এলাকার কয়েকজন চাষী জানান, প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ বছর আগে এখানে সর্বপ্রথম গোলাপ চাষ শুরু হয়। তারপর থেকে একের পর এক চাষী উৎসাহী হয়ে গোলাপ চাষে এগিয়ে এসেছেন। প্রতিদিন বিকালে গোলাপ সংগ্রহ করেন তারা। এরপর সন্ধ্যায় স্থানীয় বাজারগুলোতে বিক্রির উদ্দেশ্যে গোলাপ নিয়ে জমায়েত হন চাষীরা। সেখানে স্থানীয় ও ঢাকা থেকে আসা ক্রেতারা গোলাপ কিনে নেন। গভীর রাত পর্যন্ত চলে বেচাকেনা। তারপর এখানকার উৎপাদিত গোলাপ ছড়িয়ে পড়ে ঢাকার বিভিন্ন জনপ্রিয় ফুলের বাজারে। এখানে বিভিন্ন প্রজাতির গোলাপ চাষ করে থাকেন চাষীরা। তবে সবচেয়ে জনপ্রিয় জাতটি হলো টকটকে লাল মিরান্ডা। তবে অন্যান্য জাতের গোলাপও রয়েছে।
গ্রামগুলোর চাষীদের আয়ের উৎস এই গোলাপ। গোলাপ ছাড়াও গ্রামগুলোতে অন্যান্য ফুলের চাষ হয়ে থাকে। তবে সেটা তুলনায় সামান্যই। এক থেকে দেড় মাস ছাড়া প্রায় সারা বছরই ফুল তোলা যায়। বাকি সময়ে গাছের আগা ছেঁটে দেন তারা। ফলে নতুন সাজে গাছ বেড়ে উঠে ফুল ধরতে এক থেকে দেড় মাস সময় নেয়। তবে গোলাপ চাষে তেমন কোন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় না তাদেরকে।
গোলাপ চাষী মনির হোসেন বলছিলেন, তিনি প্রায় ৩০ বছর ধরে গোলাপ চাষ করেছেন। গোলাপ চাষের আয় দিয়েই তার সংসার চলে। তবে গোলাপ চাষের পাশাপাশি সামান্য পরিমাণে অন্যান্য আবাদ রয়েছে তার। তার কথা মত গ্রামের প্রায় ৯৯ ভাগ চাষি গোলাপ চাষ করেন। মো. আবুল হোসেন নামের এক চাষী বলছিলেন, আমি প্রায় ২০ বছর ধরে গোলাপ চাষ করছি। লাভজনক হওয়ায় এই পেশাতে এসেছি।
বিরুলিয়ার এই গোলাপের রাজ্যের খবর মোটামুটিভাবে আশেপাশে ছড়িয়ে পড়েছে। ফলে পর্যটকদের জন্য দিন দিন আকর্ষণীয় স্থান হয়ে উঠছে বিরুলিয়া। প্রায় প্রতিদিন বিভিন্ন স্থান থেকে পর্যটক আসেন এখানে। যান্ত্রিক জীবনের কিছুটা সময় ব্যয় করেন প্রকৃতির সান্নিধ্যে। এখানকার প্রতিটি ফুটন্ত গোলাপ যেন পর্যটকদেরকে স্বাগতম জানাতে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে।
সম্প্রতি গোলাপের এই রাজ্যে ভ্রমণে আসেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সাবেক ও বর্তমান সদস্যের একটি দল। তাদেরই একজন সংগঠনটির সাবেক সভাপতি বেলাল হোসাইন রাহাত বলছিলেন, বেশ আগেই বিরুলিয়ার গোলাপ গ্রামের কথা শুনেছি। অনেকদিন থেকেই ইচ্ছা ছিল এখানে আসার। সময়-সুযোগ মিলে যাওয়ায় আজই (শুক্রবার) চলে আসলাম স্বনজরে দেখতে। তবে যেমনটি শুনেছি, বাস্তবেও গোলাপ গ্রাম অসাধারণ। এ যেন সাভারের বুকে এক টুকরা গোলাপের রাজ্য।
গ্রামগুলো তুরাগ নদীর তীরবর্তী হওয়ায় গোলাপ রাজ্যের সৌন্দর্য উপভোগের পাশাপাশি নৌভ্রমণের সুযোগ গ্রহণ করেন অনেক পর্যটক। ফলে পর্যটকদের উপর নির্ভর করে নৌকা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন অনেকে। এদেরই একজন জায়েজ মোল্যা। তিনি বলেন, প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন স্থান থেকে বহু পর্যটক বিরুলিয়ায় আসে। তাই জীবিকা নির্বাহের জন্য এই পেশা বেছে নিয়েছি।
সাভার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মফিদুল ইসলাম মুক্তিযোদ্ধার কন্ঠ কে বলেন, উপজেলার বিভিন্ন স্থানে গোলাপ চাষ হয়ে থাকে। তবে সবচেয়ে বেশি গোলাপ চাষ হয় বিরুলিয়া ইউনিয়নে। ইউনিয়নের প্রায় ৫/৭টি গ্রামে গোলাপ চাষ হয়। প্রায় ৩৫০ হেক্টর জমিতে ফুল চাষ হয়। এরমধ্যে গোলাপ চাষ বেশি হয়। আমরা গোলাপ চাষীদেরকে পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকি।
মুক্তিযোদ্ধার কণ্ঠ ডটকম/১৭–সেপ্টেম্বর–২০১৭ইং/নোমান