মুক্তকলাম ।। বর্তমান সময়ে মাদক এক ভয়ানক মরণাস্ত্রের নাম। যার নির্মম শিকার হচ্ছে সম্ভাবনাময় তরুণেরা। যারা দেশকে অনেক কিছু দিতে সামর্থ রাখে, যারা দেশকে আগামী দিনে নেতৃত্ব দিবে তাদের অধিকাংশই যেন নেশায় বুদ। দেশের মোট জনসংখ্যার একটি বিশাল অংশ জুড়ে রয়েছে তরুণেরা, তাই এটি দেশের অগ্রগতির জন্য একটি বড় বাঁধা। তরুণেরা বিভিন্ন কারণে মাদকের প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে, যার মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য কারণ হচ্ছে মাদকদ্রব্যের সহজলভ্যতা, আইন-শৃংঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যথাযথ নজরদারির অভাব, কৌতূহলবোধ, হতাশাবোধ ইত্যাদি। মাদকের বিস্তার শুধুমাত্র শহরা লেই সীমাবদ্ধ নয়, গ্রামা লেও এর শিকড় বিস্তৃত। মাদক ব্যবসাকে কেন্দ্র করে সারা দেশব্যাপী গড়ে উঠেছে বিশাল সিন্ডিকেট, মাদক ব্যবসায়ীদের আগ্রাসন ক্রমেই অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠছে। অর্থের বিনিময়ে তারা প্রতিটি ধাপে ধাপে তাদের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে সমর্থ হচ্ছে। শোনা যায়, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু অসাধু ব্যক্তিও এর সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত। মাদকাসক্ত ব্যক্তি নিজে যেমনি নিঃশেষ হচ্ছে, তেমনি এর প্রভাব পড়ছে পরিবার, সমাজ তথা দেশের উপর। একজন মাদকাসক্ত ব্যক্তি একটি পরিবারের জন্য যে কী দুঃসহ যন্ত্রণার কারণ, তা ভোক্তভোগী পরিবার মাত্রই জানে। মাদকাসক্ত ব্যক্তির আর্থিক অনটনের সাথে ঘটে নৈতিক মূল্যবোধের স্খলন। যার ফলে মাদকাসক্ত ব্যক্তিটি জড়িয়ে পড়ে নানা অনৈতিক কর্মকান্ডে। ফলশ্রুতিতে অবনতি ঘটে সামগ্রিক আইন শৃংঙ্খলা পরিস্থিতির। জাতির প্রত্যাশার নতুন প্রজন্মকে সুস্থ্য মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে মাদকের বিস্তার রোধ ও মাদক ব্যবসায়ীদের প্রতিহত করা এখন সময়ের দাবী। মাদকের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ শুধু কথার মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে বাস্তবে এর প্রয়োগ ঘটাতে হবে। মাদকের বিরুদ্ধে সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি মাদক সেবনের ফলে সৃষ্ট শারীরিক সমস্যাগুলো সম্পর্কেও মানুষকে বেশী করে জানাতে হবে। মাদক ও মাদক ব্যবসায়ীদের কে সামাজিকভাবে বয়কট করতে হবে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকেও কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে এবং গড়ে তুলতে হবে সামাজিক প্রতিরোধ। এক্ষেত্রে গণমাধ্যমের দায়িত্বশীল ভূমিকাও অত্যন্ত জরুরী। সর্বোপরি মাদকমুক্ত সমাজ গড়ার জন্য প্রয়োজন রাজনৈতিক সদিচ্ছা।
লেখকঃ প্রমিত বণিক, চিকিৎসা প্রযুক্তিবিদ, ঢাকা।