ইটনা (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি ।। কিশোরগঞ্জ জেলার হাওড় উপজেলা ইটনায় ২০১৭ আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদযাপন উপলক্ষে জয়িতা অন্বেষণে বাংলাদেশ শীর্ষক কার্যক্রমের আওতায় নির্বাচিত পাচঁ জয়িতা কে কোন বাঁধাই দমিয়ে রাখতে পারেনি। তারা সকলেই স্ব স্ব মহিমায় উজ্জ্বল। উপরের ছবিতে বাদিক দিক থেকে…
প্রথম ছবিতে কামনু আক্তারঃ সদর ইউনিয়নের বড়হাটি গ্রামের আঃ সাত্তার মিয়ার স্ত্রী কামনু আক্তার প্রথমে তার দ্বিতীয় সন্তান কে মেশিন মেকানিক কাজে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করান। পরে তিনি তার সন্তান কে ইটনা বাজারে মেশিন মেকানিক কাজ করা জন্য একটি দোকান খুলে দেন। ছেলে মেকানিকের কাজ করে ভাল আয় রোজগার শুরু করেন। পরে তিনি নিজে ১৫০০ টি হাঁস কিনে হাঁসের খামার স্থাপন করেন। খামারটি নিজে দেখাশুনার পাশাপাশি দুজন কর্মচারী নিয়োগ করেন। বর্তমানে খামারটিতে খরচ বাদে মাসিক ২০০০০ (বিশ হাজার) টাকা লাভ হচ্ছে। তার অদম্য আগ্রহের কারনে দুটি ব্যবসা চালিয়ে সে নিজে এখন এলাকায় উদ্যমী ও আত্ননির্ভরশীল নারী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত।
ছবিতে দ্বিতীয় শামছুন্নাহার বেগমঃ সদরের খন্দকার হাটি গ্রামের মৃত মইন উদ্দিন ঠাকুরের মেয়ে সাহসী ও আত্নপ্রত্যয়ী নারী হয়ে ইটনা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাইমারী, মহেশ চন্দ্র মডেল শিক্ষা নিকেতন থেকে মাধ্যমিক, ঢাকা খিলগাঁও মডেল কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক, ঢাকা ইডেন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে বি.এ (সম্মান) এম.এ (দর্শন) সম্পন্ন করে বর্তমানে তিনি ঢাকা গাজিপুর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে সহকারী রেজিষ্টার হিসেবে কর্মরত আছেন। তার স্বামী ও একজন সরকারী কর্মকর্তা। তার পরিবারে দুটি মেয়ে সন্তান নিয়ে অত্যন্ত সুখী জীবন যাপন করছেন। এলাকায় তিনি সুশিক্ষিত চাকুরীক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনকারী নারী হিসেবে পরিচিত।
ছবিতে তৃতীয় শওকত আরা খাতুনঃ সদরের খন্দকার হাটি গ্রামের মৃত মইন উদ্দিন ঠাকুরের স্ত্রী শওকত আরা খাতুন নিজে কম লেখা পড়া জানলেও অনেক সংগ্রাম ও ত্যাগ স্বীকার করে তার ৪ ছেলে ও ৩ মেয়ে কে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করে মানুষ হিসেবে গড়ে তুলেছেন।১ম সন্তান লায়লা বেগম অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত লেখা পড়া করার বিবাহ হয়ে যায়। বর্তমানে সে আমেরিকা প্রবাসী। ২য় সন্তান সালাম উদ্দিন ঠাকুর এম.