মাঘের আজ দ্বিতীয় দিন। শীতে বাঘ কাবু হলেও বাংলাদেশের ক্রিকেট টাইগাররা মিরপুরে আজ দাপট দেখিয়েছে। আন্তার্জাতিক ক্রিকেটে নিজের ব্যবধান স্পষ্ট করেছে জিম্বাবুয়ের সঙ্গে। ব্যাটিং কিংবা বোলিং কোনো বিভাগেই সফরকারীদের দাঁড়াতে দেয়নি মাশরাফির দল।
প্রথমে বোলিং করে গ্রায়েম ক্রেমারের দলকে আটকে রাখে ১৭০ রানে। পরবর্তীতে সেই লক্ষ্য ছুঁয়ে ফেলে ২১.৩ ওভার হাতে রেখে। ৮ উইকেটের জয়ে ত্রিদেশীয় সিরিজের শুরুটা দুর্দান্তই করল বাংলাদেশ।
পাশাপাশি নিজেদের সঙ্গে জিম্বাবুয়ের ব্যবধানটাও স্পষ্ট করল টাইগাররা। শেষ আট ম্যাচের আটটিতেই জয় বাংলাদেশের। আজ সাফল্যর মুকুটে যোগ হল আরেকটি পালক।
১৫ মাস পর দলে ফেরা এনামুল হকের উপর চোখ ছিল সবার। লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুতেই এনামুল ভিত গড়ে দেন। দারুণ ড্রাইভে চার মেরে রানের খাতা খোলার পর আরও ৩টি বাউন্ডারি হাঁকান ডানাহতি এ ওপেনার। ১৩ বলে দ্রুতই ১৯ রানে পৌঁছে গিয়েছিলেন। বড় ইনিংসের সম্ভাবনা জাগালেও করতে পারেননি। সিকান্দার রাজার বলে স্লগ সুইপ খেলতে গিয়ে মিড উইকেটে ক্যাচ দেন।
এনামুলের বিদায়ে তিনে আসেন সাকিব। তার উপরও চোখ ছিল সবার। এর আগে দুবার তিনে ব্যাটিং করলেও সর্বোচ্চ রান ছিল ২৯। আজ সেই রানকে ছাড়িয়ে যান সহজাত ব্যাটিংয়ে। সিকান্দার রাজার বলে এলবিডাব্লিউ হয়ে ৩৭ রানে ফেরার আগে ৫টি বাউন্ডারি হাঁকান। দ্বিতীয় উইকেটে তামিম ও সাকিবের জুটি ৭৮ রানের।
সঙ্গী হারালেও দেশসেরা ওপেনার তামিম ছিলেন আপন ছন্দে। উইকেটের চারপাশে শট খেলে ৮৪ রানের নজরকাড়া ইনিংস উপহার দেন তামিম। ইনিংসটি সাজান ৯৩ বলে ১ ছক্কা ও ৮ চারে। তার সাথে ১৪ রানে অপরাজিত থাকেন মুশফিকুর রহিম। দুজনের অবিচ্ছিন্ন ৬৩ রানের জুটিতে সহজেই জয় পায় বাংলাদেশ।
টস জিতে বোলিং করতে নেমে শুরুতেই সফরকারীদের চেপে ধরে বাংলাদেশ। সাকিব আল হাসান প্রথম ওভারে দুই উইকেট নিয়ে জয়ের মঞ্চটা প্রস্তুত করে দেন। শুরুর ধাক্কা আর সামলে নিতে পারেনি জিম্বাবুয়ে।
সাকিব তিনটি এবং রুবেল ও মুস্তাফিজ দুটি করে উইকেট নিয়ে জিম্বাবুয়েকে আটকে রাখে ৪৯ ওভারে ১৭০ রানে। যার মধ্যে ১৮৯ বলেই কোনো রান নিতে পারেনি জিম্বাবুয়ের ব্যাটসম্যানরা।
পরপর দুই বলে দুই উইকেট নিয়ে দ্বিতীয় বাংলাদেশি পেসার হিসেবে ওয়ানডেতে শততম উইকেটের স্বাদ নেন রুবেল হোসেন। বোলিং সাফল্যে এক উইকেট নিয়ে অবদান রাখেন মাশরাফি ও সানজামুল।
ডানহাতি ব্যাটসম্যান বেশি থাকায় সাকিবসহ বাঁহাতি স্পিনার আরেকজন খেলতে পারে তা হয়ত ধারণা পেয়েছিল জিম্বাবুয়ে। তাই টপ তিনে একজন বাঁহাতি ব্যাটসম্যানকে পাঠিয়েছিল তারা। তাদের ধারণামতো সাকিবের সঙ্গী হয়েছিলেন সানজামুল। কিন্তু মাশরাফি ছিলেন এক ধাপ এগিয়ে। নতুন বলে দুই প্রান্ত থেকেই দুজন স্পিনারকে আক্রমণে আনেন অধিনায়ক।
বিজ্ঞাপনের ভাষায় বলতে হয়, ‘দাগ থেকে দারুণ কিছু হলে, দাগই ভালো’। বাংলাদেশের প্রথম সাফল্য অনেকটা এরকমই। সাকিবের ওয়াইড বলে ভারসাম্য হারিয়ে ক্রিজ থেকে বেরিয়ে যান সলোমন মিরে। উইকেটের পিছনে দুর্দান্ত মুশফিক স্ট্যাম্প ভাঙতে দেরি করেননি। এক বল পর সাকিবের হাফ ভলি বলে মিড উইকেটে খেলতে গিয়ে সাব্বিরের হাতে ক্যাচ দেন ক্রেইগ আরভিন।
দুই স্পিনার শুরু থেকেই চাপে রাখছিলেন ব্যাটসম্যানদের। মাশরাফি ষষ্ঠ ওভারে নিজেকে বোলিংয়ে এনে চাপ আরও বাড়িয়ে দেন। অষ্টম ওভারেই নড়াইল এক্সপ্রেস আঘাত করে সফরকারী শিবিরে। অভিজ্ঞ হ্যামিল্টন মাসাকাদজা বড় শট খেলতে গিয়ে এজ হয়ে উইকেটের পিছনে ক্যাচ দেন।
প্রথম দশ ওভারে জিম্বাবুয়ের রান ৩ উইকেটে ৩৫। ১১তম ওভারে আক্রমণের নতুন সংযোজন মুস্তাফিজুর রহমান। ফ্ল্যাট উইকেটে শুরু থেকে তার দেওয়া কাটারগুলো ধরছিল না। কিন্তু সময় দেওয়ার সাথে সাথে মু্স্তাফিজ ফিরে আসেন স্বরূপে। ব্রেন্ডন টেলরকে মায়াবী কাটারে বিভ্রান্ত করে মুস্তাফিজ পান প্রথম সাফল্য।
তাকে ফেরানোর পর আক্রমণ আরও বাড়িয়ে দেন মাশরাফি। চার স্লিপ ও গালিতে ফিল্ডার রেখে মুস্তাফিজকে আরও তেতিয়ে দেন অধিনায়ক। এতে মুস্তাফিজ উইকেট না পেলেও বারবার সুযোগ সৃষ্টি করছিলেন।
একপ্রান্তে জিম্বাবুয়ের হাল ধরে রেখেছিলেন সিকান্দার রাজা। চতুর্থ ও পঞ্চম জুটিতে সিকান্দার রাজা ২১ ও ৩০ রান যোগ করে অবদান রাখছিলেন। তাকে সঙ্গ দেওয়ার মতো ছিলেন না কেউই। ম্যালকম ওয়ালার রুবেলের প্রথম ওভারে ৪ রানে স্লিপে ক্যাচ দিলেও নাসির তা তালুবন্দি করতে পারেননি। পরবর্তীতে ২৬তম ওভারে সানজামুলের হাতে ফিরতি ক্যাচ দেন ১৩ রানে। কিন্তু ইনিংস বড় করতে ব্যর্থ ওয়ালার। সানজামুলের বলে স্লিপে ক্যাচ দেন ডানহাতি এ ব্যাটসম্যান।
সিকান্দার রাজা সেট হয়ে নিজের স্বাভাবিক খেলা খেলে ৯২ বলে তুলে নিয়েছিলেন নবম ফিফটি। কিন্তু বাজে এক সিদ্ধান্তে রান আউট হতে হয় ৫২ রানে। সাকিবের থ্রোতে আবারও মুশফিক ঝলক। সিকান্দার রাজার আউটে ভাঙে পিটার মুর ও তার করা সর্বোচ্চ ৫০ রানের জুটি। এরপর শেষ দিকের ব্যাটসম্যানরা শুধু স্কোরবোর্ড সমৃদ্ধ করেন মাত্র।
দ্বিতীয় স্পেলে ফিরে এসে রুবেল প্রথম ওভারেই বোল্ড করেন পিটার মুরকে। ৩৩ রান করা পিটার মুর বুঝতেই পারেননি রুবেলের ইয়র্কার। পরের বলে বোল্ড টেন্ডাই চাতারা। হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা জাগালেও তৃতীয় বলটি ডট হয়। শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে মুস্তাফিজ মুজারাবানিকে বোল্ড করলে ১৭০ রানেই শেষ জিম্বাবুয়ে।
আট বছর পর ত্রিদেশীয় সিরিজের আয়োজক বাংলাদেশ। ২০১৬ সালের অক্টোরের পর মিরপুরে আজ প্রথমবারের মতো ওয়ানডে খেলল বাংলাদেশ। গত বছর চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে নিউজিল্যান্ডকে হারানোর পর জয় নেই একটিও। আজকের ম্যাচ টাইগারদের ছিল অনেক উপলক্ষ। অসাধারণ পারফরম্যান্সে সব উপলক্ষ রাঙিয়ে রাখল মাশরাফিরা।