পাপন সরকার শুভ্র, রাজশাহী ।। “নির্মল বায়ুর শহরে দূষণ ছড়াচ্ছে ড্রেনের বর্জ্য” রাজশাহী নগরে নালার (ড্রেন) কাদা তুলে রাখা হচ্ছে রাস্তায়। সেখানে শুকিয়ে তারপর নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ভাগাড়ে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই প্রক্রিয়ায় বর্জ্য সরানো মানবদেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। পৃথিবীর অন্যান্য শহরে নালার বর্জ্য সরাসরি গাড়িতে তুলে নিয়ে ভাগাড়ে ফেলা হয়। অথচ বায়ুদূষণ কমানোয় রাজশাহী বিশ্বের সেরা শহর হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।
তবে সিটি করপোরেশন বলছে, বড় রাস্তার ধারের নালা থেকে সরাসরি কাদা তোলা হচ্ছে। ছোট রাস্তার ধারের নালা থেকে সরাসরি কাজটা করতে পারছে না তারা। কিন্তু শহর ঘুরে দেখা গেছে, সব রাস্তার ধারেই নর্দমা থেকে একই কায়দায় কাদা তোলা হচ্ছে। রেখে দেওয়া হচ্ছে শুকানোর জন্য।
রাজশাহী সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, ৭ বছর আগে ‘মাঝারি শহর সমন্বিত বন্যা প্রতিরোধ প্রকল্প ফেজ-২’-এর আওতায় ড্রেন পরিষ্কার করা হয়। এবার ৩ কোটি ৩৮ লাখ টাকা ব্যয়ে এই কাজ করা হচ্ছে। ৫৬টি গুচ্ছে (গ্রুপে) কাজটি হচ্ছে। এর মধ্যে গত ১০ মার্চ ৩০টি গুচ্ছের কাজের জন্য কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে। কাজ চলছে ২৫টি গুচ্ছের। এ মাসের শেষের দিকে চলমান কাজ শেষ হওয়ার কথা। তারপর বাকি গুচ্ছের কার্যাদেশ দেওয়া হবে। সিটি করপোরেশনের থোক বরাদ্দের টাকা দিয়ে ধীরে ধীরে নগরের ৩০টি ওয়ার্ডেই এভাবে ড্রেন পরিষ্কার করা হচ্ছে।
নগরের কল্পনা হলের মোড় থেকে শিরোইল বাস টার্মিনাল পর্যন্ত পুরো এলাকায় সড়কের পাশে কাদা তুলে রাখা হয়েছে। শিরোইল বাস টার্মিনালের সামনেও একইভাবে কাদা তুলে রাস্তার ওপর শুকানোর জন্য রেখে দেওয়া হয়েছে। নগরের গণকপাড়া মোড়েও চার লেনের রাস্তার এক লেনজুড়ে কাদা তুলে রাখা হয়েছে। সারা রাস্তায় যাতে ছড়িয়ে না পড়ে, সে জন্য বালুর বস্তা দিয়ে বেড়া দিয়ে রাখা হয়েছে। এতে মানুষের চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। সেই সঙ্গে এগুলো শুকিয়ে বাতাসে মিশছে। এগুলো নিঃশ্বাসের সঙ্গে মানুষের শরীরে প্রবেশ করছে, উড়ে বাড়িঘরে যাচ্ছে। খাবারদাবারে মিশছে। ১০-১৫ দিন রাখার পর এই কাদা শুকাচ্ছে।
নির্মল বাতাসের জন্য রাজশাহী বিশ্বের সেরা শহর হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। এই শহরের মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষা, নির্বিঘ্নে চলাচল ও সৌন্দর্য সুরক্ষার জন্য ড্রেনের বর্জ্য অপসারণ সরাসরি কাভার্ড ট্রাকের মাধ্যমে করা উচিত।
গত বছরের ১৭ জুন দ্য গার্ডিয়ান পত্রিকার এক প্রতিবেদনে বায়ুদূষণ কমানোয় রাজশাহীকে বিশ্বের সেরা শহর হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়। এ নিয়ে পরের দিন ১৮ জুন ‘বায়ুদূষণ কমানোয় রাজশাহী বিশ্বসেরা’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও উদ্ভিদবিজ্ঞানী এম মঞ্জুর হোসেন বলেন, ড্রেনের পানিতে হাসপাতাল ও ক্লিনিকের বর্জ্য ফেলা হয়, যা পুড়িয়ে ফেলার কথা। সেই সঙ্গে মনুষ্য বর্জ্য গিয়েও মিশছে। এতে ভয়ঙ্কর সব ব্যাকটেরিয়া থাকে, যা ডায়রিয়া, আমাশয়, কৃমিসহ পেটের পীড়ার যাবতীয় জীবাণু বহন করে। তিনি আরও বলেন, যেভাবে এই বর্জ্য শুকিয়ে তারপর সরানো হচ্ছে, তাতে নগরবাসীর স্বাস্থ্য মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। ট্রাকে পলিথিন ব্যবহার করে এই বর্জ্য ভাগাড়ে নিয়ে যাওয়া যেতে পারে বলে পরামর্শ দেন তিনি।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজের মাইক্রো বায়োলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ফয়সাল আলম বলেন, বর্জ্য সরাসরি অপসারণ করা উচিত। এসব বর্জ্য শুকিয়ে ধুলা হয়ে বাতাসে মিশছে। এতে এমন এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া রয়েছে, যা বাচ্চাদের নিউমোনিয়াসহ নানা ধরনের সমস্যা হতে পারে।
রাজশাহী সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. আশরাফুল হক বলেন, বড় রাস্তার ধারের ড্রেনের বর্জ্য তাঁরা তাৎক্ষণিকভাবে এক্সকাভেটর লাগিয়ে অপসারণ করছেন। যেখানে এক্সকাভেটর যাচ্ছে না, সেখানেই এভাবে তুলে রাখা ছাড়া উপায় নেই। বড় রাস্তার ধারেও একইভাবে কাদা ফেলে রাখার ব্যাপারে তাঁর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, হতে পারে। তবে তাঁরা পর্যায়ক্রমে উন্নত প্রক্রিয়ায় যাওয়ার চেষ্টা করছেন।