আইন আদালত ।। নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিধিমালার গেজেট বিষয়ে গণমাধ্যমের ভূমিকার কঠোর সমালোচনা করেছেন আপিল বিভাগ।
আদালত বলেছেন, পত্রিকায় লিখে দিয়েছে, নির্বাহী বিভাগ সব নিয়ে গেছে। আমরা শেষ করে ফেলেছি। অথচ অনুসন্ধান শুরুই হবে না সুপ্রিম কোর্টের পরামর্শ ছাড়া। সুপ্রিম কোর্ট ছাড়া গভর্নমেন্ট কিছুই করতে পারবে না। এভরি স্টেপ সুপ্রিম কোর্ট মাস্ট বি কনসার্ন।
বুধবার ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞার নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এ কথা বলেন।
শুনানির শুরুতেই রাষ্ট্রপতি সম্পর্কে ইতিপূর্বে আপিল বিভাগের দেওয়া পর্যবেক্ষণ প্রত্যাহার চেয়ে আদালতের কাছে আবেদন জানান অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
আদালত অ্যাটর্নি জেনারেলকে বলেন, এটা এক্সপাঞ্জ করা যাবে। আপনি গেজেটের বিধি ২(খ) দেখেন।
এ সময় ব্যারিস্টার এম. আমীর উল ইসলাম বলেন, আমি তো চ্যালেঞ্জ করে রিভিউ করব। আমি সাবমিশন দিয়েছি, সেটা নিষ্পত্তি করেন।
তখন আদালত বলেন, আগে যতবার রুল হয়েছে, সব আপিল বিভাগে সাবমিট করা হয়েছে।
ব্যারিস্টার এম আমীর উল ইসলাম বলেন, রুল তো হয়েছে ১৩৩ এ কর্মবিভাগের জন্য।
আদালত বলেন, একবার রুল হলে তা চেঞ্জ করা যাবে না তা তো না।
ব্যারিস্টার আমীর উল ইসলাম বলেন, আমি তো বিচার বিভাগের লোক। কিন্ত এটা তো কর্ম বিভাগে নিয়ে নেওয়া হয়েছে। আমার সাবমিশন নিষ্পত্তি করেন।
তখন আদালত বলেন, বলা হচ্ছে, আমরা সব দিয়ে দিয়েছি। কোথায় নিয়ে নেওয়া হয়েছে, দেখান আপনি।
এরপর অ্যাটর্নি জেনারেলকে বিধিমালার গেজেট থেকে পড়তে বলেন আদালত। অ্যাটর্নি জেনারেল পড়তে থাকেন।
বিধি ৩ পড়ার সময় আদালত বলেন, সুপ্রিম কোর্টের পরামর্শ গ্রহণ না করিয়া- আগে ছিল না এটা।
বিধিমালার বিভিন্ন বিধি এবং উপবিধি উপস্থাপনের সময় আদালত বলেন, অনুসন্ধান শুরুই হবে না সুপ্রিম কোর্টের পরামর্শ ছাড়া। সুপ্রিম কোর্ট ছাড়া গভর্নমেন্ট কিছুই করতে পারবে না। অথচ পত্রিকায় লিখে দিয়েছে, সব নিয়ে নিয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট ছাড়া কিচ্ছু করতে পারবে না।
অ্যাটর্নি জেনারেল বিধির ২৫(ক) পড়ার সময় আদালত আবার বলেন, অর্থাৎ সুপ্রিম কোর্ট ছাড়া কিছুই হবে না।
অ্যাটর্নি জেনারেল বিধি ২৯ পড়ার সময় আদালত বলেন, জোরে জোরে পড়েন। না পড়ে আন্দাজে লিখে ফেলে। আমরা পাঁচজন বিচারপতি কি এতই বোকা? আমরা কি নবিশ? প্রত্যেকেই আপিল বিভাগের বিচারপতি। অথচ কথা হচ্ছে, আমরা শেষ করে ফেলেছি। এভরি স্টেপ সুপ্রিম কোর্ট মাস্ট বি কনসার্ন। কর্তৃপক্ষ যদি প্রস্তাব দেয়, সুপ্রিম কোর্ট অ্যাপ্রুভ না করলে হবে না। আগে তো রুলস ছিল না। এখন তো পোভাইড দ্য রুলস।
এ পর্যায়ে আদালত ব্যারিস্টার এম আমীর উল ইসলামকে বলেন, মিস্টার ইসলাম রুলস পড়ে শোনালাম। এর বেশি আমরা পারি না। আপনার কিছু বলার আছে?
তখন ব্যারিস্টার আমীর উল ইসলাম বলেন, সুপ্রিম কোর্ট অ্যাপ্রুভ করার পর আমার কী বলার থাকে?
তখন আদালত আবার বলেন, বাইরে বলা হচ্ছে, গেল গেল সব গেল। আমরা আপিল বিভাগের পাঁচজন লোক। সব দিয়ে দিলাম আমরা? এরপর আদালত বিচারক শৃঙ্খলা বিধিমালার গেজেট গ্রহণ করে আদেশ দেন। তবে নিম্ন আদালতের বিচারক শৃঙ্খলা বিধি সংক্রান্ত মাসদার হোসেন মামলা চলমান থাকবে বলে আদেশে বলা হয়।
গত ১১ ডিসেম্বর দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিধিমালার গেজেট প্রকাশ করে সরকার।
বিচারকদের জন্য কখনো কোনো শৃঙ্খলাবিধি ছিল না। ১৯৮৫ সালের সরকারি কর্মচারী শৃঙ্খলাবিধির আওতায় বিচারকদের চাকরি, পদোন্নতি, নিয়োগ ও শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রিত হতো। ১৯৯৯ সালের ২ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ঐতিহাসিক মাসদার হোসেন মামলার রায় দেন। ওই রায়ে সরকারকে ১২ দফা নির্দেশনা দেন।