মন্তোষ চক্রবর্ত্তী, অষ্টগ্রাম (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি ।। কিশোরগঞ্জের হাওর উপজেলা ও পাশ^বর্তী এলাকার হাজার হাজার একর বোরো জমির উৎপাদন হুমকির সম্মুখীন। বাড়ছে পানি নদী ভরাট পানির গতিপথ পরিবর্তন আবাদী জমিতে বালি এমনকি বীজতলার বোর চারা পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় বহু কৃষক পরিবারে আহাকার সৃষ্টি হয়েছে। কালনী কুশিয়ারা নদীর পাড়ে মিঠামইন উপজেলার কেওয়ারজুর ইউনিয়নের কাদির খলার কাছে একটি ভাঙ্গা সৃষ্টি ফলে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে জানা গেছে।
এ ব্যাপারে অষ্টগ্রাম উপজেলা পরিষদের একটি গুরুত্বপূর্ণ সভায় আলোচনা হয়েছে। এ জটিল পরিবেশ সৃষ্টিতে হাওর অঞ্চলের কৃষকদের জীবন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এ অঞ্চলের কৃষক সহ একাধিক সূত্রে জানা গেছে কয়েক বছর আগে মিঠামইন উপজেলার কাদিরখলা গ্রামের কাছে কালনী কুশিয়ারা নদীর পাড়ে একটি উঁচুস্থানের মাটি কেটে একজন প্রভাবশালী লোক নিয়ে যায়।
এ স্থানের উপর দিয়ে আস্তে আস্তে পানি প্রবেশ করতে থাকে এবং এই স্থানে ক্রমাগত ভাঙ্গন সৃষ্টিতে একটি খালের রূপান্তরিত হতে থাকে। অপরদিকে কালনী কুশিয়ার নদীতে ভেসে আসা পাহাড়ী ঢলের পানি ও প্রচুর পলিমাটি এ খালে প্রবেশ হতে থাকে। ফলে পানির স্বভাবিক প্রবাহ বন্ধ এবং গতিপথ পরিবর্তন করতে থাকে। ফলে বড় হাওড়, চৌদন্ত করবা, বিল মাসকা, খলাবেংরাইল এবং মিঠামইন উপজেলার কেওয়ারজুর সহ বেশ কয়েকটি মৌজার প্রায় হাজার হাজার একর নীচু জমি এবং বিলা জমিতে পলিমাটি জমতে থাকে। বন্ধ হয়ে পড়ে, বিলমাসকা, বৈঠাখালি নদীর পানি প্রবাহের পথ। একদিকে পলিমাটিতে জমির উচ্চতা বৃদ্ধি অপরদিকে পানি এসে জমিতে আটকা পড়ে যায়।
ফলে বড় হাওড়, নদার, ছোরার পাড়, জোয়াইরা খলা, বেংরাইল, বিলমাসকা, মান্ধার পাড়, ছাইত্তা গাইয়ালা, ঘাগড়া ও কেওয়ারজুরের হাওড় এবং বেরী বিল জোয়াইরা বিল, ফাডা বিল ইত্যাদি বিলের জমিতে উৎপাদন বন্ধ হয়ে পড়েছে এবং ক্রমাগত বন্ধ হচ্ছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বহু কৃষক এ অঞ্চলের বীজতলা নির্মাণ করার পর পানিতে তলিয়ে গেছে। অপরদিকে উৎপাদনি জমি পানি জমাট বেঁধে আটকে পড়েছে। পানি সরে যাওয়ার পথও বন্ধ। বিল গুলিতে যেমনহত ধান তেমনি পাওয়া যেত প্রচুর মাছ। ভরাট হওয়ার ফলে মাছের উৎপাদন ও পাওয়াও বন্ধ হয়ে গেছে। এ বিলগুলিতে আর মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। এ সব জমির উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেলে হাজার হাজার কৃষক পরিবার জীবনে বাঁচার অধিকার হারিয়ে ফেলবে বলে অসংখ্য কৃষকের ভাস্য। হাওড় অঞ্চলের এসব উপজেলায় আবাদি জমির ৮০ ভাগই একমাত্র বোর ফসল উৎপাদন হয়ে থাকে। এবং উৎপাদিত ধানের ২০ ভাগ এ অঞ্চলের খাদ্য চাহিদা পূরণ করে সিংহভাগ ধান দেশের বাজার বন্দরে বিক্রি করে জাতীয় খাদ্য ভান্ডারে জোগান হয়ে থাকে।
এ জমিতে জোতদার কৃষক, মাঝারি কৃষক, প্রান্তিক ও বর্গা চাষিরা উৎপাদন করে জীবন রক্ষা করে এবংএ অঞ্চলের খেটে খাওয়া হাজার হাজার নারী পুরুষ কৃষি মজুরী করে সারা বছরের খাবার সংগ্রহ করে। ফলে এ অঞ্চলের মানুষের জীবন রক্ষার একমাত্র বোর উৎপাদন। এ অবস্থা সৃষ্টির ফলে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলোর মধ্যে আহাকার সৃষ্টি হয়ে পড়েছে। জরুরী এ অবস্থার পরিবর্তন করা না হলে এ অঞ্চলের কৃষকদের জীবনে নেমে আসবে ঘোর অন্ধকার। বাড়ি ঘর ছেড়ে ভাত কাপড়ের সংস্থানের জন্য শহরের বস্তিতে ঠাঁই করা ছাড়া বিকল্প কোন পথ থাকবে না বলে জানা গেছে। অস্টগ্রাম উপজেলা পরিষদের ধনাঢ্য কৃষক মোস্তাক আহমেদ কমল জানান গত বছরের অকাল বন্যায় প্রায় ৪০ একর জমি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে এ বছর এ অবস্থা জরুরী সমাধান না হলে হাওড়ের মানুষ না খেয়ে মরবে। বড় হাওড়ের ২৫ একর জমির মালিক অস্টগ্রামের বিশিষ্ট কৃষক আঃ রউফ জানান এ অবস্থা জরুরী সমাধান প্রয়োজন।
এ ব্যাপারে অষ্টগ্রামের উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মফিজুল ইসলাম জানান, ঘটনাটি আমি শুনেছি এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য লিখিত চিঠি পাঠাব।
এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কিশোরগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ শফিকুল ইসলাম জানান, কাদির খলার দক্ষিণের খালটি নদীর মত হয়ে গেছে এছাড়াও উত্তরে ২টি খালের সৃষ্টি হয়েছে। এবং সৃষ্ট সমস্যা জটিল পানি না কমলে সমাধান সম্ভব নয়। আমি ঘটনাস্থল পরিদর্মন করেছি পানি কমলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করিব।
এ ব্যাপারে হাওরঅঞ্চলবাসী ঢাকার সাধারন সম্পাদক কামরুল হাসান বাবু জানান অপরকল্পিত নগরায়ন, যত্র-তত্র রাস্তা এমনকি যখন-তখন যেখানে সেখানে খাল-বিল ভরাট করে যে পরিমান বাড়ি-ঘর হচ্ছে এবং অপরিকল্পিত সুইচ গেটের কারনেই এমনটি হচ্ছে। এই সমস্যা দ্রুত সমাধান না হলে আরও ভয়াবহ রূপ ধারন করবে।