মুক্তকলাম ।। নাসিরনগরের ঘটনায় কষ্ট পায় হিন্দুরা,মিয়ানমায়ের ঘটনায় কষ্ট পায় মুসলিমরা! কোথাও মসজিদ ভাঙ্গলে,পবিত্র ধর্মগ্রন্থ পুড়ালে কষ্ট লাগে মুসলমানদের,কোথাও মন্দির-মুর্তি ভাঙ্গলে কষ্ট লাগে হিন্দুদের!
কেন এই সংকীর্ণ ও বৈরি ভাবনা আমাদের? বিধাতার মাঝে তো কোন দ্বন্ধ বা বৈরিতা নেই, তবে আমরা কেন মানুষ ও মানবতার প্রশ্নে আমরা এক হতে পারি না? কোন অপরাধকেও আমরা সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে দেখি? দোষী যেই হোক, তার কোন ধর্ম নেই। এই সংস্কৃতি আমাদের মাঝে বিভেদের দেয়াল গড়ে তুলছে! সব ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে আমরা মানুষ পরিচয়টা কে কি সবার উপরে তুলে ধরতে পারিনা? কেনই বা মানুষের দুঃখ-কষ্টের মাঝেও ধর্মের গন্ধ খুঁজি?
ধর্ম সম্পর্কে যতটুকু বুঝি, তা হলো আমরা কোন না কোন সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টি! সেই সৃষ্টিকর্তার সানুগ্রহ বা নৈকট্য লাভের জন্য তাঁর প্রার্থনা করি। যেন অন্তিমে সেই পরম করুণাময়ের কৃপা লাভ হয়। সর্বোপরি একটি সুশৃঙ্খল জীবন প্রণালীর মধ্যে থেকে নিজেকে পরিচালিত করে তার আনুগত্য স্বীকার করা। যতদূর জানি এ পর্যন্ত কোন ধর্ম গ্রন্থই অশান্তির বারতা প্রচার করে নি কিংবা শুনিনি ঈশ্বরদের মধ্যকার কোন দ্বন্ধের কথা! তবে মানুষ কেন ধর্মের নামে এই অধর্ম করছে? যার সানুগ্রহ বা সন্তুষ্টি লাভের জন্য এই অপকর্মগুলো করছে মানুষ,স্বয়ং সেই ধর্মেই কি সেই কাজগুলো অনুমোদন করে কিনা সেটাই বা কজন বিবেচনা করে?
ধর্ম চর্চা প্রশান্তিময় জীবনের সন্ধান দিয়ে আলোকিত করে দেহ-মন। ধর্মের পবিত্রতার ছোয়ায় পঙ্কিলতা মুক্ত অন্তর হয়ে উঠে ভালবাসার আধার। সেই আধারের দ্যুতি ছড়ায় মানুষ থেকে মানুষে। কিন্তু ধর্ম ও ধর্মান্ধতার কালো থাবায় কোথায় যেন এক অন্ধকার গন্তব্যহীন পথে ছুটে চলেছি আমরা! না হচ্ছে ধর্ম,তবুও ধর্মের দোহাই নিজেরাই জ্বলে মরছি বা মারছি,বিপন্ন হচ্ছে মানবতা!
একদল মানুষ দুর্গোৎসব এলে যেন মূর্তি ভাঙ্গার নেশায় উন্মাদ হয়ে পড়ে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়-‘মাটির মূর্তি ভজে করে কেউ পূণ্য অভিলাষ,কেউবা এটিই ভেঙ্গে করে নগ্ন উল্লাস!’ আর এ কাজ কোন সভ্য মানুষের কাছে কখনো প্রত্যাশিত নয়।
দেশ জুড়ে এখন শারদীয় উৎসবের আমেজ!উৎসব পালনে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন সনাতন ধর্মালম্বীগণ। সকল ধর্মের ধর্মালম্বীরা প্রত্যাশা করে রাষ্ট্র তাদের এ আনুষ্ঠানিকতা পালনে আন্তরিকভাবে পৃষ্ঠপোষকতা করবে।ইতিমধ্যে মাননীয় সরাষ্ট্রমন্ত্রী পূজোর শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থে কিছু নির্দেশনা জারি করেছেন। অন্যদিকে বিজয়া দশমীর পরদিন পবিত্র আশুরা। এই দিনটিও ইসলাম ধর্ম অনুসারীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন।তবে একটিকে সফল করতে গিয়ে অন্য ধর্মের কোন বৃহৎ উৎসবকে মর্যাদাপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে বিমাতাসুলভ আচরণ একটি অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র ব্যবস্থার কাছে কাম্য নয়।
অবশেষে শারদীয় শুভ্রতায় বিকশিত হোক সকলের অন্তর।সবাই কে শারদীয় শুভেচ্ছা।
লেখকঃ সুমিত বণিক, জনস্বাস্থ্যকর্মী ও ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক, ঢাকা।
মুক্তিযোদ্ধার কণ্ঠ ডটকম/২৪-০৯-২০১৭ইং/ অর্থ