সফলতার গল্প ।। জীবনে আকাঙ্ক্ষিত সফলতা কাউকে এমনি করেই আগন্তকের মতো এসে ধরা দেয় নি বা অধরা স্বপ্নকে বাস্তবে এসে রূপ দেয় নি। নারী বিপ্লবীরা যুগে যুগে মানব সভ্যতাকে আলোকিত করেছেন। বিপন্ন মানবতার সেবায়ও নারীর অবদান কম নয়। প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার, বেগম রোকেয়া, সুলতানা কামালরা হয়তো আর জেগে উঠবে না, কিন্তু তাঁদের আদর্শ, চেতনাকে ধারণ করে আজো চলছে অনেক নারীর অন্তহীন পথচলা। সেই সময় নারীকে জাগিয়ে তোলার মন্ত্র আর আজকের দিনে নারীকে জাগিয়ে তোলার মন্ত্রটার মাঝে রয়েছে বেশ পার্থক্য। বর্তমান সময়ে নারীর ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে প্রয়োজন নারীর অর্থনৈতিক মুক্তি। নারীর অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য এখনো সংগ্রামের পথটা অনেক দীর্ঘ। পুরুষের মতো আপন ইচ্ছায় নারীর পদচারণা আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় খুব একটা চোখে পড়ে না। যে কজন নারীর আপন যোগ্যতায় অধিষ্ঠিত হয়েছেন, তাদের ইতিহাস আলোচনা করলে দেখা যায়, পেছনে কারো না কারো এক দৃঢ় পৃষ্ঠপোষকতা বা অনুপ্রেরণা ছিল। কারো ক্ষেত্রে সেটি মা বা বাবা, কারো ক্ষেত্রে স্বামী বা অন্য কোন স্বজন। তবে অনুপ্রেরণাটা অনস্বীকার্য।
যুগ পাল্টেছে। ধ্যাণ-ধারণার ক্ষেত্রেও এসেছে আমুল পরিবর্তন। ফ্যাশনেও এসেছে ব্যাপক সৌন্দর্য সচেতনতা। আর মানুষের ফ্যাশন আর সৌখিনতার বিষয়টিকে মাথায় রেখে শপিং গ্লোরিস্ট নিয়ে নারী উদ্যোক্তা হবার স্বপ্নে বিভোর প্রেমা নবী। শপিং গ্লোরিস্টের প্রোডাক্টের মূল আকর্ষণ হল কাস্টোমাইজড প্রোডাক্ট। এইখানে একজন কাস্টমার তাঁর নাম লিখা ও পছন্দমত লোগোসহ পাসপোর্ট কভার, মানিব্যাগ, ট্যাব ও ল্যাপটপ কভার, ট্রাভেল পাউছ, মেকাপ পাউছ, বাচ্চাদের ব্যাগ, ল্যাপটপ ব্যাগ এবং রুম সাইন অর্ডার করতে পারেন। তাছাড়া থাইল্যান্ডের লেডিস হ্যান্ডব্যাগ, মেয়েদের কুর্তি, থাই স্টাইলের পায়জামা ইত্যাদিও রয়েছে শপিং গ্লোরিস্টের বহুবিধ পণ্যের তালিকায়।
অভিনব এই মার্কেটিং চিন্তাটি আসে স্বামী-স্ত্রীর থাইল্যান্ডে ভ্রমণের মাধ্যমে। আর উদ্যোক্তা হবার স্বপ্নটির সূচনা হয় পরিচিত আত্মীয়দের ছোট ছোট গিফট দেওয়ার মাধ্যমে। স্বজন ও পরিচিতজনদের কাছে পন্য পৌঁছে দেবার মাধ্যমে উদ্যোগটির শুভ সূচনা হলেও, পরে শপিং গ্লোরিস্ট নামে একটি ফেসবুক পেজের মাধ্যমে এর ব্যাপক প্রসার পায়। যার আনুষ্ঠানিক শুভ সূচনা ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে। বাবা আর স্বামীর সার্বিক সহযোগিতায় উদ্যোক্তা হবার স্বপ্নটি ধীরে ধীরে আলোর মুখ দেখছে। বিশ্বাস করেন, সততা, শুভচিন্তার সাথে পরিশ্রমযুক্ত হলে সফলতা আসবেই। বহুজাতিক কোম্পানির মার্কেট ডেভেলপমেন্ট স্পেশালিস্ট স্বামী রাশেদুন নবী’র অনুপ্রেরণায় নিজেকে একজন উদ্যোক্তা হবার স্বপ্নে বিভোর প্রেমা নবী স্কুল এবং কলেজ পর্ব শেষ করেছেন ভিকারুন্নেসা নুন স্কুল এন্ড কলেজ থেকে। আর স্নাতকোত্তর শেষ করেছেন ইনডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি থেকে।
স্বল্পমূল্যে ভালো প্রোডাক্ট পৌঁছে দেয়ার মূল উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে উদ্যোগটির মাধ্যমে নিজেকে একজন আত্মপ্রত্যয়ী মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার পাশাপাশি স্বপ্ন দেখেন নারী উন্নয়নে অবদান রাখতে। অবহেলিত নারী ও তরুন নারীদের কর্মসংস্থানের অভাব দূরীকরণের স্বপ্নকে লালন করে এগিয়ে যেতে চান এই নবীন উদ্যোক্তা।
লেখক : সুমিত বণিক
উন্নয়নকর্মী ও ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক।