কিশোরগঞ্জে মাঠ প্রশাসন সামলাচ্ছেন ৮ নারী ইউএনও। জেলার ১৩টি উপজেলার মধ্যে বর্তমানে ৮টিতে উপজেলা প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন নারীরা। এ ছাড়াও জেলার ৮টি উপজেলায় সহকারী কমিশনার (ভূমি) পদেও অধিষ্ঠিত তারা। “পুরুষ কর্মকর্তারাই সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারে” এ ধারণাকে ভুল প্রমাণিত করে ওই নারী কর্মকর্তারা সফলতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন। তাদের মধ্যে কেউ কেউ একেক বিষয়কে অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করছেন শিক্ষা ও স্বাস্হ্য,নারীর উন্নয়ন,কর্মসংস্হান এবং মাদক নির্মূলের মত বিষয়গুলোকে নিয়ে।
রাজনৈতিক ক্ষেত্রে ভিভিআইপি জেলা হিসেবে খ্যাত দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এ জেলায় এসব নারীরা সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন। নেতৃত্ব দিচ্ছেন ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে। এর মধ্যে একজন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হিসেবে সাম্প্রতি বিভাগীয় শ্রেষ্ঠ ইউএনও হিসেবে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা পদক পেয়েছেন।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পদে জেলার ৮টি উপজেলার মধ্যে তাড়াইলে সুলতানা আক্তার, কুলিয়ারচরে ড.ঊর্মি বিনতে সালাম,ভৈরবে দিলরুবা আহমেদ, বাজিতপুরে সোহানা নাসরিন,করিমগঞ্জে মাহমুদা খানম,মিঠামইনে তাসলিমা আহমেদ পলি,পাকুন্দিয়ায় অন্নপূর্ণা দেবনাথ ও কটিয়াদীতে ইসরাত জাহান কেয়া দায়িত্ব পালন করছেন।
২০১৫ সালের ১২ আগষ্ট সুলতানা আক্তার তাড়াইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন। সরকারি কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি আর উপজেলাবাসীর কাছে মিষ্টভাষী ও কর্মচঞ্চল কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত এ কর্মকর্তা এখনও সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন।
ড.ঊর্মি বিনতে সালাম কুলিয়ারচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে যোগদানের পর থেকে মেধা,প্রজ্ঞা ও উদ্ভাবনী চিন্তা দিয়ে নিজে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। বিজ্ঞানের সবচেয়ে বড় ব্যবহারিক ক্লাসের আয়োজন করে আলোচনায় আসেন তিনি। মেধা আর উদ্ভাবনী প্রশাসনিক কার্যক্রমের স্বীকৃতিস্বরুপ সাম্প্রতি ঢাকা বিভাগের শ্রেষ্ঠ ইউএনও হিসেবে তিনি জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা পদক পেয়েছেন।
২০১৬ সালের ২রা মার্চ ভৈরব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন দিলরুবা আহমেদ। যোগদানের পর থেকে গুরুত্বপূর্ণ এ উপজেলায় তিনি জনস্বার্থে তাঁর দক্ষতা ও উদ্ভাবনী চিন্তা ধারায় কাজ করে চলেছেন।
সোহানা নাসরিন গতমাসের ৪ঠা সেপ্টেম্বর বাজিতপুর উপজেলায় নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন। এর আগে তিনি হোসেনপুর উপজেলায় সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসেবে সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করেন।
২০১৭ সালের ২১শে মার্চ মাহমুদা খানম পূর্ববর্তী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আছমা আরা বেগমের স্হলাভিষিক্ত হয়ে করিমগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন।
রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদের নিজের উপজেলা মিঠামইনে ২০১৬ সালের ২৭ নভেম্বর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে তাসলিমা আহমেদ পলি যোগদান করেন। যোগদানের পরপরই হাওরে আগাম বন্যায় ফসলহানির ঘটনা ঘটে। অকাল বন্যার পরবর্তী পরিস্হিতি তিনি সাহসিকতার সঙ্গে সামাল দেন।
অন্নপূর্ণা দেবনাথ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে ২০১৭ সালের ১৩ই এপ্রিল পাকুন্দিয়ায় যোগদান করেন। এর আগে তিনি তাড়াইলে সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসেবে অত্যন্ত সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন।
সর্বশেষ জনবান্ধব প্রশাসক মো. নজরুল ইসলাম রাঙ্গামাটি জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক হিসেবে পদোন্নতিজনিত কারণে অন্যত্র বদলি হলে ২১শে সেপ্টেম্বর ইসরাত জাহান কেয়া কটিয়াদী উপজেলার নিবার্হী কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন। এর আগে তিনি ঢাকার পরিত্যক্ত সম্পত্তি ব্যবস্হাপনা বোর্ডের সিনিয়র সহকারী কমিশনার হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
এ বিষয়ে কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) তরফদার মোঃ আক্তার জামীল মুক্তিযোদ্ধার কন্ঠকে জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকার নারীবান্ধব প্রশাসন পরিচালনায় বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। জেলার ১৩ উপজেলার ৮টিতেই নারীরা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তাদের কাজে ঊর্ধ্বতন প্রশাসন খুশি।
মুক্তিযোদ্ধার কন্ঠ ডটকম/০৬-১০-২০১৭ইং/ অর্থ