ও প্রাণ বন্ধুরে দেখে যাও কেমন আছি
তুমার কথা ভেবে পথ চলি দিবানিশি
তুমাকেই যে বড় ভালবাসি।।
ভালবাসার মুল্য জানি দিতে পারবে না তুমি
তুমাকে যে বেসেছি ভালো এই আমি।।
যেদিন এসেছিলে আলোছায়া সুনিবিড় গ্রামে
দেখেছিলাম তুমাকে এক পলকে
ভালো লাগে সেদিন খুব তুমাকে
তবুও বলিনি কত যে ভালবাসি
তুমাকে আমি।।
মাঝে মাঝে আসতে তুমি
সৃষ্টি হতো দেখে কবিতার পংথি
দেখিনি যেদিন কবিদের আসরে
খুঁজে ফিরেছি কত যে তুমাকে
ভালবাসি যে তুমার হাসি ।।
কতদিন গেল সে হাসি দেখিনি
হাসিরা আজ কোথায় হারিয়ে গেল,
কেন হাসি আসে না
দেখেও তুমার মুখ
কি এমন পেলে দুখ…….
এতটুকু কবিতা লিখে আবৃত্তি করছিলেন শ্রাবণ। সকাল থেকে দুপুর পেরিয়ে গেল তবুও কোন প্রকারের খানাপিনা করেনি সে। তাই শ্রাবণের মা তাকে ধমক দিয়ে বলল, কি এমন কবিতা টবিতা লিখো যা তুমাকে খেতে দেয় না। কবিতা কি তুমার ক্ষিদে দূর করে? প্রতি উত্তরে শ্রাবণ বলল, মা কবিতা আমার কাছে এমনই মনে হয়। লিখতে বসলে আর ওঠতে মন চায় না,খেতে চায় না। ক্ষিদে যেন কোথায় পালিয়ে যায়। একটি কবিতা হয়ে ওঠে আমাকে বাঁচিয়ে রাখার অনুপ্রেরণা। তাই আর খেতে মন চায় না মা।
রাখ তোমার কবিতা। জীবনটা কি কবিতা, আর কবিতা নিয়েই পার করে দিবে তুমি সময়। নানার মত পত্রিকা আর লিখার নেশা যেন তুমাকেও পেয়ে বসেছে। এখন কবিতা লিখা রেখে জীবনের দিকে যত্ন নেওয়া দরকার তুমার। নিজে না বাঁচলে কবিতা বাঁচবে না। কবিতাকে বাঁচিয়ে রাখার জন্যই খেতে হবে বাবা।
না মা খাওয়ার জন্য জীবন নয়, জীবন ধারণের জন্য খাওয়া।
আরে রাখো প্যাঁচাল, এবার কবিতার প্যাঁচাল বাদ দিয়ে খাবারে মনোযোগ দাও।
শ্রাবণ নানার স্মৃতির ডায়েরীটা বন্ধ করে লেখার সমাপ্তি টানে। কলমটাকে বন্ধ করে কানে রেখে খেতে বসল। দুয়েক লোকমা খাবারের পর আর খেতে পারল না। তাঁর স্মৃতিতে ভেসে ওঠে ওপারের প্রিয় মানুষটির কথা। যে কিনা মন খারাপের সময়েও ফোন দিতো। যার হাসিতে সে হাসতো। কঠিন সময়ে তাঁর সব বন্ধুরা যোগাযোগ বন্ধ করে দিলেও সে বন্ধ করেনি। শ্রাবণের ফেসবুক বন্ধ দেখেই যে মানুষটি তাকে কল করে বসতো। আজকাল তাঁরও কোন খোঁজ মিলছে না। কেমন আছে সে কিছুই জানে না। না কি ওই বর্বর বার্মার হায়েনারা তার কোন ক্ষতি করেছে কি না। এসব চিন্তায আর একটি লোকমাও খেতে পারল না। বার্মার মানবতা বিপর্যয়ের স্মরণে আসায় পেটে একটি দানাও যায়নি।
সে দেশের যে শিশু মায়ের বুকের দুধ খেতে পারছে না। যে বাবা সন্তানের মুখ দেখছে না। যে ছেলে মা বাবাকে রক্ষার জন্য দূর দেশে পালিয়েও রক্ষা পাচ্ছে না। যে বোন বর্বর নরপিশাচদের হিংস্র কবল থেকেও ইজ্জত আব্রুকে রক্ষা করতে পারছে না। ক্ষত বিক্ষত হচ্ছে লাখো লাখো মানুষ। অনাহারে অর্ধাহারেও জীবন বাঁচানোর তাগিদে শত শত মাইল পাড়ি দিয়ে ঢুকছে প্রতিবেশী দেশে দেশে। মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও ঝুটছে না একটু অন্ন বস্ত্র। খোলা আকাশের নীচে পোহাতে হচ্ছে কত রাত। ওই অবস্থায় শ্রাবণের মুখে কি করে খাবার ঢুকবে?।
শ্রাবণ মায়ের অনেক চাপাচাপিতে খেতে বসেও না খেতে পারায় একটু শান্ত বাতাসের ছোঁয়া পেতে বেরিয়ে যায় বাড়ির সামনের খোলা মাঠে। যে মাঠে তার পুর্ব পুরুষেরা শ্রম দিয়ে ঘরে সোনালী ফসল তুলেছে। শ্রাবণের এসব সোনালী ধানের চারা দেখে মনটা শান্ত হয়ে ওঠে। তবুও এক রাশ হতাশা তাকে খুড়ে খুড়ে খেতে বসে। গ্রামের এই সোনালী পথ পাড়ি দিয়ে ওই গ্রামের বাল্য বন্ধুদের সাথে দেখা করতে যায়। তাদের নিয়ে পরামর্শ সভায় বসে সে। প্রতিবেশি দেশের মানবতা বিপর্য়য়ের অবস্থা বর্ণনা করে বন্ধুদের কাছে। বন্ধুরা তাঁর কথা শুনে নির্যাতিত মানবতার পাশে দাঁড়াতে চায়। তাদের দু:খের ভাগীদার হতে চায়। সরাসরি তাদের পাশে না দাঁড়াতে পারলেও উদ্বাস্তুদের জন্য ত্রাণ সংগ্রহের কাজে নেমে যায়। এ গ্রাম থেকে ওই গ্রামের সব বন্ধুদের নিয়ে অনেক কাপড় চোপড় নগদ অর্থ সংগ্রহও করে ফেলে। পরে সে গুলো তাদের উদ্দেশ্যে নিজে গিয়ে বিলি করে। এ সময় প্রিয় মুখোচ্ছবি দেখে শ্রাবণের হাসি ফুটে, সেও হাসে, হাসে প্রিয় দেশ। এখন যেন তাঁর কিছুটা হলেও শস্তির নি:শ্বাস ফেলতে পারছে। শ্রাবণের মুখে হাসি দেখে গ্রামবাসীও হাসে বন্ধুরাও হাসে হাসে প্রিয় মুখটিও।
লেখক পরিচিতি: আমিনুল হক সাদী, লেখক ও গল্পকার।
মুক্তিযোদ্ধার কণ্ঠ ডটকম/১৬-০৯-২০১৭ইং/ অর্থ