আমিনুল হক সাদী, নিজস্ব প্রতিবেদক:
মাত্র ২২ মাসেই পবিত্র কোরআনুল কারীমের হাফেজ হয়েছে শাহ আলম। এই বছরে সে কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার মহিনন্দ ইউনিয়নের নয়াপাড়া জামে মসজিদে তারাবীহর নামাজু পড়াচ্ছেন।
জানা গেছে ময়মসসিংহের নান্দাইল উপজেলার হাটশিরা গ্রামের কাজল মিয়া ও নাজমা খাতুনের পরিবারে শাহ আলম জন্ম গ্রহন করেন। প্রথমে সে স্থানীয় সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেনী পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। কিন্ত তার কাছে স্কুলের পড়ায় মনপোত হচ্ছিল না । তাই নিজ উদ্যেগেই মহিনন্দ মিছবাহুল উলুম মাদরাসার হেফজখানায় ভর্তি হয়। সে মাদরাসা থেকেই ২০১৪ সালে হেফজ সম্পন্ন করে। গেল বছরে তাঁর শুনানীও হয়েছে। হেফজ সম্পন্ন করায় মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাও.আশরাফ আলী তাঁকে পাগড়ীও প্রদান করে।
তিনি জানান, হাফেজ শাহ আলম হেফজ পড়া অবস্থায় ভাস্করখিলার নতুন মসজিদে প্রথম বছরে পাঁচদিন পরের বছরে আরও কিছুদিন করে তারাবীহ নামাজ পড়ায়। বিষয়টি জানতে পেড়ে নয়াপাড়া জামে মসজিদ কমিটির লোকজন শাহ আলমকে তারাবীহ নামাজ পড়াতে বলেন। রমজানুল মোবারকের প্রথম দিন থেকেই সে এখন নিয়মিত মধুর কন্ঠে তারাবীহর নামাজ পড়াচ্ছেন।
স্থানীয় মুসুল্লী মোস্তাকিম বলেন, এই ছোট্ট হুজুরের পেছনে নামাজ পড়ে আমরা খুবই তৃপ্তি পাই। অল্প বয়সে সুন্দর করে তেলাওয়াত সবাইকে মুগ্ধ করে।
এছাড়াও এ মসজিদে জুবায়ের নামে আরও একজন হাফেজে কোরআন নামাজপড়াচ্ছেন বলে মুসুল্লীরা জানিয়েছেন।
ছোট্ট হাফেজে কোরআন শাহ আলম জানান,মহান পবিত্র গ্রন্থ কোরআনুল কারীমের হাফেজ হতে পেরে সে খুবই গর্বিত। তাঁর ইচ্ছা রয়েছে মাও.তাকী ওসমানীর মাদরাসায় অথবা মদীনা ইউনিভার্সিটিতে পড়ালেখা করার। বড় হয়ে কোরআনের খাদেম হয়ে বাকী জীবন যেন পরিচালিত করতে পারে সে প্রত্যাশা সবার কাছে।
নয়াপাড়া জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব মাও.হোসাইন আহমেদ হাদীসের উদৃতি দিয়ে বলেন, হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, (কিয়ামতের দিন) হাফেজে কোরআনকে বলা হবে :পড় এবং আরোহণ কর! তেলাওয়াত কর যেভাবে দুনিয়াতে তেলাওয়াত করতে! নিশ্চয় সেটাই হবে তোমার স্থান, যেখানে তোমার পড়া থেমে যাবে।
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি কোরআন পড়ে এবং সে অনুযায়ী আমল করে, কিয়ামতের দিন তার পিতামাতার মাথায় এমন এক তাজ (মুকুট) পরিয়ে দেওয়া হবে, যার কিরণ পৃথিবীর সূর্যের উজ্জ্বলতা থেকে অধিক দীপ্তিময়।
হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যার মাঝে কোরআনের কোনো অংশ নেই সে পতিত ঘরের মতো।
এসব হাদিস থেকে প্রতীয়মান হয় যে, পবিত্র কোরআনের ধারক-বাহকদের কত মান-সম্মান! তাদের পিতামাতা কতই না মর্যাদাবান! এসব পার্থিব জগতের কোনো কিছু দ্বারা মূল্যায়ন করা সম্ভব নয়।
স্থানীয় কয়েকজন মুসল্লী বলেন, দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষার্থীরা কোরআন-সুন্নাহর জ্ঞান আহরণে সদা ব্যস্ত থাকে। বর্তমাানে শহর-উপশহরে দ্বীনি ইল্ম চর্চার হার বৃদ্ধি পেলেও গ্রামাঞ্চলে এর হার নেমে এসেছে শূন্যের কোঠায়।
মসজিদকেন্দ্রিক মক্তবগুলো প্রায় বিলুপ্তির পথে। এক সময় এ শিক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে মুসলিম সম্প্রদায়ের কোমলমতি শিশুরা ইসলামের প্রাথমিক জ্ঞান অর্জন করত। কোরআনের পবিত্র ছোঁয়ায় তাদের জীবন আলোকিত হতো। চরিত্র হয়ে উঠত মাধুর্যপূর্ণ।
পবিত্র কোরআনের ধারক-বাহকদের মান ও মর্যাদার কথা যেমন বর্ণিত হয়েছে, তেমনি তাদের দায়িত্ব ও করণীয়তার কথাও ঘোষণা করা হয়েছে। প্রথমে নিজে শিখবে এবং তার ওপর আমল করবে। অতঃপর অন্যদের তা শিক্ষা দেবে।
মুক্তিযোদ্ধার কন্ঠ ডটকম/১২-০৬-২০১৭ইং/ অর্থ