muktijoddhar kantho logo l o a d i n g

জাতীয়

হাত ফোলা নিয়ে এসেছিল, তেমনি হাত ফোলা নিয়ে বাড়ি ফিরল মুক্তামণি

যেমন ডান হাত ফোলা নিয়ে এসেছিল, তেমনি ফোলা হাত নিয়ে বাড়ি ফিরল সাতক্ষীরার মুক্তামণি (১২)। শুক্রবার সকাল ৭টায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল থেকে মুক্তামণিকে নিয়ে তার পরিবার বাড়ির উদ্দেশে রওনা হয়। বাড়িতে পৌঁছায় সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে।

মুক্তামণি সাতক্ষীরার সদর উপজেলার দক্ষিণ কামারপাশা গ্রামের মো. ইব্রাহিম হোসেন ও আসমা খাতুনের সন্তান। হীরামণি নামে মুক্তামণির আধা ঘণ্টার বড় জমজ বোনটি মুক্তামণির মতো রোগাক্রান্ত নয়। সে সুস্থ ঘুরে বেড়াছে, আর মুক্তামণিকে রোগ বয়ে বেড়াতে হচ্ছে।

বাড়ি পৌছার পর মুক্তার বাবা মো. ইব্রাহিম হোসেন মুঠোফোনে জানান, মাংস ফেলে দিয়ে চিকিৎসকরা মুক্তার হাত চিকন করে দিয়েছিল। কিন্তু এখন আবার ফুলে আগের মতো দেহের চেয়ে হাত মোটা হয়ে গেছে।

মুক্তার বাবার সঙ্গে কথা বলার সময়ে মুক্তার সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তিনি মুক্তার সঙ্গে কথা বলিয়ে দেন।

হাতের অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে মুক্তামণি বলে, ‘হাতের অবস্থা আগের মতোই। অপারেশনের পর মাংস ফেলে চিকুন করে দেওয়ার পর জ্বালা-যন্ত্রণা হতো না। কিন্তু প্রথমবার চামড়া লাগানোর পর হাত ফুলে যায়, তারপর থেকে হাতের ভিতরে ব্যথা হয়, যন্ত্রণা করে, চুলকায়।’

মুক্তা জানায়, অপারেশনের আগে হাত একটু নাড়াচাড়া করতে পারলেও এখন অন্যের সহযোগিতা ছাড়া হাত নাড়াতে পারে না। আগে অনুভূতি থাকলেও এখন আর হাতের ওপরি অংশে অনুভূতি নেই।

সে বলে, ‘মা হাতের কোথাও ধরে বলেন, বলো তো হাতের কোথায় ধরেছি, যেখানের কথা বলি, তা হয় না। মা বলেন, না, হয়নি, অন্য জায়গা ধরেছি।’ মুক্তামণি তার সুস্থতার জন্য সকলকে দোয়া করতে বলেছেন।

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইন্সটিটিউটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, ‘মুক্তা বাড়ি যাওয়ার জন্য পাগল হয়ে গেছে। আজ বাড়ি গেছে। একটু ঘুরে আসুক। একমাস পরে আবার আসতে বলেছি।’

মুক্তামণির শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তার টিউমারের অপারেশন হয়ে গেছে। তবে ফোলাটা এখনো কমেনি। আমরা একটা পেশার ব্যান্ডেজ দিয়ে দিয়েছি। ফোলার জন্য ক্রাপ ব্যান্ডেজ বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এটা লিমপেটিক ফেলফরমেশন, এ রকম ফোলা থাকে।’

টিউমার ফেলার জন্য কতবার অস্ত্রোপচার করা হয়েছে জানতে চাইলে তিন বলেন, ‘ঠিক কতবার অস্ত্রোপচার করা হয়েছে, তা মনে পড়ছে না। তবে সাত থেকে আট দফায় অস্ত্রোপচার করা হয়েছে।’

এ ধরনের রোগী পুরোপুরি সুস্থ হয় কি না, জানতে চাইলে এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বলেন, ‘না, না। শতভাগ সুস্থ হবে না। নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করতে হবে।’

সামন্ত লাল সেন জানান, বাড়ি থেকে ঘুরে আসার পর তার শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে আবার পরবর্তী চিকিৎসা শুরু করা হবে।

মুক্তামণির দুই বছর বয়সে রোগের সূত্র এবং সাড়ে নয় বছর বয়সে দেহের চেয়ে হাত মোটা হয়ে যায়। মুক্তামণিকে গত ১১ জুলাই ঢামেকের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে তাকে নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়ায় এটি প্রধানমন্ত্রীর নজরে আসে।

গত ২৫ জুলাই ঢামেকের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইন্সটিটিউটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লালকে খবর দিয়ে ডেকে নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি মুক্তামণির সার্বিক পরিস্থিতি জানেতে চান। সব শুনে প্রধানমন্ত্রী মুক্তামণিকে প্রয়োজনে বিদেশ নেওয়ার নির্দেশনা দেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা পেয়ে ওই দিনই ঢামেকের পক্ষ থেকে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে ই-মেইল করে মুক্তার বিষয়টি জানানো হয়।

২৭ জুলাই প্রায় এক ঘণ্টার ভিডিও কনফারেন্সে সিঙ্গাপুরের চিকিৎসকেরা মুক্তামণিকে দেখেন। তার পরীক্ষা-নিরীক্ষার রিপোর্টগুলোও দেখানো হয়। সব কিছু দেখে তারা পরে আলোচনা করে জানানোর কথা বলেন। এরপর তারা ই-মেইল করে জানিয়েছেন, মুক্তামণির রোগ আরোগ্যযোগ্য বা দেহে অস্ত্রোপচার করার মতো নয়।

৩ আগস্ট ঢামেক পরিচালকের সভাকক্ষে সংবাদ সম্মেলন করে জানানো হয়, ঝুঁকি হলেও সকল প্রকার সতর্কতা অবলম্বন করে মুক্তামণিকে সুস্থ করার জন্য ঢামেকের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হবে। ৫ আগস্ট বায়োপসি করা হয়। ৮ আগস্ট বায়োপসির রিপোর্ট আসে। রিপোর্ট পেয়ে চিকিৎসকরা জানান, মুক্তামণির শরীরে ক্যান্সার ছড়ায়নি। সে বিরল রোগেও আক্রান্ত নয়। মুক্তামণি রক্তনালী টিউমারে আক্রান্ত। এরপর ১২ আগস্ট তার দেহে প্রথম দফায় অস্ত্রোপচার করা হয়।

Tags: