muktijoddhar kantho logo l o a d i n g

কিশোরগঞ্জ সদর

বাড়ীর পাশের চন্দ্রাবতী (ভ্রমণ কাহিনী) : শেষ পর্ব

তানজীমুল তারিফ ।। ২৫ আগস্ট ২০১৭ বেলা সাড়ে ৩’টার দিকে কিছু বন্ধুদের ফোন পাওয়ায় বাসা থেকে বাইক নিয়ে বের হই। শুক্রবার ছুটি দিন, কোথাও ঘুরতে যাবো এটা নিশ্চিত ছিল। ছুটির দিনে ভরপেট খাওয়ার পর জেলখানা মোরের “মিস্টি পান” না হলে আমার আবার চলে না। তো জেল-খানা মোর থেকে “মিস্টি পান” খেয়ে রওনা দিলাম কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদের উদ্দেশ্যে। উপজেলা পর্যন্ত আসতেই বন্ধুরা ফোন দিল “জালালপুর চন্দ্রাবতীর বাড়ীর দিকে আয়।


উপজেলা থেকে জালালপুরের রাস্তার পাশ দিয়ে সবুজ মাঠ আর ফসলী জমি গুলো মুগ্ধ করে ঠিকই, কিন্তু রাস্তার সৌন্দর্য সেই আগের মতই অবর্ণনীয়। মারাত্মক খারাপ বললেই চলে। ভাঙ্গা রাস্তার ঝাঁকুনি খেতে খেতে অবস্থা পুরাই কেরোসিন আমাদের।


প্রথম যখন চন্দ্রাবতী’র বাড়ীতে গিয়েছিলাম তখন দেখে বুঝার উপায় নেই এটা যে কোন সরকার স্বীকৃত দর্শনীয় স্থান। এখন কয়েকটি জায়গায় পরিবর্তন হয়েছে, মন্দিরের দেওয়াল গুলোতে নতুন রং করা হয়েছে। পর্যটকদের জন্য ছাউনির ব্যবস্থা করা হয়েছে।


#চিত্র-১:- চন্দ্রাবতী ও জয়ানন্দের প্রেমী যুগল প্রথম প্রেম দর্শন এই পুকুর পারে হয়েছে ঠিকই, কিন্তু ফুলেশ্বর নামের যে নদীটা, সেটা গেল কোথায়?? এলাকা বাসীদের কাছ থেকে জানতে পারি, কালের পরিবর্তনে নদীটির গতি সরে গিয়ে সামনে চলে এসেছে। এখন সেটার আর নদীর রুপ নেই খালে পরিনত হয়েছে।

#চিত্র-২:- এই মন্দিরে চন্দ্রাবতী শিবের পূজায় মগ্ন থাকতেন।

#চিত্র-৩:- মন্দিরের কাছে দু”তালা বিশিস্ট পুরাতণ দালানটা, অনেকে বলেন এটা চন্দ্রাবতী’র বাবা দ্বিজবংশী দাসের। আমার কাছে মনে হয় না, কারণ নয়ানচাঁদ ঘোষ তার ‘চন্দ্রাবতী পালা’ অনেক জায়গায় লিখেছেন দ্বিজবংশী দাস অনেক গরিব ছিলেন। তার পক্ষে এই রকম দু’তালা দালান করা সম্ভব নয়।

#চিত্র-৪:- এই দালানটা আবার জমিদার নীলকণ্ঠ রায়ের।


জালালপুর থেকে একটু সামনে একটা বাজার পরবে সে বাজারটার নাম নীলকণ্ঠ রায়ের নামের সাথে মিল রেখে নীলগঞ্জ রাখা হয়। নীলকণ্ঠ রায় তখন কার সময় হিন্দু পুরোহীত ছিলেন, চন্দ্রাবতীর বাবা দ্বিজবংশী দাসক‌ে তার কাছে আশ্রয় দিয়েছিলেন। দেশ ভাগের পর যে রায়ট শুরু হয় সে সময় নীলকণ্ঠ রায় ও দ্বিজবংশী দাস তাদের বংশধরদের নিয়ে ভারতে চলে যান।
তবুও কিছু কথিত বংশধর কিংবা তাদের চাকর-বাকর এই রকম ঐতিহাসিক স্থানটিতে বসতি করে তুলেছেন। যার ফলে দর্শনীয় স্থানটি তার সৌন্দর্য হারাছে।


আমার কাছে মনে হয়, চন্দ্রাবতীর মন্দির ও বাড়িটিকে লাভজনক পর্যটন স্থান করা উচিৎ। ২০-৩০ টাকা করে টিকিটের ব্যবস্থা করা দরকার। যে টাকা গুলো চন্দ্রাবতীর মন্দির ও বাড়ির উন্নয়ন মুলক কাজে ব্যয় হবে।

পরিশেষে, একটি কথাই থাকে সরকারে সু-নজর না পরলে চন্দ্রাবতীর মন্দির ও বাড়ি বিলুপ্ত হতে আর বেশী দিন লাগবে না।

 

প্রথম পর্বের লিঙ্কঃ

বাড়ীর পাশের চন্দ্রাবতী (ভ্রমণ কাহিনী) : প্রথম পর্ব

 

তথ্যঃ
১/চন্দ্রাবতী – উইকিপিডিয়া
২/ইতিহাসে উপেক্ষিত এক নিঃসঙ্গ দ্রাবিড়া-কবি চন্দ্রাবতী

 

মুক্তিযোদ্ধার কন্ঠ ডটকম/০১-০৯-২০১৭ইং/ অর্থ 

Tags: