ডেস্ক রিপোর্ট : রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর নির্যাতন বন্ধ, নিজ ভূমি থেকে বিতাড়িত করে বাংলাদেশে পুশইন করা থেকে বিরত থাকতে এবং তাদেরকে ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারের ওপর জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মহলের জোরালো কূটনৈতিক চাপ প্রয়োগের আহ্বান জানিয়েছে জাতীয় সংসদ।
আন্তর্জাতিক আদালতে এই নির্যাতনের বিচার এবং কফি আনানের নেতৃত্বে গঠিত কমিশনের সুপারিশসমূহ বাস্তবায়নের পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের জন্য ‘নিরাপদ অঞ্চল’ প্রতিষ্ঠার দাবি তোলা হয় সংসদে।
এছাড়া আলোচকদের অনেকে শান্তি ও মানবতার পক্ষে দৃঢ় অবস্থান নেওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নোবেল পুরস্কার পাওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন।
সোমবার সংসদে আনীত এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাবের ওপর সরকারি, বিরোধী দল ও স্বতন্ত্র সদস্যদের দীর্ঘ আলোচনায় এ দাবি জানানো হয়।
আলোচনায় অংশ নেওয়া সদস্যরা রোহিঙ্গাদের ওপর বর্বরোচিত হামলার তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ জানান। নির্যাতনের পক্ষে অবস্থান নেওয়ায় তারা শান্তিতে নোবেল জয়ী অং সান সুচির কড়া সমালোচনা করেন।
সংসদের কার্যপ্রণালী বিধির ১৪৭ বিধিতে প্রস্তাবটি (সাধারণ) আনেন চাঁদপুর-৩ আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য ও প্রাক্তন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি।
তিনি তার প্রস্তাবে বলেন, ‘সংসদের অভিমত এই যে, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায় রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর অব্যাহত নির্যাতন-নিপীড়ন বন্ধ, নিজ বাসভূমি থেকে বিতাড়ন করে বাংলাদেশে পুশইন করা থেকে বিরত থাকা এবং রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরিয়ে নিয়ে নাগরিকত্বের অধিকার দিয়ে নিরাপদে বসবাসের ব্যবস্থা গ্রহণে মিয়ানমার সরকারের ওপর জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মহলের জোরালো কূটনৈতিক চাপ প্রয়োগের আহ্বান জানানো হোক।’
প্রস্তাবটি উত্থাপন করে দীপু মনি বলেন, সম্প্রতি মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায় রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর অব্যাহত নির্যাতন-নিপীড়ন চরম আকার ধারণ করায় সেখানকার রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর লাখ লাখ লোক ইতিমধ্যে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে আশ্রয় নিয়েছে। সীমান্তের প্রতিটি পয়েন্টে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী ও সীমান্তরক্ষী বাহিনীর নিষ্ঠুর নির্মমতার শিকার কেউ অর্ধমৃত, কেউ গুলিবিদ্ধ, কেউ বা আবার ক্ষত-বিক্ষত হাত-পা নিয়ে হাজার হাজার রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ-শিশু কোনোমতে জীবন নিয়ে ঢলের মতো প্রতিদিন বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। নাফ নদীতে ভাসছে সারি সারি রোহিঙ্গার লাশ। নিজ ভূমি থেকে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে জাতিগতভাবে নির্মূলের লক্ষ্যে চালানো অব্যাহত নৃশংসতায় গর্ভবতী মা-বোন, কিশোর-কিশোরী, যুবক-যুবতী, বৃদ্ধ এমনকি দুগ্ধপোষ্য শিশুকেও রেহাই দিচ্ছে না এসব বাহিনী। তাদের আখ্যায়িত করা হচ্ছে ‘বাঙালি সন্ত্রাসী’ হিসেবে। বাঙালি অজুহাতে এদের কেবল বিতাড়িত করেই ক্ষান্ত হচ্ছে না তারা, রোহিঙ্গাদের প্রতিটি বাড়ি-ঘর আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিচ্ছে যাতে তারা আর কখনোই নিজ ভূমিতে ফিরতে না পারে।
তিনি আরও বলেন, মানবিক কারণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার দুর্দশাগ্রস্ত এই রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে বাংলাদেশে আশ্রয় দিয়েছেন। রোহিঙ্গাদের খাদ্য ও চিকিৎসাসহ অন্যান্য মানবিক সহায়তা অব্যাহত রেখেছেন।
মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গাদের তাদের মাতৃভূমিতেই নিরাপদ অঞ্চল গড়ে তোলার দাবি জানিয়েছেন জাসদ দলীয় সংসদ সদস্য মঈনুদ্দিন খান বাদল।
তিনি বলেছেন, আমরা মুসলমান হিসেবে তাদের জায়গা দেইনি, আমার তাদের মানুষ হিসেবে আশ্রয় দিয়েছি। বিশ্বের মোড়লদের বলব, জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ অঞ্চল গড়ে তোলা হোক।