পাপন সরকার শুভ্র, রাজশাহী : বর্তমান সরকার শিল্পায়নের দিকে নজর দিয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা আরো বলেন, রাজশাহীতেও বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হবে। সারাদেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল হবে। এর মধ্যে রাজশাহীতেও হবে। রাজশাহীর অনেক উন্নয়ন হয়ছে। মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় করেছি, বঙ্গবন্ধু হাইটেক পার্ক উদ্বোধন করা হলো।
বৃহস্পতিবার বিকেলে পবার হরিয়ান চিনিকল মাঠে আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিশাল জনসভা থেকে প্রধানমন্ত্রী এ অঞ্চলের উন্নয়ন কর্মকান্ডেরও চিত্র তুলে ধরেন।
এসময় তিনি আরও বলেন, এখন সবার হাতে মোবাইল। সর্বত্র ইন্টারনেট সেবা পৌছে দেয়া হয়েছে। বিএনপির আমলে মোবাইলে একমিনিট কথা বলতে ১০ টাকা লাগতো। এখন নামমাত্র টাকায় কথা বলা যায়। মাত্র ১০০০ টাকার মধ্যে মোবাইল ফোন পাওয়া যায়। তিনি বলেন, আমরা শিক্ষার উন্নয়নে বিনামুল্যে বই দিয়েছি। প্রি-প্রাইমারি শিক্ষা চালু করেছি। শিক্ষার্থীরা বৃত্তি পাচ্ছ। দরিদ্র মায়েরাও উপবৃত্তি পাচ্ছে। আমাদের লক্ষ্য একটায় দেশের শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
মসজিদের ইমামদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইসলাম শান্তির ধর্ম, ইসলাম সোহার্দের ধর্ম। ইসলামে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদের কোনো জায়গা নাই। তাই ইসলাম মানুষ হত্যাকে কখনোই সমর্থন করে না। কাজেই কেউ হত্যা করে বেহেস্তে যাবে না। দোজখে যাবে। এটাই হচ্ছে বাস্তব কথা, এটাই হচ্ছে প্রকৃত শিক্ষা। কাজেই প্রত্যেক মসজিদের ইমাম সাহেবরা এবং ধর্মীয় শিক্ষকরা আপনারা মাত্র মুষ্টিমেয় কিছু লোকের জন্য, তাদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্য আমাদের মুসলিম উম্মাহ মানুষের কাছে যেন হেয় না হয়, এই সন্ত্রাসের পথ, জঙ্গির পথ, মাদকশক্তের পথ যেন আমাদের যুবক ছেলে-মেয়েরা পরিহার করে এবং ইসলাম যে শান্তির ধর্ম, ইসলাম যে উন্নতির ধর্ম, ইসলাম যে অধিকার দিয়েছে, সেটা ভালোভাবে ব্যাপকভাবে প্রচার করবেন।
সেইসঙ্গে অন্যান্য ধর্মের যারা আছেন সকলকে আমি বলবো, সকল ধর্মেই শান্তির কথা বলা আছে। আমরা অসম্প্রদায়ীক চেতনায় বিশ্বাস করি। মহানমুক্তিযুদ্ধে সকলে আমরা মিলে-মিশে এক হয়ে রক্ত দিয়ে স্বাধীনতা এনেছি। আর স্বাধীন দেশ হয়েছে বলে আজকে দেশের উন্নতি হচ্ছে।
বঙ্গবন্ধুসহ স্বপরিবারে নিহতদের স্মৃতিচারণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি পিতা-মাতা ভাইসহ সব হারিয়ে আপনাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছি কেন, একটাই কারণে-আমার বাবা চেয়েছিলেন বাংলাদশের প্রতিটি মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে। আমার বাবা চেয়য়েছিলেন বাংলার মানুষ
মোটা ভাত খাবে। এদেশের কৃষক, এদেশের শ্রমিক, এদেশের মেহনেতি মানুষ তারা উন্নত জীবন পাবে। তারা কোনো দু:খ-কষ্ট থাকবে না। তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন হবে। আপনারা ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন। আপনাদের সেবা করার সুযোগ পেয়েছি। বাংলাদেশে দারিদ্রের হার কমিয়েছি। আজ বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আমি আপনাদের দোয়া চাই। আপনাদের সহযোগিতা চাই। আর আপনাদের মাঝেই ফিরে পেতে চাই আমার হারানো বাবার স্নেহ, হারানো মায়ের স্নে, হারানো ভাইয়ের স্নেহ।
বেলা ৩ টায় প্রধানমন্ত্রী জনসভাস্থলে উপস্থিত হলে হাজারো মানুষের করতালি ও জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু স্লোগানে স্লোগানে মুখরিরত হয়ে উঠে পুরো জনসভাস্থল।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনসভা স্থল থেকেই একযোগে রাজশাহীর ২৭ টি উন্নয়ন প্রকল্পের ফলক উন্মোচন ও ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করেন। বক্তব্যে এসব উন্নয়ন প্রকল্পকে রাজশাহীর জন্য বিশেষ উপহার হিসেবে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
রাজশাহীর পবা উপজেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিশাল এ জনসভায় সভাপতিত্ত্ব করেন উপজেলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ইয়াসিন আলী।
সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, দেশের মানুষের জীবন-মাণের উন্নতি হচ্ছে উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘গ্রামে গ্রামে বিদ্যুৎ চলে গেছে। আশি ভাগ মানুষকে এখন আমরা বিদ্যুৎ দেয় ১৫ হাজার ৭০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপদান করছি। ইনশাহ আল্লাহ প্রত্যেক ঘরে ঘরে আমরা বিদ্যুৎ পৌঁছে দিব। যে সমস্ত এলাকায় বিদ্যুৎ নাই, লাইন নাই। সেখানে আমরা সোলার প্যানেলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ দিয়ে দিচ্ছি। কোনো ঘর অন্ধকারে থাকবে না। প্রত্যেক ঘরের ছেলে-মেয়েরা লেখা-পড়া শিখবে। মানুষের মতো মানুষ হবে। আর এই বাংলাদেশ হবে ২০১২ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ। বাংলাদেশ হবে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ।
গেল বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের পূণবার্সনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্থ সকলের বাড়ি করে দেয়া হবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, উত্তরে এক সময় মঙ্গা ছিলো। আমরা ক্ষমতায় এসে উত্তরের মানুষের মঙ্গা চিরতরে দুর করেছি। কৃষির উৎপাদন বেড়েছে। কৃষির উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। নতুন নতুন উন্নয়ন কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে। চাপাইনবাবগঞ্জে কৃষি বিশ^বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। সরকারি কমিউনিটি ক্লিনিক চালু করা হয়েছে। এগুলোতে ৩০ ধরণের ওষুধ ফ্রি বিতরনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। স্কুলে স্কুলে শিক্ষার্থীদের হাতে ল্যাপটপ
দিয়েছি। সর্বত্মক উন্নয়ন কাজ করে চলেছি। তিনি বলেন, ২০২১ সালের মধ্যে দেশকে মধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিনত করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ চলছে। দেশ কোনো দারিদ্র থাকবেনা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আগামী নির্বাচনেও নৌকা প্রতীকে ভোট দিলে দেশের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকবে বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এমপি, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এমপি, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরী এমপি ও আয়েন উদ্দিন এমপি। এ ছাড়াও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, বিএম মোজাম্মেল হক, রাজশাহী সদর আসনের সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশাসহ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ, রাজশাহী বিভাগের বিভিন্ন আসনের এমপি এবং আওয়ামী লীগের বিভিন্ন জেলার শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
এর অগে প্রধানমন্ত্রী মোট ৭০০ কোটি টাকা ব্যয়ে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের ফলক উন্মোচন করেন। এসব উন্নয়ন প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে-বঙ্গবন্ধু হাই- টেক পার্ক। রাজশাহী মহানগরীর নবীনগর এলাকায় ৩১ দশমিক ৬৩ একর জমিতে ২৩৮ কোটি ২৪ লাখ টাকা ব্যয়ে পার্কটির নির্মাণকাজ এরই মধ্যে শুরু হয়েছে। এছাড়া ‘তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় শিক্ষার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে নির্বাচিত বেসরকারি কলেজ (আইসিটি)
সমূহের উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার গুলগোফুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের চারতলা অ্যাকাডেমিক ভবন নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তিনি। একই প্রকল্পের আওতায় মোহনপুর উপজেলার পাকুড়িয়া কলেজ, বাগমারার মাড়িয়া কলেজের চতুর্থ তলা অ্যাকাডেমিক ভবন, চারঘাট টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, তানোরের চান্দুড়িয়া এলাকার ডা. আবু বকর হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজের অ্যাকাডেমিক ভবন, জেলা পরিবার পরিকল্পনা অফিসের ভবন নির্মাণ, রাজশাহী মহানগরীর সোনাইকান্দি থেকে বুলনপুর পর্যন্ত শহররক্ষা বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প, গোদাগাড়ী উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ, রাজশাহী নগরীর তালাইমারী চত্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্কয়ার নির্মাণ, নগরীর কোর্ট স্টেশন থেকে বাইপাস এবং রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নাটোর বাইপাস পর্যন্ত রাস্তা প্রশস্তকরণ, রাজশাহী সরকারি শিশু হাসপাতাল, বারনই আবাসিক এলাকা উন্নয়ন প্রকল্প, প্রান্তিক আবাসিক এলাকা উন্নয়ন প্রকল্প, রাজশাহী মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট প্ল্যানকে দুর্যোগ ঝুঁকি সংবেদনশীলকরণ প্রকল্প, পবা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, আরবান প্রাইমারী হেলথ কেয়ার সেন্টারের ছয়তলা ভবন ও বাগমারা উপজেলা পরিষদের হলরুম।