এ পর্যন্ত লেখাপড়া করে উপজেলার এলংজুড়ি ইউনিয়নের কাকটেংগুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মরত অাছেন। ৩য় সন্তান জিয়া উদ্দিন ঠাকুর এম.এ পর্যন্ত লেখাপড়া করে ঢাকা তেজগাঁও বেসরকারী প্রতিষ্ঠান এইচ আর গ্রুপে সিনিয়র ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত আছেন। ৪র্থ সন্তান খাইরুল ইসলাম ঠাকুর এম.এ পর্যন্ত লেখাপড়া করে উপজেলার এলংজুড়ি ইউনিয়নের ছিলনী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ৫ম সন্তান শামছুন্নাহার বেগম এম.এ পর্যন্ত লেখাপড়া করে ঢাকা গাজিপুর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে সেকশান অফিসার (সম্মান) পদে কর্মরত। ৬ষ্ঠ সন্তান মোছাঃ তাসলিমা আক্তার এইচ এস সি পর্যন্ত লেখাপড়া করে ময়মনসিংহ বিভাগের সদরের ফুলবাড়িয়া উপজেলার পলাশতলী বাজার সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত। ৭ম সন্তান জহির রায়হান ঠাকুর এম.এ পর্যন্ত লেখাপড়া করে বেসরকারী প্রতিষ্ঠান ঢাকা উত্তরায় এইচ আর গ্রুপে সহকারী ম্যানেজার পদে কর্মরত আছেন। এ সাফল্যের কারনে শওকত আরা খাতুন এলাকায় সফল নারী জননী হিসেবে পরিচিত।
ছবিতে ৪র্থ পপি রাণী সেনঃ তিনি উপজেলার ইটনা সদর ইউনিয়নের বেতাগা গ্রামের হিমাংশু সেনের মেয়ে। দৃঢ় মনোবলের অধিকারী পপি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার পর থেকে স্বামী এবং শশুর বাড়ির লোকজন দ্বারা প্রায়ই শারীরিক, মানসিক অত্যাচার ও নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছে। এর মধ্যে তার একটি ছেলে সন্তানের জন্ম হয়। স্বামী তাকে প্রায়ই বাবার বাড়ি থেকে টাকা পয়সা এনে দেওয়ার জন্য চাপ দেয় এবং মারধর করে। এক পর্যায়ে জ্বালাতন সহ্য করতে না পেরে নিজের শরিরের কাপড়ে আগুন জালিয়ে পুড়ে মরার চেষ্টা করে। পরে এলাকা বাসী উদ্ধার করে বাবার বাড়ি পাঠিয়ে দেয়। এক বছর যাবত ছেলে সন্তান নিয়ে বাবার বাড়িতে শাকঁ সব্জি চাষ করে কোন রকমে একপেটা-আধাপেটা হয়ে দিনতি পার করে বিভিষিকা ময় সৃতি ভুলার চেষ্টা করছে।
ছবিতে ৫ম মোছাঃ রুপালী আক্তারঃ উপজেলার এলংজুড়ি ইউনিয়নের ছিলনী গ্রামের তাজ মিয়ার স্ত্রী রুপালী আত্নপ্রত্যয়ী নারী হয়ে সমাজের কু-সংস্বার দুর করার জন্য অগ্রণী ভুমিকা রাখেন। সমাজে অন্যায় অত্যাচার, জনগনের দুঃখ দুর্দশা লাঘবে আপ্রান চেষ্টা করে যান। বিভিন্ন এনজিওর সেচ্ছাসেবী হিসেবে দায়িত্ব পালন করে এলাকার বাল্য বিবাহ প্রতিরোধ, স্বাস্থ্য সম্মত স্যানিটেশন ব্যবহার, শিশু পাচার রোধ, যৌতুক নিরোধ কার্যক্রমের সক্রিয় অংশ গ্রহণ করেন। উপরোল্লিখিত কারনে জনমত প্রকাশ পেয়ে বর্তমানে তিনি এলংজুড়ি ইউনিয়ের সংরক্ষিত মহিলা সদস্যা নির্বাচিত হয়েছেন। জনগনের সেবায় নিজেকে বিলিয়ে দিয়ে তিনি এখন এলাকায় সফল নারী নেত্রী হিসেবে পরিচিত মুখ।