muktijoddhar kantho logo l o a d i n g

জাতীয়

দুর্নীতি করতে নয়, জনগণের ভাগ্য গড়তেই রাজনীতি করি

ডেস্ক রিপোর্ট ।। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দুর্নীতি করতে নয়, জনগণের ভাগ্য গড়তেই আমরা রাজনীতি করি। দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি।

মঙ্গলবার রাতে জাতীয় সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনিত ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

২৩২ জন সংসদ সদস্যের ৬৪ ঘণ্টার আলোচনার মাধ্যমে শেষ হলো রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর সাধারণ আলোচনা। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে শেষ স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ধন্যবাদ প্রস্তাবটি কণ্ঠভোটে দিলে তা সর্বসম্মতিক্রমে পাস হয়।

সংসদে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগামী মার্চে বাংলাদেশ আরো এক ধাপ এগিয়ে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পাচ্ছে। বাঙালি জাতি বীরের জাতি, আমরা যুদ্ধ করে দেশকে স্বাধীন করেছি। তাই আমরা নিম্ন বা মধ্যম নয়, দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলবই।

তিনি আরো বলেন, টানা দুই মেয়াদে ধারাবাহিকভাবে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় থাকার সুফল পাচ্ছে দেশের জনগণ। আমরা রাজনীতি করি জনগণের কল্যাণে ও তাদের উন্নয়নের জন্য। জাতির পিতার আদর্শ অনুসরণ করেই রাজনীতি করি। একটাই লক্ষ্য দেশের জনগণের আর্থ-সামাজিক মুক্তি দেওয়া।

শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে স্বাধীনতার ৫ বছরের মধ্যেই বাংলাদেশ পৃথিবীর বুকে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হতে পারত। ইচ্ছা থাকলে যে একটি দেশের উন্নয়ন করা যায়, সেটা আমরা প্রমাণ করেছি। বাংলাদেশ হবে ডিজিটাল বাংলাদেশ- এটা ঘোষণা দিয়েছিলাম। এটা আমরা করেছি। উন্নয়ন সূচকে বিশ্বের পাঁচটি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ একটি। ক্রয়ক্ষমতায় দিক থেকে সারা বিশ্বে ৩২তম স্থানে রয়েছি।

তিনি আরো বলেন, সরকারের গৃহীত পরিকল্পনার কারণেই প্রবৃদ্ধি ৭ ভাগের উপরে উন্নীত করতে সক্ষম হয়েছি। আমাদের মাথাপিছু আয় বিএনপি আমলে ছিল ৫৪৩ মার্কিন ডলার। আজকে ১ হাজার ৬১০ ডলারে উন্নীত হয়েছে। দারিদ্র্যের হার ২২ ভাগে নেমে এসেছে। এই হার ১৪-১৫ এর মধ্যে যাতে নামতে পারে সেই উদ্যোগ নিয়েছি। মানুষের জীবনমান উন্নত হয়েছে। মূল্যস্ফীতি ডাবল ডিজিট থেকে ৫ ভাগে নামিয়ে এনেছি। অর্থনীতি যথেষ্ট শক্তিশালী। রপ্তানি আয় ৩৪ দশমিক ৮৫ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করতে সক্ষম হয়েছি। রিজার্ভ এখন ৩৩ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি।

‘বিদ্যুতের জন্য দেশে হাহাকার ছিল। বিএনপির আমলে দিনে ৫/৬ ঘণ্টা লোডশেডিং ছিল নিত্যদিনের ব্যাপার। বর্তমান সরকার ১৬ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছে। গ্যাসের সমস্যা সমাধানে এলএমজি আমদানি করার উদ্যোগ নিয়েছি। যোগাযোগ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন করেছি। মেট্রোরেল নির্মাণ করছি,’ বলেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ছে। যার একটি গাড়ি ব্যবহারের ক্ষমতা ছিল না, তারা এখন দুইটা কিনছে। সবাই আইন মানলে যানজট অনেক কমে যেত। পদ্মা সেতু নির্মাণ কাজ এগিয়ে যাচ্ছে। বিশ্বব্যাংক দুর্নীতির অভিযোগ এনেছিল। কিন্তু আমরা প্রমাণ করেছি ও অগ্নিপরীক্ষা দিয়েছি যে, দুর্নীতি করতে নয়, জনগণের ভাগ্য গড়তে আমরা রাজনীতি করি।

তিনি বলেন, আমরা সারা দেশে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনি গড়ে তুলেছি। ৪৫ লাখ মানুষকে বয়স্ক ভাতা দিচ্ছি। অবহেলিত জনগোষ্ঠী হিজড়া ও বেদেদের স্বীকৃতি দিচ্ছি। ভাতা ও প্রশিক্ষণের পাশাপাশি ঘর-বাড়ি বানিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছি। বিএনপির আমলের ১ লাখ ১০ হাজার টাকার মোবাইল এখন দেশের মানুষের হাতে হাতে। ১৬ কোটি জনগণের মধ্যে ১৩ কোটি সিম ব্যবহার হচ্ছে। প্রায় ৮ কোটি মানুষ এখন ইন্টারনেট ব্যবহার করছে। আমরা এখন মহাকাশে চলে যাচ্ছি। এপ্রিল মাসে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করা হবে। বাংলাদেশ এখন বিশ্বব্যাপী বিরাজমান।

তিনি দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, এক ইঞ্চি জায়গাও ফেলে রাখবেন না। সবাই এটা করলে বাংলাদেশ আর কখনো পিছিয়ে পড়বে না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা শান্তি চাই, অশান্তি চাই না। কিন্তু কেউ আমাদের আক্রমণ করলে তা মোকাবিলা করতে পারি, সেজন্য সশস্ত্র বাহিনীকে ত্রিমাত্রিকভাবে গড়ে তুলেছি। প্রতিবেশীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক ও সমমর্যাদা নিয়ে চলতে চাই। জিয়া-এরশাদ-খালেদা জিয়া কেউই স্থল সীমানার সমাধান করতে পারেনি, আমরাই করেছি। উৎসবমুখর পরিবেশে ছিটমহল বিনিময় করে বিশ্বে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছি।

রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের দেশে আশ্রয় দিয়েছি। যতদিন তারা নিজ মাটিতে ফিরে না যায় ততদিন যাতে একটু ভালোভাবে থাকে সেই ব্যবস্থা করেছি। ১০ লাখ ৭৮ হাজার রোহিঙ্গাদের আইডি কার্ড করে দিয়েছি, এতে আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশ প্রশংসিত হচ্ছে। আমরা মানবিক কারণে আশ্রয় দিয়েছি। কিন্তু তাদের সঙ্গে যে আচরণ মিয়ানমার করেছে তা গ্রহণযোগ্য নয়।

বিনিয়োগ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিভিন্ন দেশ থেকে বাংলাদেশে বিনিয়োগ আসছে। বিনিয়োগের কোনো অভাব নেই। বিনিয়োগ যাতে দ্রুত হয়, সেজন্য ওয়ান স্টপ সেন্টার চালু করছি। কৃষি জমি যাতে নষ্ট না হয় সেজন্য ১০০টি শিল্পাঞ্চল গড়ে তুলছি।

Tags: