নিজস্ব প্রতিবেদক : কিশোরগঞ্জে ও কটিয়াদীতে এক রাতে চার বাড়িতে চেতনা নাশকে আক্রান্ত করে দুর্ধর্ষ চুরি সংঘটিত হয়েছে। জানা গেছে,জেলা সদরের উপজেলা রোডের বাসিন্দা র্যাবের সদস্য মুসলেহ উদ্দীনের বাসায় রবিবার রাতে দুর্ধর্ষ চুরি সংঘটিত হয়েছে। স্থানীয় এলকাবাসী ও পরিবার সুত্রে জানা গেছে রাত চারটার দিকে বাসার গ্রিল কেটে একদল দুর্বৃত্ত চোর গ্রীল কেটে ঘড়ে প্রবেশ করে। প্রথমে তারা চেতনা নাশক করে সবাইকে অজ্ঞ্যান করে। এরপর নির্বিঘে্ন ঘড়ে থাকা আসবাবপত্র ও মালামাল তছনছ করে। এ সময় ঘড়ে থাকা ১০ ভরি স্বার্ণালংকার ও নগদ টাকা চুরি করে নিয়ে যায়। চোরেরা ওই র্যাবের স্ত্রী হোসনা আক্তারের কানের দোল খোলে নেওয়ার সময় তিনি কিছুটা চেতন ফিরে পান এবং চোরের উপস্থিতি টের পেলে ওরা দ্রুত পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয় এলাকা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়। খবর পেয়ে কিশোরগঞ্জ মডেল থানা পুলিশের এস আই মেহেদী হাসানসহ সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে ঘটনা স্থল পরিদর্শন করেছে।
কিশোরগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রপ্ত কর্মকর্তা খোন্দকার শওকত জাহান ঘটনার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে জানান এখনও কেউ অভিযোগ নিয়ে আসেনি। অভিযোগ পেলেই আই্নানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। উল্লেখ্য এ এলাকটিতে গেল বছরেও একই কায়দায় কয়েকটি বাসায় দুর্ধর্ষ চুরি সংঘটিত হয়েছে। এসব ঘটনায় এলাকায়র মানুষ উদ্বিগ্ধ হয়ে পড়েছেন।
এদিকে কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী পৌর সদরে থানা থেকে ৪শ গজ দূরে এক রাতে পাশাপাশি তিন বাড়িতে দূর্ধর্ষ চুরির ঘটনা ঘটেছে। দূর্বৃত্তরা ঘরে চেতনা নাশক দ্রব্য ছিটিয়ে লোকজনকে অচেতন করে গ্রীল কেটে ঘরে প্রবেশ করে স্বার্ণালংকার ও টাকা পয়সা লুট করে নিয়ে যায়। মাস দেড়েক পূর্বে একই এলাকার মাইনুদ্দিনের বাড়ির লোকদের একই কৌশলে অচেতন করে সর্বস্ব লুটের ঘটনা ঘটে।
চুরি করতে গিয়ে যেন ধরা না পড়ে সেজন্য চেতনা নাশক দ্রব্য ব্যবহার করছে দূর্বৃত্তরা। জ্ঞান না ফিরলে মৃত্যুও ঘটে যেতে পারে। কিন্তু আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোন তৎপরতা না থাকায় একই ধরণের ঘটনা ঘটছে বার বার। এ নিয়ে এলাকাবাসী রয়েছে উদ্বিগ্ন।
জানা যায়, সোমবার ভোরে পৌর সদরের গ্রামীণ ব্যাংক সংলগ্ন আহাম্মদ আলীর বহুতল ভবনের ২য় তলায় ভাড়াটিয়া শিক্ষিকা মৌসুমীর ঘরে দূর্বত্তরা কৌশলে চেতনা নাশক দ্রব্য ছিটিয়ে অচেতন করে গ্রীল কেটে ঘরে প্রবেশ করে স্বর্ণালংকার ও টাকা পয়সা লুট করে নিয়ে যায়। সকালে মৌসুমীর স্বজনরা অচেতন অবস্থায় তাকে হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা করান। একই রাতে পার্শ্ববর্তী ডাক্তার রফিকুল ইসলাম বাচ্চুর বাড়ির ভাড়াটিয়া ব্যবসায়ী আরমানের রান্না ঘরের গ্রীল কেটে ঘরে প্রবেশ করে স্টীলের আলমারী ভেঙ্গে স্বর্ণালংকার ও টাকা পয়সা নিয়ে যায়। ব্যবসায়ী আরমান ও তার কন্যা বৈশাখীকেও সকালে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ওই রাতেই পার্শ্ববর্তী সেলিমের বিল্ডিংএর নিচতলার ভাড়াটিয়া গ্রামীণ ব্যাংকের ৫জন কর্মকর্তাকে অচেতন করে মোবাইল ও টাকা পয়সা নিয়ে যায়। সকাল সাড়ে ৮টায়
গ্রামীণ ব্যাংকের ম্যানেজার মো: আব্বাস আলী অফিসে কেউ আসেনি দেখে তাদের সাথে ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেন। তাদের ফোন বন্ধ পেয়ে নিজেই তাদের ঘরে খোজ নিতে যান। দরজা ধাক্কাদিতেই দরজা খোলে যায় এবং ভিতরে তাদেরকে অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে চিকিৎসার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে ভর্তি করান। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত গ্রামীণ ব্যাংকের কর্মকর্তা শাহাবুদ্দিন, আতিকুর রহমান, এমরান, ইসরাইল সরকার, সাইফুল ইসলাম ও ব্যবসায়ী আরমানের জ্ঞান ফিরেনি। ঘটনার সংবাদ পেয়ে গ্রামীণ ব্যাংকের জোনাল অফিসের এরিয়া ম্যানেজার মো: সুজা উদ্দৌলা হাসপাতালে তাদের খোঁজ খবর নেন। শিক্ষিকা মৌসুমী জানান, তার প্রায় ১০ ভরি ওজনের স্বর্ণালংকার, নগদ ১২হাজার টাকা, মোবাইল ফোন নিয়ে যায়। আরমানের স্ত্রী জানান, তার ২ভরি ওজনের স্বর্ণালংকার ও মোবাইল ফোন নিয়ে যায়। আলমারীতে কত টাকা ছিল তার জানা নাই। স্বামী আরমানের জ্ঞান ফিরলে বলা যাবে।
কি ধরণের চেতনা নাশক দ্রব্য হতে পারে জানতে চাইলে কর্তব্যরত ডাক্তার বলেন, এগুলো পরীক্ষা নিরীক্ষা করার মত যন্ত্রপাতি আমাদের কাছে নেই। তবে এগুলো সহজলভ্য নয়। আর এগুলোর তীব্রতাও ব্যাপক। যে কারণে জ্ঞান ফিরতে সময় লাগতে পারে।
কটিয়াদী মডেল থানার ওসি জাকির রাব্বানী বলেন, ঘটনার কথা শুনে লোক পাঠিয়েছি। চুরির রহস্য উদঘাটনের চেষ্টা চলছে। তিনি আরও জানান, কিছুদিন পূর্বে একই এলাকায় অনুরূপ চুরির ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার তদন্তে যথেষ্ট অগ্রগতি হয়েছে। অচিরেই ভাল ফলাফল পাওয়া যাবে।
মুক্তিযোদ্ধার কণ্ঠ ডটকম/৩০-অক্টোবর–২০১৭ইং/নোমান