ডেস্ক রিপোর্ট ।। শুল্ক ফাঁকির অভিযোগে দায়ের করা মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের পাঁচ মামলায় আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদ এবং তার দুই ভাই গুলজার আহমেদ ও আজাদ আহমেদকে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত। দিলদার আহমেদ আলোচিত বনানীর দ্য রেইন ট্রি হোটেলে দুই তরুণীকে ধর্ষণের মামলার প্রধান আসামি সাফাত আহমেদের বাবা।
মঙ্গলবার মামলাগুলোতে তারা আইনজীবীর মাধ্যমে আত্মসমর্পণ করে জামিনের প্রার্থনা করেন। শুনানি শেষে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমের (সিএমএম) চারটি পৃথক আদালত তাদের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
এর আগে মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর গুলশান, ধানমন্ডি, রমনা এবং উত্তরা-পূর্ব থানার ওই মামলাগুলোয় ঢাকা সিএমএম আদালতের জিআর শাখায় আসামিরা আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন জমা দেন। এরপর বেলা ৩টায় তাদের জামিনের আবেদনের ওপর শুনানি শুরু হয়।
প্রথমে আসামি দিলদার আহমেদের বিরুদ্ধে উত্তরা-পূর্ব থানা এরপর ধানমন্ডি ও পরে রমনা থানার তিন মামলায় জামিনের শুনানি হয়।
ঢাকা মহানগর হাকিম মো. মাহমুদুল হাসান উত্তরা-পূর্ব থানার, নুরুন্নাহার ইয়াসমিন ধানমন্ডি থানার এবং দেবব্রত বিশ্বাস রমনা থানার মামলায় শুনানি শেষে তার জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
এরপর ঢাকা মহানগর হাকিম মো. আহসান হাবীব আসামি গুলজার আহমেদ ও আজাদ আহমেদের বিরুদ্ধে রাজধানীর গুলশান থানার দুই মামলায় জামিন আবেদনের ওপর শুনানির পর নামঞ্জুর করে তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
আসামি পক্ষে অ্যাডভোকেট কাজী নজীব উল্লাহ হিরু ও ফেরদৌস সুলতানা কাকলী জামিন আবেদনের ওপর শুনানি করেন।
শুনানিতে আইনজীবী নজিবুল্লাহ হিরু দাবি করেন, কোনোপ্রকার নোটিশ ছাড়াই শুল্ক গোয়েন্দা অফিসাররা আপন জুয়েলার্সের পাঁচটি শাখায় অভিযান চালিয়ে স্বর্ণালংকর জব্দের পর দোকানগুলো সিলগালা করে দেয়। স্বর্ণ জব্দ ও সিলগালার বিরুদ্ধে আসামিরা যখন উচ্চ আদালতে রিট আবেদন করেন তখন রাষ্ট্রপক্ষ রিট শুনানিতে সময় নিয়ে গত ১২ আগস্ট এই মামলাসমূহ দায়ের করেন।
তিনি বলেন, মামলায় পাচারের কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ নেই। টাকা কীভাবে কোথায় পাচার করা হয়েছে তা বলা নেই। আসামিরা অসুস্থ। তারা উচ্চ আদালতে গিয়ে জামিন পেয়েছিলেন। তাই তারা জামিন পেতে পারেন।
রাষ্ট্রপক্ষে সংশ্লিষ্ট থানাসমূহের জিআরও পুলিশের এসআই ফরিদ আহমেদ, মোজাম্মেল হোসেন, মকবুল হোসেন এবং শওকত হোসেন জামিন আবেদনের বিরোধিতা করে শুনানি করেন।
তারা বলেন, আসামিরা মামলাসমূহে গত ২২ আগস্ট হাইকোর্টে আত্মসমর্পণ করলে হাইকোর্ট তাদের চার সপ্তাহের জন্য জামিন মঞ্জুর করেন। চার সপ্তাহ পর তাদের নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের প্রার্থনা করার কথা ছিল। কিন্তু তারা প্রায় ৯ সপ্তাহ পর এসেছেন। তারা জামিনের শর্ত ভঙ্গ করেন। এ অবস্থায় তাদের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানো হোক।
উভয়পক্ষের শুনানির পর আদালতসমূহ তাদের জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
আসামিদের জামিনের আবেদন নামঞ্জুর হওয়ার পর কারাগারে তাদের প্রথম শ্রেণির মর্যাদা প্রদানের জন্য আবেদন করেন তাদের আইনজীবীরা। বিচারকগণ কারাবিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কারা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ প্রদান করেন।
গত ১২ আগস্ট চোরাচালানের মাধ্যমে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে আনা প্রায় ১৫ মণ স্বর্ণ ও হীরা জব্দের ঘটনায় ওইসব মূল্যবান ধাতু কর নথিতে অপ্রদর্শিত ও গোপন রাখার দায়ে আপন জুয়েলার্সের মালিক ওই তিন ভাইয়ের বিরুদ্ধে পাঁচটি মামলা দায়ের করে শুল্ক গোয়েন্দা।
মামলাগুলোয় আসামিরা গত ২৩ আগস্ট হাইকোর্ট থেকে ৪ সপ্তাহের জামিন পান। এরপর তারা নিম্ন আদালতে জামিননামাও দাখিল করেন। হাইকোর্টের জামিনের মেয়াদ শেষে হলেও নিম্ন আদালতে হাজির না হওয়ায় গত ২২ ও ২৩ অক্টোবর তিন মামলায় তাদের জামিন বাতিল করে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত।
এর আগে শুল্ক গোয়েন্দার পাঁচ সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা যথাক্রমে এম আর জামান বাঁধন, বিজয় কুমার রায়, মো. শাহরিয়ার মাহমুদ, মোহাম্মদ জাকির হোসেন এবং মো. আরিফুল ইসলাম বাদী হয়ে এসব মামলা দায়ের করেন।
মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ (সংশোধনী ২০১৫) এর ধারা ২ (ঠ) এবং কাস্টমস অ্যাক্ট, ১৯৬৯-এর ধারা ১৫৬(৫) অনুযায়ী শুল্ক গোয়েন্দা ওই মামলা দায়ের করা হয়।
আপন জুয়েলার্সের বিরুদ্ধে শুল্ক ও কর ফাঁকি দিয়ে চোরাচালানের মাধ্যমে স্বর্ণালঙ্কার মজুদের অভিযোগে কাস্টমস অ্যাক্ট, ১৯৬৯ অনুযায়ী কাস্টম হাউস ঢাকায় আরও পাঁচটি কাস্টমস মামলা তদন্তাধীন।
প্রসঙ্গত, বনানীর আলোচিত দ্য রেইন ট্রি হোটেলে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া দুই তরুণীতে জন্মদিনের পার্টিতে ডেকে নিয়ে ধর্ষণ করেন আপন জুয়েলার্সের অন্যতম মালিক দিলদার আহমেদের ছেলে সাফাত আহমেদ ও তার সহযোগীরা। ওই ঘটনার পরই রাজধানীতে আপন জুয়েলার্সের পাঁচটি শোরুম থেকে প্রায় ১৫ মণ স্বর্ণ ও হীরার অলঙ্কার জব্দ করা হয়। পরে এসব অলঙ্কার বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা দেওয়া হয়।