মৌমিতা তাসরিন, কিশোরগঞ্জঃ
মো: নিজাম সরকার। একাধারে গীতিকার, সুরকার ও কন্ঠশিল্পী। বয়স ৫২ বছর। জন্মসূত্রে বাড়ি নেত্রকোণা হলেও গত ২২ বছর ধরে স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে বসবাস করছেন শ্বশুর বাড়ি কিশোরগঞ্জ শহরের নগুয়া এলাকায়। একদিকে গান রচনা করে এবং তাতে সুরারোপ করে যেমন তিনি সুখ্যাতি অর্জন করেছেন তেমনি বেশ কিছু কালজয়ী গানে কন্ঠ দিয়ে তিনি মন ভরিয়েছেন কিশোরগঞ্জের সংস্কৃতি প্রেমীদের। দেশাত্মবোধক গান, আধুুনিক গান, ফোক সঙ্গীত, হামদ, নাথসহ বিভিন্ন ধরণের প্রায় ৪০০ এর মতো গান রচনা করেছেন তিনি। একই সাথে নিজের রচিত এ সকল গানে সুরারোপ করে কন্ঠও দিয়েছেন। “মুজিব তুমি ছিলে বিশ্বাসে অটল”, “আমার এ জীবন থেকে ঝরে যাবে দিন”, “তুমি কি দোষে গিয়াছো বন্ধুরে”, “ওরে ভাই সুবল, কেমন আছে রাধা বল”, “আমার আগুন জ্বলে মনে”, “বাঁশির সুরে মনোহরে শুনিব সে নিরালা”, “রহম করো আল্লাহ তুমি আমার এ ঘোর নিদানে”, “জিকিরে আমাদের দূর করে দাও মনের এ কালিমা আল্লাহ”, “ধন্য ধন্য বলি ধন্য মা আমিনার কোল, শান্তির বাণী নিয়ে এলেন মোহাম্মদ রাসুল”- এরকম অসংখ্য কালজয়ী গানের স্রষ্টা তিনি।
বাবা আলী হোসেন সরকার ছিলেন বিখ্যাত বাউল শিল্পী, মা সায়েদুন্নেছা সরকারও ছিলেন গীতিকার ও সুরকার। গানের প্রতি তার গভীর অনুরাগ তিনি মা-বাবার কাছ থেকেই পেয়েছিলেন। তাই অন্য কোন পেশায় না যেয়ে গানই নিয়ে থেকেছেন সারাটি জীবন। একসময় শিক্ষকতা করেছেন ঢাকার রোমান্স ললিতকলা একাডেমী রামপুরা শাখায়। বাড়িতে বাড়িতে যেয়েও তিনি গানের শিক্ষকতা করেছেন। তবুও অন্য পেশায় যাননি। কিন্তু মহান এ শিল্পীর শরীরে সম্প্রতি অসুখ বাসা বেঁধেছে। তার দু’টি কিডনিই হয়ে পড়েছে বিকল। খুব শীঘ্রই কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্ট না করলে তাকে বাঁচানো সম্ভব হবে না। ক্রমশই দুর্বল হয়ে পড়ছে তার শরীর। এখন আর আগের মতো একাডেমিতে যেয়ে বা বাড়িতে বাড়িতে যেয়ে গান শেখাতে পারেন না। মেয়ে জেবুন্নেছা সরকার নিঝুম গুরুদয়াল সরকারি কলেজে প্রাণীবিদ্যা বিভাগে অনার্স ১ম বর্ষে এবং ছেলে মুকিতুর রহমান নীরব নরসিংদীতে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং এ অধ্যয়নরত। তার অবর্তমানে ছেলে-মেয়েদের ভবিষ্যৎ নিয়ে তিনি ভীষণ শঙ্কিত।
বিষয়টি জানতে পেরে কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ও উপসচিব তরফদার মো: আক্তার জামীল আজ ছুটে গিয়েছিলেন নিজাম সরকার এর নগুয়াস্থ শ্বশুর বাড়িতে। তার সাথে এ সময় ছিলেন কিশোরগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল মালেক চৌধুরী, মাই টিভির জেলা প্রতিনিধি ও বিটিভির সহযোগী সাংবাদিক আবদুল্লাহ আল মামুন পলাশ, বাংলা টিভির জেলা প্রতিনিধি আবু রায়হান রিপন, দৈনিক আমার বাংলাদেশের নির্বাহী সম্পাদক এ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বাবু, হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ট্রাস্টি রিপন রায় লিপু, অনলাইন নিউজ পোর্টাল মুক্তিযোদ্ধার কন্ঠের ভ্রাম্যমান প্রতিনিধি রাজিবুল হক সিদ্দিকী রকিসহ অন্যান্যরা।
এ সময় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ও উপসচিব তরফদার মো: আক্তার জামীল জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শিল্পী নিজাম সরকারের চিকিৎসার্থে সম্ভাব্য সকল প্রকার সহযোগিতার আশ্বাস দেন। একই সাথে তিনি বলেন “সুখ পেলাম দু’এক কেজি, দু:খ পেলাম হাজার টন” গানের শিল্পী নিজাম সরকার হাজার টন দু:খ নিয়ে এ পৃথিবী ত্যাগ করতে পারেন না। তিনি এ গুণী শিল্পীর জীবন রক্ষার্থে সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহবান জানান।
মুক্তিযোদ্ধার কণ্ঠ ডটকম/১২-০৬-২০১৭ইং/ অর্থ