রেটগণ বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে ভেজাল নিরোধে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করতেন এবং ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০০৫ এ জরিমানার পরিমাণ (পারলিক প্লেসে ধূমপান এর জন্য ৫০ টাকা, বিজ্ঞাপন প্রচারের দায়ে ১০০০ টাকা) কম থাকায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করতে ততটা উৎসাহ দেখাতেন না। কিন্তু তরফদার মো: আক্তার জামীল সে সময়ে সমাজের প্রতি দায়িত্ববোধ থেকে যথেষ্ট পারঙ্গমতার সাথে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেন যা তখন প্রথম আলোসহ জাতীয় বেশ কয়েকটি দৈনিকে প্রকাশিত হয়।

তিনি ঢাকা মহানগরীর পুরানা পল্টন, স্বামীবাগ, মালিবাগ, কাকরাইল, রমনা, মগবাজার, বড় মগবাজার, হাটখোলা, সদরঘাট, সাত মসজিদ রোড, তোপখানা, নয়া পল্টন, শান্তিনগরসহ বিভিন্ন স্থানে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০০৫ এর উপর মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেন। সে সময় তার সাথে তামাক বিরোধী জোট বিশেষ করে ডব্লিউবিবি ট্রাস্ট, আহছানিয়া মিশন, সারডা সোসাইটিসহ বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকতেন। এরই ধাারাবাহিকতায় তিনি যখন ২০১১ সালে নওগাঁ জেলার পত্নীতলা উপজেলার উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে যোগ দেন, সে সময় ও তিনি ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০০৫ এর উপর একাধিক মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেন।

পরবর্তীতে গত ২০১৫ সালের ০২ সেপ্টেম্বর তিনি কিশোরগঞ্জ জেলায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক হিসেবে যোগ দেন। তখন থেকে অদ্যাবধি তিনি কিশোরগঞ্জ জেলায় ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন বাস্তবায়নে নিজ উদ্যোগে কাজ করে চলেছেন। একদিকে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) হিসেবে বিভিন্ন সভা-সেমিনার-উঠান বৈঠকে-মসজিদে জুমআর নামাজের খুতবায় যেমন তিনি ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার এর কুফল সম্পর্কে প্রতিনিয়ত প্রচারণা চালিয়ে আসছেন তেমনি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে কিশোরগঞ্জ জেলায় তিনি অসংখ্য মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেছেন।

অনুমোদনহীন বিদেশী সিগারেট বিক্রয়, পাবলিক প্লেসে ধূমপান, বিজ্ঞাপন প্রচার, সচিত্র সতর্কবাণী ছাড়া সিগারেট বিক্রয় ইত্যাদি কারণে তিনি এসব মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেন। এছাড়া সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন অফিস, হাসপাতাল, পাসপোর্ট অফিস, শহরের সবগুলো শপিং মল ও ক্লিনিক, বাস ও রেল স্টেশন, বেসরকারি পার্কসহ অসংখ্য প্রতিষ্ঠানে ধূমপানমুক্ত সতর্কীকরণ নোটিশ স্থাপনের মাধ্যমে তিনি সেগুলো ধূমপানমুক্ত ঘোষণা করেছেন। কিশোরগঞ্জ জেলাতে তিনি ধূমপান বিরোধী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছেন। ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) (সংশোধনী), আইন, ২০১৩ এর আওতায় গত ০৫.০১.২০১৬ হতে ২৪.০১.২০১৭ তারিখ পর্যন্ত তিনি কিশোরগঞ্জ জেলায় ২৮ দিন মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেছেন।

এসময় মামলার সংখ্যা ২১৫ টি এবং মোবাইল কোর্ট এর জরিমানার পরিমাণ ৭,০৪,১৪৬ টাকা। নিজ উদ্যোগে সতর্কীকরণ নোটিশ স্থাপনের মাধ্যমে নিরালা টাওয়ার, চৌধুরী প্লাজা, নিরালা কমপ্লেক্স, ভূইয়া সুপার মার্কেট, ঈশা খাঁ শপিং কমপ্লেক্স, আনোয়ারা সুপার মার্কেট, মাধবী প্লাজা, শাসসুদ্দিন ভূইয়া প্লাজা ,ক্যাডেট ইকবাল প্লাজা, রাহমানী প্লাজা, নাহার প্লাজা, এম এম শপিং কমপ্লেক্স, কৈরী টাওয়ার, ইসলামিয়া সুপার মার্কেটসহ কমপক্ষে ১৪ টি ১৪ টি শপিং মল ধূমপানমুক্ত ঘোষণা করেছেন। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন অফিস/প্রতিষ্ঠান এর মধ্যে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট সদর হাসপাতাল,আ লিক পাসপোর্ট অফিস,কিশোরগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড, কিশোরগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশনকে তিনি ধূমপানমুক্ত ঘোষণা করেছেন। নিজ উদ্যোগে বেসরকারি ক্লিনিক ডিজি ল্যাব,সিটি ল্যাব হেলথ কেয়ার সেন্টার, কিশোরগঞ্জ ক্লিনিক, ঈশা খাঁ ক্লিনিকসহ বেশ কয়েকটি ক্লিনিককে তিনি ধূমপানমুক্ত ঘোষণা করেছেন। যাতায়াত, অনন্যাসহ বিভিন্ন পাবলিক পরিবহনে ধূমপানবিরোধী স্টিকার স্থাপন করেছেন। প্রচারণামূলক কার্যক্রম এর অংশ হিসেবে কটিয়াদি, বাজিতপুর এবং তাড়াইল উপজেলার কয়েকটি গ্রামে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ)(সংশোধনী), আইন, ২০১৩ এর উপর নিজ উদ্যোগে কয়েকটি উঠান বৈঠক এর ব্যবস্থা করেছেন এবং স্থানীয় জনগণ তথা প্রান্তিক মানুষকে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্যের কুফল সম্পর্কে অবহিত করেছেন। আলহাজ তাজমহল খান উচ্চ বিদ্যালয়, কামালিয়ার চর উচ্চ বিদ্যালয়, পরশমনি সুলতানা সৈয়দ হাবিবুল হক স্কুলসহ বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র-ছাত্রীদের উদ্দেশ্যে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্যের কুফল, মাদক বাল্যবিবাহ ও জঙ্গীবাদ নিয়ে আলোচনা করেছেন তিনি। বৌলাই সাহেব বাড়ী জামে মসজিদ, চর শোলাকিয়া বাগপাড়া জামে মসজিদ, পশ্চিম হারুয়া বায়তুস সালাম জামে মসজিদ, কাটাবাড়িয়া ডাওকিয়া জামে মসজিদসহ অনেকগুলো মসজিদে জুমার খুতবায় বাল্যবিবাহ নিরোধের উপর আলোচনা করতে যেয়ে একই সাথে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্যের কুফল সম্পর্কে তিনি বক্তব্য রেখেছেন। এছাড়া বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষকে নিয়ে তাড়াইল উপজেলা মিলনায়তনে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ)(সংশোধনী), আইন, ২০১৩ এর উপর মতবিনিময় সভা করেছেন।

কিশোরগঞ্জ জেলা পুরস্কার পেতে যাচ্ছে এ বিষয়ে তার কাছে অনুভূতি জানতে চাওয়া হলে এডিসি জেনারেল তরফদার মো: আক্তার জামীল বলেন, এ বছর সরকার কিশোরগঞ্জ জেলাকে বেছে নেওয়ায় তিনি অত্যন্ত আনন্দিত। আশা করি ভবিষ্যতেও এ জেলা বিভিন্ন ক্ষেত্রে আরও সাফল্য অর্জন করবে। তিনি তার কাজের পেছনে জেলা প্রশাসক জনাব মো: আজিমুদ্দিন বিশ্বাসের প্রেরণার কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন জেলা প্রশাসক মহোদয়ের নির্দেশনায় তিনি সকল কাজ সম্পাদন করেছেন।
 

মুক্তিযোদ্ধার কন্ঠ ডটকম/৩০-০৫-২০১৭ইং/ অর্থ 

Tags: