মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম, কিশোরগঞ্জ ।।
২১শে আগস্ট এলেই মিডিয়াকর্মীরা আমার খোঁজ নিতে আসেন। বছরের বাকি মাসগুলোর কোন দিনেও কেউ আমার কোন খোঁজ খবর রাখেন না। ঠিক এমনটাই বললেন শরীরে স্প্লিন্টারের ব্যথা আর যন্ত্রণা নিয়ে দুর্বিষহ জীবন কাটানো জেলার ভৈরবের নাজিম উদ্দিন। ২০০৪ সালের ২১শে আগস্ট রাজধানী বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত জনসভায় দুর্বৃত্তদের গ্রেনেড হামলায় তিনি গুরুতর আহত হন।
শরীরে স্প্লীন্টারের প্রচণ্ড ব্যথা আর যন্ত্রণায় কর্মক্ষমতা হারিয়ে পরিবারে মা-বাবা,স্ত্রী আর তিন সন্তানকে নিয়ে খুবই কষ্টে দিন কাটছে তার। শরীরে এখনও অসংখ্য স্প্লিটার থাকলেও অর্থাভাবে অস্ত্রোপচার সম্ভব হচ্ছে না। পরিবারের সদস্যদের মুখে দুবেলা অন্ন তুলে দেয়াই এখন দায় হয়ে পড়েছে তার জন্য।
ববিবিএনপি -জামায়াত জোট সরকারের আমলে ২০০৪ সালের (২১শে আগস্ট) আজকের এই দিনেই বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের সমাবেশে নারকীয় গ্রেনেড হামলা বাংলাদেশে এক কলষ্কময় অধ্যায়ের জন্ম দিয়েছিল। বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় প্রাঙ্গণ এদিন মূহুর্তেই পরিণত হয়েছিল মৃত্যুপুরীতে। সেই সমাবেশে ওই দিন প্রিয় নেত্রী আইভি রহমানের আহ্বানে ভৈরবের কালিকা প্রসাদ ইউনিয়নের আকবরনগর গ্রামের মফিজ উদ্দিন মেম্বারের ছেলে আওয়ামী লীগ কর্মী নাজিমও যোগ দেন। হামলায় আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মীর সাথে নাজিম উদ্দিনও আহত হয়েছিলেন।
২১শে আগস্টে তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন খোলা ট্রাকের ওপর নির্মিত অস্হায়ী মঞ্চে বক্তব্য দিচ্ছেন সেই সময় নাজিমও ট্রাকের কাছেই ছিলেন। বক্তব্যের শেষ পর্যায়ে যখন র্যালি বের হবে নেত্রী যখন আসছেন ঐসময় আইভি রহমান সিঁড়ির কাছে দাঁড়িয়ে ছিলেন। হঠাৎ বিকট আওয়াজের সাথে সাথেই আইভি রহমান মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। সেই মূহুর্তে এ দৃশ্য দেখে আইভি রহমানকে সাহায্য করতে গিয়ে যান। র্দূভাগ্যবশত পরবর্তী গ্রেনেডটাই তাকে আঘাত করে।
শরীরে অসংখ্য স্প্লীন্টার আক্রান্ত করার পর অচেতন অবস্হায় পড়ে থাকে নাজিম। পরে গুরুতর আহত অবস্হায় নাজিমকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেই সময় তাকে মৃত ভেবে ডাক্তাররা অন্যান্য লাশের সাথে রাখতে গিয়ে এক লোকের পায়ের ধাক্কায় নড়ে উঠে।
পরে ঢাকায় বেশ কয়েকদিন চিকিৎসার পর নাজিমকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও বর্তমান প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার সহায়তায় তাকে জরুরী ভিত্তিতে ভারতের পিয়ারলেস হাসপাতালে পাঠানো হয়। তিন মাস সেখানে চিকিৎসার শেষে তিনি দেশে ফিরে আসেন।
শরীরে থাকা বাকি স্প্লিটারগুলো অপসারণ করতে আরও দুই-তিনটি অস্ত্রোপাচারের প্রয়োজন। কিন্তু অর্থাভাবে এখনও সেটি না করাতে প্রতিনিয়ত নিদারুণ যন্ত্রণা ভোগ করতে হচ্ছে তাকে। এখনও নিয়মিত ওষুধ সেবন করতে হয় বলে ব্যয়ভার বহন করতে গিয়ে সহায়-সম্বল হারাতে হয়েছে।
মুক্তিযোদ্ধার কণ্ঠ ডটকম/২১-আগস্ট–২০১৭ইং/নোমান