মুক্তিযোদ্ধার কন্ঠ ডেস্কঃ রাজধানীর বাস টার্মিনালগুলোতে আজও বাড়িফেরা মানুষের ভিড়। একই অবস্থা লঞ্চ ও বাস টার্মিনালেও। যানবাহনের চাপে যানযটের সৃষ্টি হয়েছে সাভারের আশুলিয়া-বাইপাইল-আব্দুল্লাহপুর ও গাজীপুর-টাঙ্গাইল মহাসড়কে। এছাড়া কাওড়াকান্দি-শিমুলিয়া, পাটুরিয়া-দৌলদিয়া ও আরিচা ফেরিঘাটে রয়েছে দীর্ঘ যানবাহনের সারি। গতকাল বিকালে রওনা দিয়ে এখনও এসব ঘাট পার হয়নি এমন যানবাহনের সংখ্যা প্রায় প্রায় হাজারের ওপর।
এদিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়াকে সিতাকুন্ড, মিরসরাই, কুমিল্লা বিশ্বরোড, দাউদকান্দি, সোনারগাঁও, কাচঁপুরে গতকাল বিকাল থেকে দীর্ঘ যানজট দেখা গেছে।
এদিকে আজও কমলাপুর রেলস্টেশনে রয়েছে ঘরমুখো মানুষের ভিড়। কোন ট্রেনই সঠিক সময়ে ছেড়ে যাচ্ছে না। ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় গতকাল থেকেই চলে এখনও অব্যাহত।
মহাসড়কগুলোতে যানজটের কারণে বিভিন্ন রুটের বাস ঢাকায় ঢুকতে দেরি হচ্ছে। এমনটি ছিল গতকালও। একই অবস্থা আজ ভোরের প্রথম প্রহর থেকেও।
পথে পথে যানজটে নাকাল হচ্ছেন যাত্রীরা। বিশেষ করে উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিণবঙ্গের গাড়িগুলো যানজটে পড়ে ধুকেধুকে চলছে। কাওড়াকান্দি-শিমুলিয়া, আরিচা, পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষায় ঈদের আনন্দ ম্লান হচ্ছে পথের ক্লান্তিতে।
ঈদের ছুটি বুধবার থেকে শুরু হওয়ায় অনেকে সময়ের স্বল্পতার কারণে গকাল এবং আজ বাড়ির উদ্দেশে রওনা হয়েছেন এবং হচ্ছেন। কিন্তু রাজধানী থেকে বের হতেই তাদের সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বুধবার রাত থেকে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হওয়ায় পরিবার-পরিজন নিয়ে যারা বাড়ি ফিরছেন, তাদের কষ্ট-ক্লান্তির শেষ নেই। ব্যাগ-ব্যাগেজ হাতে এসব মানুষ বৃষ্টি ও কাদাপানিতে নাকাল হয়ে পড়ছেন। ঘরে ফেরার যুদ্ধে ঈদের আনন্দ ম্লান হয়ে আসছে।
বুধবার দুপুরে রাজধানী ঘুরে দেখা গেছে, রাজধানী থেকে বের হওয়ার চারটি মুখে তীব্র যানজট লেগে আছে। একই অবস্থা আজ সকালেও দেখা গেছে। অধিকাংশ পোশাক শ্রমিক বুধবার বিকাল ও আজ সকালে বাড়ি ফিরছেন। তাদের চাপ অনুভূত হচ্ছে সহজেই। টার্মিনালগুলোতে যেতেই যাত্রীদের অনেক ধকল সহ্য করতে হচ্ছে। এরপর দূরপাল্লার গাড়িতে উঠে বসে থাকতে হচ্ছে আবার মহাসড়কে যানজটের কারণে দূরপাল্লার বাস টার্মিনালে না আসায় অনেকেই ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকতে দেখা গেছে।
গাজীপুরের চন্দ্রায় বুধবার থেকে তীব্র যানজট লেগে আছে। গাড়ির চাকা ঘুরছে, আবার ঘুরছে না। গাড়িচালক ও যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বুধবার রাত ৯টায় গাবতলী থেকে ছেড়ে আসা গাড়িগুলো বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা পর্যন্ত চন্দ্রা পার হতে পারেনি। আশুলিয়া-বাইপাইল হয়ে টাঙ্গাইলগামী গাড়িগুলো ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে বাধ্য হচ্ছে। এ ছাড়া গাজীপুর থেকে টাঙ্গাইল হয়ে উত্তরবঙ্গগামী গাড়িগুলো চন্দ্রায় এসে থমকে যাচ্ছে।
যাত্রীদের অভিযোগ, প্রতি বছর যাত্রী ও গাড়ির সংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু রাস্তার কোনো উন্নয়ন নেই। সরু রাস্তা দিয়ে আর কতই বা গাড়ি চলতে পারে। এই অবস্থা থেকে বের হয়ে আসার জন্য রাস্তা প্রশস্ত করার দাবি জানিয়েছেন যাত্রীরা।
এদিকে বৃষ্টি ও কাদাপানিতে ধীরে গাড়ি চালাতে বাধ্য হচ্ছেন যাত্রীরা। ভ্যাপসা গরম এবং যানজটে পড়ে নাস্তানাবুদ হচ্ছেন ঘরমুখো মানুষ।
এদিকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে গাড়ির চাপ বেড়েছে। ফলে প্রচন্ড যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। সাভার, মানিকগঞ্জ, নবীনগরজুড়ে দীর্ঘ যানজট। কাদাপানিতে রাস্তার অবস্থা ভালো না থাকায় গাড়িও ধীর গতিতে চলছে।
অপরদিকে পাটুরিয়া ঘাটে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। আট থেকে ১০ ঘণ্টা ঘাটে বসে পার হচ্ছে যাত্রীদের। বেশির ভাগ ঘরমুখো মানুষ বুধবার রওনা হয়েছে। যে কারণে গাড়ির চাপ বেড়ে গেছে। এ ছাড়া বৃহস্পতিবার ভোর থেকে ছেড়ে যাওয়া গাড়িগুলো আটকে যাচ্ছে ঘাটে গিয়ে। একদিকে গাড়ির চাপ, অন্যদিকে বৈরী আবহাওয়া, সব মিলে পথে পথে কেটে যাচ্ছে ঈদের আগের দিন। এখন যাত্রীদের মনে সংশয় দেখা দিয়েছে, ঠিকমতো বাড়ি পৌঁছানো যাবে কি?